শুক্রবার, ১১ অক্টোবর ২০২৪, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১

ক্রিকেট খেলতে দিতে রাজি ছিলেন না তানভীরের বাবা!

ক্রীড়া প্রতিবেদক
  ২৪ মে ২০২৪, ০০:০০
ক্রিকেট খেলতে দিতে রাজি ছিলেন না তানভীরের বাবা!

তানভীর ইসলাম, বাংলাদেশের স্পিন সমৃদ্ধ দলের উদীয়মান তারকা। ২০২৩ সালের মার্চে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি২০ তে অভিষেক হয় তার। সর্বশেষ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দলে থেকে বিশ্বকাপের দলেও জায়গা করে নিয়েছেন। জাতীয় দল জার্সিতে টি২০তে চার ম্যাচ খেলেছেন। টি২০ বিশ্বকাপে অংশ নিতে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছে বাংলাদেশ দল। দলের সঙ্গে সেখানে গেছেন বাঁহাতি ফিঙ্গার স্পিনার তানভীর ইসলামও। সবকিছু ঠিক থাকলে হয়তো দেশের হয়ে প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে পারবেন তিনি। অথচ তানভিরের বাবা ক্রিকেট খেলতে দিতে রাজি ছিলেন না।

বাবা চেয়েছিলেন পড়াশোনা করে নিরাপদ রাস্তা বেছে নিক তানভীর ইসলাম। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই তানভীরের ছিল ক্রিকেট খেলার ঝোঁক মাথায়। নানির সমর্থন পেয়ে নিজের প্রবল আগ্রহ পুঁজি করে নানান গলি পেরিয়ে পেয়ে যান উপরে উঠার সিঁড়ি। বিশ্বকাপ স্কোয়াডে থাকা বাংলাদেশের বাঁহাতি স্পিনার জানিয়েছেন তার উঠে আসার চমকপ্রদ গল্প।

বিসিবির 'রেড-গ্রিন স্টোরিতে' তানভীর তুলে ধরেছেন নিজের ফেলে আসা সময়ের কথা। জানিয়েছেন কীভাবে পরিশ্রম করে কীভাবে ধীরে ধীরে সর্বোচ্চ পর্যায়ের ক্রিকেটে ঠাঁই করে নিয়েছেন তিনি, 'একদম ছোটবেলা থেকে আমি নানুর কাছে বড় হয়েছি। আম্মু সরকারি চাকরি করতেন। এই কারণে আম্মুর কাছে থাকা হতো না বেশি, আব্বু ঢাকায় চাকরি করতেন। নানুও সরকারি চাকরি করতেন। আমার নানুর কাছে মাস শেষে একটা আবদার থাকত যে বল, ব্যাট ও স্ট্যাম্প। এমনকি বেলসহ কিনে দিত আমার নানু। আমি অনেক ছোট থেকে বড়দের সঙ্গে খেলেছি। কারণ আমার কাছে সব কিছু (সরঞ্জাম) ছিল। আমার বল-ব্যাট দিয়ে তারা খেলতে পারবে।'

'বড় হওয়ার পরও এভাবেই চলে। আমি যখন এসএসসি পরীক্ষা দেই, এসএসসি পরীক্ষার পর ফাইল আম্মুর কাছে দিয়েই (কেন্দ্র) থেকেই খেলতে চলে যেতাম। এরকম কিছুদিন কাটার পর বরিশাল বুলস নামে একটা দল হয়েছিল বিপিএলে, ওই দলে লারা নামে একজন টিম বয় ছিল, উনার বাড়ি আমাদের এলাকায়। আমরা জানতাম তিনি খেলোয়াড়। উনার সঙ্গে আলাপ হলো। উনি বলল তুমি ঢাকায় আস, একাডেমিতে ভর্তি হও। একাডেমি তো তখন বুঝতাম না।'

'আব্বু বলল, তোমার ক্রিকেটে যাওয়ার দরকার নাই, এটা অনেক অনিশ্চিত জিনিস। সুফল আসবে দেরিতে, না আসার সম্ভাবনাই বেশি। তবে নানু বলছে, 'দেখ সবাই যখন বলছে ওকে দিয়ে আয়।'

আব্বু তিনটা অপশন দিয়েছিল যে, প্যারামেডিকেল, সাধারণ ধারায় পড়তে হবে নয়তো ডেন্টাল। এগুলোর কিছু একটা করলে জীবন সুন্দরভাবে পার হবে। নানুর কাছে যেহেতু বড় হয়েছি উনি আব্বুকে চাপ দিয়েছে। নানুর কথায় আমাকে ঢাকায় নিয়ে আসে।'

