হারানো আত্মবিশ্বাসে কিছুটা হলেও প্রলেপ পেল বাংলাদেশ। টি২০ বিশ্বকাপের আগে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে সিরিজ খেলার মূল লক্ষ্যই ছিল কন্ডিশনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া। কিন্তু দুই ম্যাচে বিবর্ণ পারফরম্যান্সে আগেভাগেই সিরিজ হাতছাড়া হয়ে যায় বাংলাদেশের। তৃতীয় ম্যাচ বাংলাদেশের জন্য ছিল আত্মসম্মান বাঁচানোর। সেই লড়াইয়ে বাংলাদেশ জিতেছে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে। তাতে স্বস্তি ফিরেছে নিশ্চিতভাবেই। যেখানে বড় অবদান মুস্তাফিজুর রহমানের।
প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে টি২০তে ৬ উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়েন মুস্তাফিজুর রহমান। বাঁহাতি এই পেসার প্রেইরি ভিউতে রীতিমতো আগুন ঝরিয়েছেন! ৪ ওভারে খরচ করেছেন মাত্র ১০ রান। যেটা টি২০তে তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিং ফিগার।
মজার ব্যাপার হলো, যুক্তরাষ্ট্রের জার্সি পরিহিত ছয়জনকে তিনি পাঠিয়েছেন প্যাভিলিয়নে। দলটিতে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে জন্ম নেওয়া ক্রিকেটারদের সংখ্যা কম নয়। তবে মুস্তাফিজের শিকারগুলোর বেলায় ঘটেছে এমনই এক কাকতালীয় ব্যাপার যে, বাঁহাতি এই পেসারের ঝুলিতে ঢোকা ছয়জনের জন্ম হয়েছে ছয়টি ভিন্ন দেশে!
মুস্তাফিজের রেকর্ডের দিনে রেকর্ড বুকে নতুন করে নাম লেখায় বাংলাদেশ। জয়ের সঙ্গে বাংলাদেশ এই ম্যাচে বেশ কিছু রেকর্ডকেও সঙ্গী করেছে। দলগত রেকর্ডের পাশাপাশি ব্যক্তিগত রেকর্ডও হয়েছে।
১০ উইকেটে জয়
টি২০ ক্রিকেটে বাংলাদেশের ৯ উইকেটে জয় ছিল দুটি। জিম্বাবুয়ে ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে একটি করে। যুক্তরাষ্ট্রকে ১০ উইকেটে হারিয়ে বাংলাদেশ প্রথমবার এই ফরম্যাটে সবকটি উইকেট হাতে রেখে জয়ের স্বাদ পায়। যুক্তরাষ্ট্র ৯ উইকেটে করে ১০৪ রান। ছোট্ট লক্ষ্য কোনো উইকেট না হারিয়েই টপকে যায় বাংলাদেশ।
৫০ বল
সান্ত্বনার জয়ে বাংলাদেশ হোয়াইটওয়াশের লজ্জাও এড়িয়েছে। ১০ উইকেটের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি বল হাতে রেখে জয়ের রেকর্ডও হয়েছে এই ম্যাচে। যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া ১০৫ রানের লক্ষ্য বাংলাদেশ ১১.৪ ওভারে ছুঁয়ে ফেলে। ৫০ বল হাতে রেখে জয়, বাংলাদেশের জন্য নতুন এক অভিজ্ঞতা। এর আগে বাংলাদেশ ৪৮ বল হাতে রেখে জিতেছিল আফগানিস্তানের বিপক্ষে। ম্যাচে টার্গেট ছিল ৭৩। সেই হিসেবে এবারের স্কোরটা ছিল বড়। জয়টাও এসেছে বড়।
মুস্তাফিজ
বাংলাদেশের জয়ের নায়ক মুস্তাফিজুর রহমান অসাধারণ বোলিং করেছেন শেষ ম্যাচে। আন্তর্জাতিক টি২০তে বাংলাদেশের কোনো বোলারের ৬ উইকেট ছিল না। ৪ ওভারে ১০ রান দিয়ে ৬ উইকেট নিয়েছেন এই বাঁহাতি পেসার। ২০১৬ টি২০ বিশ্বকাপে ইডেনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২২ রানে ৫ উইকেট পেয়েছিলেন। ৮ বছর পর ছাড়িয়ে গেলেন নিজের পুরনো রেকর্ড। এর আগে ইলিয়াস সানী (একবার), সাকিব আল হাসান (দুইবার), মোসাদ্দেক হোসেন (একবার) ও মুস্তাফিজ ফাইফারের স্বাদ পেয়েছিলেন। সবাইকে ছাড়িয়ে মুস্তাফিজ এখন শীর্ষে।
সাকিবের ডাবল
যুক্তরাষ্ট্রের ওপেনার আন্দ্রেস গাউসকে আউট করে সাকিব পেয়ে যান আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৭০০ উইকেটের স্বাদ। সঙ্গে অমূল্য এক রেকর্ডে নিজেকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নেন। বিশ্বের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৭০০ উইকেট ও ১৪ হাজার রানের ডাবল স্পর্শ করেন বাংলাদেশের অলরাউন্ডার। ব্যাটিংয়ে আগেই তার রান ১৪ হাজার পেরিয়েছে। তিন ফরম্যাট মিলিয়ে রান করেছেন ১৪ হাজার ৫১৫। বোলিংয়ে এদিন ৭০০ উইকেট নিয়ে ছুঁয়ে ফেললেন ডাবল। টেস্ট ক্রিকেটে সাকিবের উইকেট ২৩৭টি। ওয়ানডেতে পেয়েছেন ৩১৭টি। টি২০তে তার প্রাপ্তি ১৪৬ উইকেট।
রিশাদের কিপটেমি!
আন্তর্জাতিক টি২০তে বাংলাদেশের হয়ে এক ম্যাচে সবচেয়ে কম রান দেওয়ার রেকর্ড গড়েছেন রিশাদ হোসেন। ৪ ওভারে এক মেডেনসহ কেবল ৭ রান দেন রিশাদ। উইকেট পেয়েছেন ১টি। তার স্পেলে ডট বল ছিল ১৭টি। ছিল না কোনো বাউন্ডারি। ডট বল বাদে বাকি ৭ বল থেকে একটি করে সিঙ্গেল নেন ব্যাটসম্যানরা।