লেগ স্পিনাররা লাল-সবুজের দলে দুয়ার অধিকাংশ সময় ধরে বন্ধই পেয়েছেন। ঘরোয়া ক্রিকেটেও তাদের খেলাতে অনীহা দেখানো ধারাবাহিক ঘটনা। এর মাঝেই অন্ধকারে উজ্জ্বল আলোকচ্ছটা হয়ে আবির্ভূত হয়েছেন রিশাদ হোসেন। নীলফামারীর যে এলাকা থেকে রিশাদ উঠে এসেছেন, সেটি শহরের বাইরে। যেখানে ক্রিকেটের অবকাঠামোগত সুবিধা তেমনকিছু নেই। ছোটবেলায় মামাদের খেলা দেখে শেখা এবং আগ্রহের পারদ বেড়ে চলা।
লম্বা সময় ধরে জাতীয় দলে লেগ স্পিনারের সংকট মুহূর্তে আমিনুল ইসলাম বিপস্নব, জুবায়ের লিখনদের মতো অনেককেই জাতীয় দলের জন্য বিবেচনা করেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু কাউকে ধরে রাখা যায়নি। নীলফামারীর রিশাদ হোসেন ছিলেন ব্যতিক্রম। তবে শুরুটা লেগস্পিনে হলেও নিজেকে টি২০'র ফিনিশার রোলেও করে তুলেছেন অপরিহার্য। জায়গা করে নিয়েছেন বিশ্বকাপের দলে।
বর্তমানে বাংলাদেশের যেক'জন তরুণ প্রতিভাবান ক্রিকেটার তাদের পারফরম্যান্স দিয়ে নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছেন, রিশাদ হোসেন তাদের মধ্যে অন্যতম। তার ওপরে প্রত্যাশার চাপটাও বড়। লেগ স্পিনের পাশাপাশি ব্যাটটাও ভালোই চালাতে পারেন রিশাদ। ফিল্ডিংয়েও বেশ ভালোই অবদান রাখতে দেখা যায় তাকে। আসন্ন টি২০ বিশ্বকাপের টাইগার স্কোয়াডে তাই নিয়মিত দেখা যেতে পারে তাকে।
বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্নপূরণ হচ্ছে, এবার পারফরম্যান্স দিয়ে প্রত্যাশা পূরণের পণ করেছেন তিনি। বিসিবি প্রকাশিত ভিডিওতে উদীয়মান তারকা রিশাদ বলেন, 'এটা (বিশ্বকাপ) সবার জন্য সারা জীবনের স্বপ্ন। বিশ্বকাপে খেলা আমার জন্য অনেক গর্বের ব্যাপার। চেষ্টা করব সামর্থ্যের সর্বোচ্চটা দিতে। আমি ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং- তিন মাধ্যমেই দলের প্রয়োজনে অবদান রাখতে চাই। ইনশাআলস্নাহ সবসময় এটাই চেষ্টা করব।'
নিজের লক্ষ্যের কথা জানিয়ে রিশাদ বলেন, 'প্রথমে ক্রিকেট খেলা যখন শুরু করি, তখন লেগস্পিনার ছিলাম। কিন্তু আমার চিন্তা ভাবনা ছিল আরও বড় কিছু করার। দেশের জন্য কিছু করতে হলে আমাকে তিন মাধ্যম থেকেই অবদান রাখতে হবে। আর আপনি যখন ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং সব ক্ষেত্রে ভালো করতে চাইবেন তখন আপনাকে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।'
সাম্প্রতিক সময়ে রিশাদ আস্থা অর্জন করেছেন তার বিগ হিটিং সামর্থ্যের জন্য। নিজের এমন বড় শট খেলার প্রবণতা নিয়ে তার মন্তব্য, 'আমি চেষ্টা করেছি ব্যাটিংয়ে আরও উন্নতি করার জন্য। সব ব্যাটারই চায় বড় বড় শট খেলতে। আমিও সবসময় চাই যে বাউন্ডারির দিকে বেশি শট খেলতে। ছক্কা মারার জন্য নিজের ওপর বিশ্বাস সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কে বল করছে সেদিকে আমি খুব একটা ভ্রম্নক্ষেপ করি না। আমি শুধু বল বিবেচনা করি এবং সে অনুযায়ী খেলার চেষ্টা করি।'
বাংলাদেশ দলের স্পিন কোচ হিসেবে যোগ দেওয়া পাকিস্তানের কিংবদন্তি স্পিনার মুশতাক আহমেদ সম্পর্কে রিশাদ বলেন, 'উনি ওনার অভিজ্ঞতা আমাদের সঙ্গে শেয়ার করে। বিশ্বমঞ্চে উনার দাপুটে পারফর্ম্যান্স সম্পর্কে জানিয়েছেন।'
এই স্পিন কিংবদন্তির কাছে নিজের অভিজ্ঞতাও জানিয়েছেন, 'আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম কীভাবে বড় মঞ্চে পারফর্ম করা যায়। কীভাবে কাম অ্যান্ড কুল থাকা যায়। এসব নিয়েই কথা হচ্ছিল। উনি বলেছিলেন বিশ্বমঞ্চে যত ঠান্ডা থাকা যায় তত ভালো পারফর্ম করার সুযোগ থাকে। আমি এগুলো ডেলিভার করার চেষ্টা করব।'
রিশাদ হোসেন টি২০ বিশ্বকাপ দলে আসার আগে মেলে ধরেছেন স্বপ্নের ডানা। আসন্ন বিশ্বকাপে একবারে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হতে চান ২১ পেরুনো তরুণ।
গত বছর আন্তর্জাতিক অভিষেকের পর ১৭টি টি২০ খেলেছেন রিশাদ। তাতে আছে ১৫ উইকেট, ওভাররপ্রতি রান দিয়েছেন ৭.১৭ করে। যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে সর্বশেষ সিরিজে ৩ ম্যাচে নেন ৪ উইকেট। একাদশে নিয়মিত সুযোগ পাচ্ছেন, তার ওপর ভরসা থাকবে বিশ্বকাপেও।
টি২০ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বড় সাফল্য না থাকলেও এবার ভিন্ন কিছুর আশা রিশাদের। বিশ্বকাপের আগে পুরো দলের অবস্থা নড়বড়ে, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সিরিজ হারের তেতো অভিজ্ঞতাও হয়েছে। তবে এসবের মাঝেও তাকে দেখা গেল বড় স্বপ্নের কথা জানাতে, 'আগের থেকে ভিন্ন ফল হবে আশা করি। নামের পেছনে আমি বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি এটা দেখতে চাই যেহেতু মূলত আমি বোলার। অলরাউন্ডার হিসেবেও নিজেকে অনেক দূর এগিয়ে দেখতে চাই।'