শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১

১৮ বছর পর ঘরের মাঠে নিজেদের প্রমাণে মুখিয়ে আছে জার্মানি

ক্রীড়া ডেস্ক
  ১৪ মে ২০২৪, ০০:০০
১৮ বছর পর ঘরের মাঠে নিজেদের প্রমাণে মুখিয়ে আছে জার্মানি

২০০৬ সালে বিশ্বকাপ আয়োজনের মধ্য দিয়ে সর্বশেষ ঘরের মাঠে বড় কোনো ফুটবল টুর্নামেন্টের স্বাগতিক হয়েছিল জার্মান। ২০২৪ ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ সেই স্মৃতিকে আবারো ফিরিয়ে আনার উপলক্ষ করে দিয়েছে। ফুটবল পাগল জাতি হিসেবে পরিচিত জার্মানি চায় সফল আয়োজনের পাশাপাশি নিজেদের হারানোর গৌরব আবারো ফিরে পেতে।

জার্মানিতে আজ ১৪ জুন শুরু হয়ে ১৪ জুলাই পর্যন্ত চলবে ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ।

গ্রীষ্মকালীন রূপকথা হিসেবে এবারের ইউরোকে বিবেচনা করছে জার্মানরা। বিশ্বের কাছে নিজেদের পুরনো শক্তিমত্তা নতুনভাবে ফিরিয়ে আনাই এখন তাদের সামনে একমাত্র লক্ষ্য। ১৮ বছর আগে জার্গেন ক্লিন্সম্যানের অধীনে সেমিফাইনালে খেলেছিল জার্মানি। যদিও টুর্নামেন্টের আগে শেষ চারের লক্ষ্যের কথাই বারবার জার্মানরা বলেছিল। সেমিফাইনালে অতিরিক্ত সময়ে ইতালির কাছে পরাজিত হয়ে শেষ পর্যন্ত তৃতীয় হয় স্বাগতিকরা। প্রায় এক দশক পর ব্রাজিলে আবারো শিরোপা জিতে কিছুটা হলেও আত্মবিশ্বাস ফিরে পায় মিরোস্স্নাভ ক্লোজা, সামির খেদিরা, থমাস মুলার, টনি ক্রুসের দল।

আট বছর পর চতুর্থ বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের পর অধিনায়ক ফিলিপ লাম বলেছিলেন, '২০০৬ সালে পুরো জাতি যেভাবে আমাদের সঙ্গে ছিল আমরা সেটা উপলব্ধি করতে পেরেছিলাম। সেটাই আমাদের সাহস ও শক্তি জুগিয়েছে। সবাই মিলে আজ আমরা যেভাবে এই জয় উদযাপন করব তা চিন্তাও করতে পারছি না। এটা পুরো জাতিকে উৎসবের আমেজ দিয়েছে।'

ওই আসরের সময় জার্মানির আর্থিক অবস্থা বেশ নিম্নমুখী ছিল। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনায় বিশ্বকাপের শিরোপাটি ওইসময় জার্মানিকে পুরো বিশ্বের কাছে অন্য এক পরিচয় উপহার দিয়েছিল। প্রথম ম্যাচে কোস্টারিকার বিপক্ষে ফিলিপ লামের গোলের পর থেকে জার্মান দল যেন অন্য এক উত্তেজনায় নিজেদের উন্নীত করে।

১৮ বছর পর জার্মানির সঙ্গে সঙ্গে পুরো বিশ্বও পরিবর্তিত হয়েছে। আবারো জার্মানির আর্থিক পরিস্থিতি খুব একটা সুবিধাজনক অবস্থানে নেই। দেশটির অবকাঠামো উন্নতিও বাধার সম্মুখীন হয়েছে। যার প্রভাব অতি সম্প্রতি ফুটবল মাঠেও দেখা যাচ্ছে। অনেকেই মনে করছে আবারো ফুটবলের মাধ্যমে অনেক কিছুই পরিবর্তন করা সম্ভব।

টানা দুটি বিশ্বকাপে গ্রম্নপ পর্ব থেকে বিদায়ের হতাশা কাটিয়ে জার্মানরা এবার কোচ জুলিয়ান নাগলসম্যানের কাঁধে চড়ে নিজেদের ফিরিয়ে আনতে চায়। ২০২৩ সালে তারা ১১টি ম্যাচের মধ্যে মাত্র তিনটিতে জয়ী হয়েছে। কিন্তু মার্চে ফ্রান্স ও নেদারল্যান্ডসকে প্রীতি ম্যাচে হারিয়ে শক্তিশালীভাবে ফিরে এসেছে। ইউরোতে ফলাফল যাই হোক না কেন জাতীয়ভাবে এর প্রভাব থাকবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

