বাফুফের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে শাস্তির মুখে কৃষ্ণা

প্রকাশ | ০১ জুন ২০২৪, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
নারী ফুটবলার কৃষ্ণা রানী সরকার
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) বিরুদ্ধে অভিযোগ আনার কারণে শাস্তির মুখে পড়তে যাচ্ছেন জাতীয় দলের নারী ফুটবলার কৃষ্ণা রানী সরকার। ২০২২ সাল থেকে ইনজুরিতে ভুগছেন এই ফরোয়ার্ড। সদ্য সমাপ্ত লিগে কিছু ম্যাচ খেললেও ইনজুরি পুরোপুরি না সারায় চাইনিজ তাইপের বিপক্ষে দুই ম্যাচের জন্য জাতীয় দলে ডাক পাননি কৃষ্ণা। বৃহস্পতিবার রাতে তিনি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে বাফুফের বিরুদ্ধে উন্নত চিকিৎসা না করানোর অভিযোগ এনেছেন। বিষয়টি নিয়ে বাফুফের শীর্ষ মহল হতভম্ব। সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন তুষার বলেন, 'কৃষ্ণা যে স্ট্যাটাস দিয়েছেন, সেখানে মিথ্যা অভিযোগ তোলা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার বিকালেও আমি কৃষ্ণার সঙ্গে কথা বলেছি। তার চিকিৎসার খোঁজখবর নিয়েছি। উন্নত চিকিৎসা করতে কী কী দরকার, জানতে চেয়েছি। তাকে বলেছি বিদেশে চিকিৎসা করতে যা প্রয়োজন তার একটি চাহিদাপত্র দিতে। আমি প্রটোকল বিভাগেও নির্দেশনা দিয়েছি কৃষ্ণা চাইলে ভিসা প্রসেসিং করতে।' 'তারপরও এ ধরনের অভিযোগ এনে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে কৃষ্ণা শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। তিনি কেন এ কাজ করেছেন, তার ব্যাখ্যা চেয়ে দ্রম্নতই শোকজ করা হবে। তারপর ব্যবস্থা। বাফুফে সবসময় ফুটবলারদের স্বার্থ রক্ষায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। জাতীয় দলের ক্যাম্পে থাকা অবস্থায় ছেলে কিংবা মেয়ে যেকোনো ফুটবলার ইনজুরিতে পড়লে, অসুস্থ হলে আমরা চিকিৎসার ব্যবস্থা করে থাকি।' 'ইনজুরিতে পড়ার পর স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা করানো বাবদ কৃষ্ণাকেও টাকা দেওয়া হয়েছে। চোখের ডাক্তার দেখানোর জন্য কৃষ্ণাকে টাকা দেওয়া হয়েছে। কানন আক্তার, মারিয়া মান্দা, শামসুন্নাহার জুনিয়রকেও চিকিৎসা বাবদ টাকা দেওয়া হয়েছে। এক কথায় ফুটবলাররা যে যখনই সমস্যায় পড়েছেন, বাফুফে তাদের সহযোগিতা করেছে। তাই এ ধরনের মিথ্যা অভিযোগ এনে বাফুফেকে কেন হেয় করা হয়েছে, এর কারণ জানতে চাওয়া হবে কৃষ্ণার কাছে'-বলেন বাফুফের সাধারণ সম্পাদক। বৃহস্পতিবার কৃষ্ণা ফেসবুক পোস্টে লিখেন- 'প্রায় দেড় বছর হয়ে গেছে। পা আগের থেকে ভালো, কিন্তু এখনো পুরোপুরি ঠিক হয়ে উঠতে পারিনি। প্র্যাকটিস করলেই ব্যথা হয়। বাফুফের ফিজিও দিয়ে আমার চিকিৎসা চলছে। সবাই জানে ইনজুরিটা অনেক জটিল। ব্যথা নিয়েই প্র্যাকটিস করছি। দেশে অনেক ডাক্তার দেখিয়েছি কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।' '২০২৩ সালে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের ফিজিও দেবাশীষ চৌধুরী স্যারকে দেখিয়েছিলাম। উনি প্রায় আমাকে অনেকদিন দেখেন, যখন ব্যথা কমছিল না। স্যার বলেছিলেন, অস্ট্রেলিয়া-ভারত গিয়ে চিকিৎসা করাতে। কিন্তু যখন আমি বাফুফেকে জানাই, তারা বলেছিল আর কিছুদিন দেশে ডাক্তার দেখাতে। আমি অনেকদিন তাদের বলেছি ভারতে যাওয়ার কথা। কিন্তু উনারা আমার কথায় কোনো গুরুত্ব দেননি। আজ পর্যন্ত ব্যথা নিয়ে প্র্যাকটিস করছি।'  '২০১৩ সালে অনূর্ধ্ব-১৪ দলে সুযোগ পাই এবং ২০১৪ সালে সিনিয়র জাতীয় দলে সুযোগ পাই, সেখান থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত কখনো কোনো দলের বাইরে থাকতে হয়নি। প্রায় ১০ বছর একটানা জাতীয় দলের হয়ে খেলেছি। টুকটাক ইনজুরিতে পড়েছি। কিন্তু হঠাৎ করে এত বড় ইনজুরিতে পড়ব, কখনো ভাবিনি। অনেকদিন রেস্টে থাকার পর আর ভালো লাগছিল না এবং মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছিলাম। তাই ব্যথা নিয়ে প্র্যাকটিস চালিয়ে যাচ্ছি।'  'চীনে যখন এশিয়ান গেমস খেলতে যাই, তিনটা ম্যাচ বেঞ্চে বসে কাটিয়েছি। ব্যাক টু ব্যাক দুটা টুর্নামেন্ট থেকে বাদ পড়ে গেলাম। একজন পেস্নয়ার হিসেবে এটা মেনে নেওয়া খুব দুঃখজনক।' 'কষ্ট একটাই, কখনও কোনো টিমমেট, পেস্নয়ার বা কোচকে বলতে শুনলাম না কৃষ্ণা ইনজুরিতে, তাকে তাড়াতাড়ি চিকিৎসা করানো হোক। কারো কোনো মাথা ব্যথাই নেই। ১০ বছরের পরিশ্রম এক নিমিষে শেষ। অনেক পেস্নয়ারকে দেখেছি এভাবে হারিয়ে যেতে। মনে হয় সেই দিনটা আর বেশি দিন নেই কৃষ্ণার জন্য। সবাই আমার জন্য আশীর্বাদ এবং দোয়া করবেন। যাতে মানসিকভাবে ভেঙে না পড়ি। আবার আগের মতো মাঠে ফিরতে পারি।'