আজকের যায়যায়দিন

অবিশ্বাস্য, অকল্পনীয়, অভূতপূর্ব! এসব বিশেষণ এখন বায়ার লেভারকুজেনের নামের পাশে বেশ মানানসই। ক্লাবের ১২০ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে কাঙিঙ্ক্ষত, সোনায় মোড়ানো অধ্যায়টি লেখা হয়ে গেছে আগেই। জাভি আলোন্সোর হাত ধরে অনেক অনেক রেকর্ড গড়ে অবিশ্বাস্য এক যাত্রায় লেখা হয়েছে মহাকাব্য। এরপরও যেন কিছুটা বাকি ছিল, গড়ার ছিল আরেক অনন্য কীর্তি। অসাধারণ এক চিত্রকর্মে তুলির শেষ আঁচড়ে সেটাই আঁকল দলটি; বুন্দেসলিগার সুদীর্ঘ ইতিহাসে প্রথম দল হিসেবে অপরাজিত থেকে ট্রফি উঁচিয়ে ধরল আলোন্সোর দল লেভারকুজেন।

২০২৩-২৪ আসরের শেষ ম্যাচে শনিবার রাতে বে অ্যারেনায় আউক্সবুর্ককে ২-১ গোলে হারিয়ে গল্পের শুভসমাপ্তি টানে লেভারকুজেন। ভিক্টর বোনিফেসের গোলে দ্বাদশ মিনিটেই এগিয়ে যায় চ্যাম্পিয়নরা। ১৫ মিনিট পর রবার্ট আন্দরিচের গোলে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণও পেয়ে যায় তারা। দ্বিতীয়ার্ধে কোমুর ব্যবধান কমিয়ে লড়াইয়ের আভাস দিলেও, শেষ পর্যন্ত আর কিছু করতে পারেনি তারা। আর ম্যাচের শেষের বাঁশি বাজতেই শুরু হয়ে যায় লেভারকুজেনের উৎসব।

গ্যালারিতে সমর্থকদের বাঁধভাঙা উলস্নাস, এর মধ্যে সবুজ আঙিনায় কোচ-খেলোয়াড়দের নেচে গেয়ে উদযাপন। খানিক বাদে শুরু হলো চ্যাম্পিয়নদের হাতে ট্রফি তুলে দেওয়ার পর্ব। একেক খেলোয়াড়কে পদক পরিয়ে দেওয়া হচ্ছিল আর গ্যালারি থেকে ভেসে আসছিল গর্জন। আলোন্সো মঞ্চে উঠতেই সেই গর্জন যেন বেড়ে গেল বহুগুনে। আর কেনইবা নয়! ৩৪ ম্যাচ থেকে ৯০ পয়েন্ট নিয়ে আসর শেষ হলো লেভারকুজেনের।

বছড় দেড়েক আগে, ২০২২ সালের অক্টোবরে আলোন্সো যখন লেভারকুজেনের দায়িত্ব নেন, তখন আজকের এই চিত্র কারও সুদূর কল্পনাতেও কি উঁকি দিয়েছিল? দলটি তখন ভয়ানকভাবে ধুঁকছিল। বুন্ডেসলিগার পয়েন্ট তালিকায় তাদের অবস্থান ছিল ১৭তম। এদিকে, শাবির এটাই শীর্ষ পর্যায়ের কোনো ক্লাবের প্রথম দায়িত্ব। কোচিং অভিজ্ঞতা বলতে ছিল রিয়াল সোসিয়েদাদের 'বি' দলের হয়ে তিন বছর কাজ করা। সেই শাবির কোচিংয়েই রেলিগেশনের শঙ্কা উড়িয়ে লেভারকুজেন মৌসুম শেষ করে ষষ্ঠ স্থানে থেকে।

মার্শালের আরেকটি সেঞ্চুরি ১ রানের অপেক্ষায় অঙ্কন

এরপর, তাদের উত্থানের গল্প নতুন উচ্চতায় পৌঁছে যায় এই মৌসুমে। দলটি সত্যিকার অর্থেই হয়ে ওঠে অজেয়, অপ্রতিরোধ্য। একের পর এক ম্যাচ জিতে, রেকর্ডের পর রেকর্ড গড়ে শেষ পর্যন্ত পাঁচ ম্যাচ বাকি থাকতেই তারা নিশ্চিত করে ফেলে শিরোপা। ক্লাবের ১২০ বছরের ইতিহাসে প্রথমবার বুন্দেসলিগা চ্যাম্পিয়ন! কিন্তু শাবির এই দল যেন কোনো কিছুতেই সন্তুষ্ট নয়, তাদের ক্ষুধা যেন শত প্রাপ্তিতেও মেটার নয়। শিরোপা নিশ্চিতের পরও যার প্রমাণ দিয়ে চলেছে দলটি।

শিরোপা নিশ্চিত হওয়ার দিন থেকেই যেমন নিত্যনতুন রেকর্ড গড়ে চলেছে দলটি। বুন্ডেসলিগায় টানা সর্বোচ্চ ম্যাচ অপরাজিত থাকার রেকর্ড, সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে টানা অপরাজিত থাকার ইউরোপিয়ান রেকর্ড গড়ার পর গত সপ্তাহে তারা ছুঁয়ে ফেলে অজেয় পথচলার ফিফটি। এবার সেই সংখ্যাকে আরেক ধাপ এগিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি গড়ল বুন্দেসলিগার ইতিহাসে অপরাজিত থেকে মৌসুম শেষ করার অনন্য কীর্তি। যদিও মৌসুম শুরুর আগে টানা ১১ বারের লিগ চ্যাম্পিয়ন বায়ার্ন মিউনিখকে ঘিরেই ছিল সব আলো। জোর ধারণা ছিল, রেকর্ড চ্যাম্পিয়নরাই হয়ত সংখ্যাটাকে আরেক ধাপ বাড়িয়ে নেবে। কিন্তু জার্মানির সফলতম দলটি মৌসুমজুড়েই যেন নিজেদের হারিয়ে খুঁজল, এতে নতুন চ্যাম্পিয়নদের নূ্যনতম চ্যালেঞ্জও জানাতে পারেনি তারা। শেষটাও তাদের হয়েছে ভরাডুবি।

হোফেনহেমের মাঠে ছয় মিনিটের মধ্যে দুই গোলে এগিয়ে গিয়েও পথ হারিয়ে থমাস টুখেলের দল হেরে গেছে ৪-২ ব্যবধানে। বিব্রতকর এই হারের পর দলটি আসর শেষ করল তৃতীয় স্থানে থেকে। বরুশিয়া মগস্নাডবাখকে ৪-০ গোলে হারানো স্টুটগার্ট হয়েছে রানার্সআপ, তাদের পয়েন্ট ৭৩। বায়ার্নের পয়েন্ট ৭২। বুন্দেসলিগা থেকে এবার পাঁচটি দল সরাসরি আগামী মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন্স লিগের টিকিট পেয়েছে। পয়েন্ট তালিকার শীর্ষ পাঁচের অন্য দুই দল হলো লিপজিগ (৬৫ পয়েন্ট) ও বরুশিয়া ডর্টমুন্ড (৬৩ পয়েন্ট)।