'আব্বু বলছে, 'তোমাকে দুই-এক বছর সময় দেওয়া হলো পারলে পারছ ক্রিকেটের কিছু একটা করতে। না হলে ফিরে উনার পছন্দের বিষয়ে চলে আসতে হবে।' আব্বু আরেকটা অপশন দিয়েছিল পুলিশের চাকরি।'

'ঢাকায় আসার পর লারাকে ফোন দিলাম। আমরা জানতাম না ও টিমবয়। বলে আমি এনসিএল দলের সঙ্গে। জানতাম না এনসিএল কী! সে এই রংপুর, এই রাজশাহী, সিলেট বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতেছে। আমরা মনে করেছি উনি খেলা নিয়ে ব্যস্ত। উনি না আসায় আব্বু বলল, 'চল, আবাহনী অনেক বড় ক্লাব, ওইদিকে যাই।' পরে ধানমন্ডি যাই। দেখি আবাহনী মাঠে অনেক একাডেমি। কোনো একাডেমি সপ্তাহে তিন দিন, কোনোটা চার দিন। কোনোটা পাঁচ দিন। কিন্তু সিসিএস নামে একটা একাডেমি আছে। রঞ্জিত স্যার আর দিপু রায় চৌধুরী স্যার উনারা ছিল। ওইখানে সাতদিনই অনুশীলন হতো। আব্বু বলল, 'তুই তো পারস না কিছু, তুই সাতদিনই অনুশীলন করবি।' ওখানেই ভর্তি হওয়া।'

'ওখান থেকে রায়ের বাজার প্রগতি নামের একটা দলে তৃতীয় বিভাগ লিগ খেলি। ওখানে আমি সাতমাস খেলেছি। উনারা আমাকে টাকা দেওয়ার জন্য ডাকছে। আমি বলেছি, টাকা লাগবে না। তখন তো বুঝি নাই খেললে টাকা দেয়। অনুভব করছিলাম আরেকটু ভালো জায়গায় খেলতে হবে। তারপর এলাম খেলাঘরে। দেখছিলাম যে কোনো একাডেমিতে ক্লাব আছে। ওইটা খোঁজার পর পেলাম ফার্মগেট তেজকুনি পাড়ায় খেলাঘর। ওখানে তৃতীয় বিভাগ, দ্বিতীয় বিভাগ, প্রথম বিভাগ তিনটাই আছে। এই একাডেমিতে ভর্তি হলাম। সাইফুল ভাই নামে এক কোচ আছে আমার।'

'খেলাঘর প্রথম বিভাগ দলে দু'জন বাঁহাতি স্পিনার খুবই বাজে করছিল। খুলনার টুটুল ভাই, কাজল দেখল যে আমি সকাল-সন্ধ্যা অনুশীলন করি খেলাঘর মাঠে। ওরাই বলল এই ছেলেটাকে একটা সুযোগ দেন। বিকেএসপির সঙ্গে তিন নম্বর মাঠে একটা অনুশীলন ম্যাচ হয়েছিল ওখানে আমি ভালো করছিলাম। তৃতীয় বিভাগ থেকে প্রথম বিভাগে চলে আসি। আমি সাত না আট ম্যাচে ২৭ উইকেট নিয়েছিলাম, অনেক ভালো করেছিলাম। খেলাঘর তৃতীয় নাকি চতুর্থ হয়েছিল। পরেরবার আবার প্রথম বিভাগে খেলি, আমি ২৮ উইকেট নেই। আমাদের দল প্রিমিয়ার লিগে উঠে যায়। তারপর খেলাঘর প্রিমিয়ার লিগ খেলল। নাফিস ইকবাল ভাই উনি আমাদের দলের ম্যানেজার ছিল। ওইবার প্রিমিয়ার লিগেও ৯ ম্যাচে আমি ২৮ উইকেট নেই। তখন নাফিস ভাই বলে খুলনা টাইটান্সে ইনাম (বিসিবি পরিচালক কাজী ইনাম) স্যার পছন্দ করেছে, তুই খুলনা টাইটান্সে খেলিস। আমি বলি ঠিক আছে ভাই। আমি তো বুঝি না কীভাবে দলের সঙ্গে টাকা পয়সা নিয়ে কথা বলতে হয়, নাফিস ভাই বলে আমি সব করব। ওই আমি প্রথম বিপিএল খেলি। তারপর তো আস্তে আস্তে এতদূর আসা।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে