টি২০ বিশ্বকাপ শুরুর আগে প্রস্তুতিমূলক সিরিজেই বড় ধাক্কা খেয়েছে বাংলাদেশ দল। সিরিজ হেরেছে সহযোগী সদস্য দেশ যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে। নাজমুল হোসেন শান্তদের নিয়ে বিশ্বকাপে সমর্থকদের প্রত্যাশার সীমানাও তাই হয়ে গেছে ছোট। তবে তাওহিদ হৃদয়ের আশার সীমা বড়ই থাকছে। এবার বিশ্বকাপে সুপার এইট তো বটেই কমপক্ষে সেমিফাইনাল খেলতে চান তিনি।
২০০৭ সাল থেকে নিয়মিত টি২০ বিশ্বকাপে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশ দল। তবে কুড়ি ওভারের বৈশ্বিক টুর্নামেন্টটিতে এখন পর্যন্ত সেভাবে সাফল্যের দেখা পায়নি টিম টাইগার্স। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপেও খুব বড় কিছু আশা করার মতো পরিস্থিতি নেই বাংলাদেশের। কারণ, বিশ্বকাপ শুরুর আগে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ হেরেছে চন্ডিকা হাথুরুসিংহের শিষ্যরা। তবু তাওহিদ হৃদয়ের স্বপ্নের পরিধি বেশ চওড়া।
২০২০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ভারতকে হারিয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ প্রথমবারের মতো আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপ জিতেছিল বাংলাদেশ। ঐ দলের সদস্য হওয়ায় বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ কেমন হতে পারে সেটি বেশ ভালোই জানেন হৃদয়। এবার বড়দের বিশ্বকাপ নিয়ে স্বপ্ন দেখছেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্র ও ক্যারিবিয়ানে হতে যাওয়া বিশ্বকাপে বাংলাদেশ আছে 'ডি' গ্রম্নপে। সেখানে প্রতিপক্ষ শ্রীলংকা, দক্ষিণ আফ্রিকা, নেদারল্যান্ডস ও নেপাল। পরের রাউন্ডে যেতে হলে থাকতে হবে সেরা দুই দলের মধ্যে, এই কাজটাও সহজ নয়।
তবে বিসিবির প্রকাশিত ভিডিওতে হৃদয় বলছেন, বিশ্বকাপে তার ব্যক্তিগত লক্ষ্য নেই। দল হিসেবে সুপার এইট ছাড়িয়ে তারা যেতে চান সেরা চারে, 'এবারের বিশ্বকাপে নিজের নামের পাশে কিছু দেখতে চাই না। আমি চাই দল যেন ভালো করে। আমার জায়গা থেকে অবশ্যই নিজের সেরাটা দিয়ে অবদান রাখার চেষ্টা করব। আমি চাই আমার দল কমপক্ষে সেমিফাইনাল খেলুক।'
২০২০ সালে যুব বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ। অনূর্ধ্ব-১৯ সেই দলের হৃদয়, তানজিদ হাসান তামিম, শরিফুল ইসলাম ও তানজিম হাসান সাকিব আছেন বর্তমান টি২০ বিশ্বকাপের দলেও। জুনিয়র পর্যায়ে নিজেদের সাফল্যের কথা স্মরণ করে বড়দের আসরেও সেরা হওয়ার তাগিদ অনুভব করছেন হৃদয়, 'চোখ খুলেও এখনো অনুভব করি যে কী হয়েছিল সেই বিশ্বকাপে (অনূর্ধ্ব-১৯)। এখন আমাদের সময় এসেছে জাতীয় দলের হয়ে এশিয়া কাপ, বিশ্বকাপের মতো জায়গায় গিয়ে ভালো করা, কাপ নেওয়া, ভালো করা না, কাপ নিতে চাই। শুধু আমি না, আমরা সবাই চাই। আমরা যদি আমাদের দিক থেকে ভালো করতে পারি, তাহলে বেশি দেরি নেই।'
আইসিসি ইভেন্ট জিতলে, বড় খেলোয়াড় হিসেবে মূল্যায়ন করা হয় বলে মন্তব্য করেন হৃদয়। এজন্য বিশ্বকাপ জয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ, মনে করছেন হৃদয়, 'আইসিসি ইভেন্ট জেতাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, শিরোপা জিতলে আমাদের সেভাবেই মূল্যায়ন করা হবে। এখন যেমন অস্ট্রেলিয়া বা বড় বড় দলের খেলোয়াড়দের মূল্যায়ন করা হয়। আমরা যদি দুই-একটি ট্রফি জিততে পারি তাহলে আমাদের মানসিক সন্তুষ্টি, আত্মবিশ্বাস বাড়বে। আমাদের নতুন প্রজন্মকেও সেভাবে সবাই মূল্যায়ন করবে। এজন্য এই বিষয়টা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। শুধুমাত্র গুরুত্বপূর্ণ বললেই হবে না, আমাদের যে প্রক্রিয়া আছে, সেগুলো সবসময় বাস্তবায়ন করতে হবে। কঠোর পরিশ্রমের বিকল্প নেই। আমার কাছে মনে হয়েছে, আমরা সবাই যদি নিজেদের জায়গা থেকে উন্নতি করি, তাহলে খুবই সহজেই পাবো।'
হৃদয়ের মতো অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী দলের অনেকেই এখন জাতীয় দলে নিয়মিত। তানজিদ হাসান, তানজিম হাসান, শরিফুল ইসলামরা বাংলাদেশের জন্য বড় অবদান রাখতে পারবেন বলে মনে করেন হৃদয়। তাদের মধ্যে আক্রমণাত্মক মনোভাব আছে, যারা যেকোনো মুহূর্তে ম্যাচের মোড় ঘুড়িয়ে দিতে পারেন। হৃদয় বলেন, 'অনূর্ধ্ব-১৯ এ যারা ছিল, শুধু অনূর্ধ্ব-১৯ নয়, এই দলে যারা আছে মনে হয় যে প্রত্যেকেই ফাইটার। সবার মধ্যে আক্রমণাত্মক মনোভাব আছে। তামিম, সাকিব, রিশাদ যারাই আছে, আমার মনে হয় তারা এমন খেলোয়াড়, যেকোনো দিন একজন-দু'জন খেলার চেহারাটা পরিবর্তন করে দিতে পারে। এদের মধ্যে সেই সামর্থ্য আছে। প্রত্যেকের মধ্যে একটা জেদ আছে। আমরা যেভাবে চ্যাম্পিয়ন হয়েছি, এখানেও তেমন কিছু করবো বলে আশা করি।'
তবে বয়সভিত্তিক ক্রিকেটের সঙ্গে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের পার্থক্যটা বিশাল। গত এক-দেড় বছরে এটি হৃদয়-তানজিদের বুঝে যাওয়ার কথা। হৃদয় অবশ্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের চ্যালেঞ্জটা উপভোগই করেন বলে দাবি করলেন, 'দুটিই তো দেশের জন্য খেলা, একটা বয়সভিত্তিক পর্যায়ে। আরেকটা শীর্ষ স্টেজে। দু'টিই গর্বের। কারণ ক্যারিয়ারের শুরুতে একটা অর্জন যা সব সময় স্মরণীয়। জাতীয় দলে এখানে আন্তর্জাতিকভাবে চ্যালেঞ্জ বেশি, প্রতিযোগিতা বেশি থাকে। আমার কাছে মনে হয়, যেখানে চ্যালেঞ্জ বেশি, সেখানেই আমার ভালো লাগে। কারণ চ্যালেঞ্জটা নিতেই আমার ভালো লাগে।'