আসন্ন ইউরোকে সামনে রেখে সমর্থক ও খেলোয়াড়দের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জার্মানদের সামনে এখন অনেক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে ইউক্রেন ও মধ্যপ্রাচ্যে দুটি বড় সহিংসতা চলমান থাকায় পুরো বিশ্ব পরিস্থিতিই এখন হুমকির মুখে। হুলিগান থেকে শুরু করে সম্ভাব্য সন্ত্রাসী হামলার পাশাপাশি সাইবার এ্যাটাককেও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে ইউরোপীয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ আয়োজকরা। প্রায় আড়াই লাখ মিলিয়নেরও বেশি সমর্থকের সঙ্গে ২৪টি দলের বেস ক্যাম্প, দশটি স্টেডিয়াম মিলে বিশাল একটি অংশকে সারাক্ষণ নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে রাখতে হবে।

২০১৪ বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক ও এবারের টুর্নামেন্ট পরিচালক ফিলিফ লাম বলেছেন, 'সব মিলিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।

টুর্নামেন্টের নজিরবিহীন পদক্ষেপ হিসেবে জার্মানি টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়া দেশগুলোর কাছ থেকে প্রায় ৩০০ নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। তারা টুর্নামেন্ট চলাকালীন জার্মানির পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর নেসাসে অবস্থিত ইন্টারন্যাশনাল পুলিশ কোঅপারেশন সেন্টারের (আইপিসিসি) সঙ্গে প্রকল্প মনিটরিংয়ে কাজ করবে।

এছাড়া পুরো আয়োজনের সুষ্ঠু পরিচালনায় জার্মানি, ইউরোপোল ও ইউরোপীয়ান ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা উয়েফার বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা তো রয়েছেনই। মাঠের প্রতিদিনের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে প্রায় ৫০০ বর্গফুটের কনফারেন্স রুমে ১২৯টি কম্পিউটার ও ৪০ স্কয়ার মিটার স্ক্রিনের মনিটরে তারা সার্বক্ষণিক কাজ করবে।

এ প্রসঙ্গে আইপিসিসির পরিচালক অলিভার স্ট্রুথফ বলেছেন, সমর্থকের সংখ্যার ওপর নির্ভর করে প্রতিনিধি দলের সংখ্যা ঠিক করা হবে। একইসঙ্গে তারা কতটা বিপজ্জনক সেটাও আগে থেকেই পর্যবেক্ষণ করা হবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সুইজারল্যান্ডের তুলনায় স্বাভাবিকভাবেই ইংল্যান্ডের প্রতিনিধি অনেক বেশি হবে।

জার্মানি তাদের নয়টি সীমান্তবর্তী এলাকায়ও নিরাপত্তা জোড়দার করেছে। প্রতিটি ট্রেন স্টেশনে ফেডারেল পুলিশ তাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করবে। একইভাবে বিমানবন্দর গুলোতেও তারা সমান দায়িত্ব পালন করবে।

ব্রিটিশ সরকার জানিয়েছে ১৬০০'রও বেশি ইংলিশ ও ওয়েলস সমর্থককে ইতোমধ্যেই তাদের অতীত আচরণের জন্য জার্মানি সফরে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

এদিকে ইউক্রেনিয়ার জাতীয় দলের জন্য পৃথক নিরাপত্তা ব্যবস্থার আয়োজন করা হচ্ছে। প্রতিদিনের ম্যাচে স্টেডিয়ামগুলোতে দলের ওপর নির্ভর করে ৮০০ থেকে ১৩০০ পুলিশ বাড়তি নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবে। প্রতিটি স্টেডিয়ামে প্রবেশের আগে তিনটি নিরাপত্তা বেষ্টনি পার হতে হবে। প্রথমে তাদের গাড়ি তলস্নাশি করা হবে। দ্বিতীয় বেষ্টনিতে তাদের ব্যাগ ও তৃতীয়টিতে টিকিট স্ক্যান করা হবে।

ফ্যান জোনগুলোও নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের বাইরে নয়। বিশেষ করে বার্লিনে ব্র্যান্ডেনবার্গ গেটে প্রতিদিন হাজার হাজার সমর্থকের উপস্থিতি আশা করা হচ্ছে।

জার্মান সেনাবাহিনী ন্যাশনাল এয়ার সিকিউরিটি সেন্টারের তত্ত্বাবধানে প্রতি ম্যাচে আকাশে টহল দেবে। ড্রোনের ব্যবহারও খুব নিখুঁতভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে