টানা খেলানোই কি কাল হলো তাসকিনের জন্য?

প্রকাশ | ১৪ মে ২০২৪, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
বিশ্বকাপের আগমুহূর্তে তাসকিন আহমেদের চোটের খবরে আচমকা কালো মেঘে ছেয়ে গেছে দেশের ক্রিকেট। পুরনো সমস্যা সাইড স্ট্রেইনের সমস্যা ফিরে আসায় বিশ্বকাপে অনিশ্চয়তার শঙ্কায় আছেন তারকা এই পেসার। ইনজুরিপ্রবণ তাসকিন ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপের আগে পড়েন ইনজুরিতে। যার ফলস্বরূপ দল থেকে বাদ পড়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন তিনি। নিজেকে প্রমাণ করে ২০২৩ বিশ্বকাপে গেলেও সেখানেও পুরোপুরি ফিট ছিলেন না এই পেসার। নিজের সেরা খেলাটাও উপহার দিতে পারেননি তাসকিন। বাংলাদেশও ভুগেছে সে কারণে। এবার আবারও বিশ্বকাপের আগে দারুণ ফর্মে তাসকিন। যথারীতি হানা দিয়েছে ইনজুরিও। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে শেষ টি২০'র আগে গত রোববার ইনজুরিতে পড়েছেন টাইগার পেসার তাসকিন আহমেদ। সাইড স্ট্রেইন ইনজুরির কারণে সিরিজের শেষ ম্যাচটি খেলতে পারেননি তিনি। বাংলাদেশও এদিন হেরেছে ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের আগের চার ম্যাচেই দারুণ বোলিং করেছেন তাসকিন। মাত্র ৭৩ রানের বিনিময়ে ৮ উইকেট শিকার করেছেন এই পেসার। সিরিজে তার গতির ঝড় ছিল দেখার মতো। রোববার পঞ্চম টি২০'র আগে ব্যথা বাড়লে তাসকিনকে পাঠানো হয় হাসপাতালে। সোমবার সকালে রিপোর্ট পাওয়া গেছে। সেখান থেকে জানা গেছে, তাসকিনের পেশিতে চিড় ধরা পড়েছে। রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে আমেরিকায়। সেখানকার চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তাসকিনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। আপাতত তাসকিনের চোট সম্পর্কে যা জানা গেছে, দুই থেকে তিন সপ্তাহ তাকে মাঠের বাইরে থাকতে হবে। নির্বাচক প্যানেলের এক সদস্য বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এই নির্বাচক বলেন, 'রিপোর্ট আমেরিকায় চিকিৎসকের কাছে পাঠানো হয়েছে। যেহেতু দল সেখানে থাকবে তাই ওই দেশের চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।' নির্বাচকরা দুই দিক বিবেচনা করেই এগোচ্ছেন। অর্থাৎ তাসকিন থাকলে এক রকম আর না থাকলে আরেক রকম, দুটি বিষয়কে সামনে রেখে নির্বাচকরা এগোচ্ছেন। ইতোমধ্যে বিকল্প পেসারদের সঙ্গে টিম ম্যানেজম্যান্টের সদস্যরা কথা বলছেন। তানজিম হাসান সাকিব অথবা হাসান মাহমুদকে বিকল্প হিসেবে ভাবা হচ্ছে। বিশ্বকাপের বাকি আর তিন সপ্তাহেরও কম সময়। এমন সময় তাসকিন ইনজুরিতে পড়ায় শঙ্কায় জেগেছে তার বিশ্বকাপ খেলা নিয়ে। সাইড স্ট্রেইনের ইনজুরি থেকে সেরে উঠতে সাধারণত ৩-৪ সপ্তাহ সময় লাগে। তাসকিনের স্ক্যান ও অন্য রিপোর্ট পাওয়ার পরই বিশ্বকাপে তার খেলার সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলতে চায় বিসিবি।জিম্বাবুয়ে সিরিজে তাসকিন ইনজুরিতে পড়ার পর বিসিবির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন জেগেছে অনেকেরই। ইনজুরিপ্রবণ এই বোলারকে টানা ক্রিকেট খেলানোই কি তবে কাল হয়েছে? ২০২৩ বিশ্বকাপে ইনজুরির কারণে সব ম্যাচে খেলা হয়নি তাসকিনের। বারবার ইনজুরিতে পড়া এই পেসার খেলতে পারেননি নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হোম ও অ্যাওয়ে সিরিজেও। শ্রীলংকা সিরিজে দলে ফেরার পর টি২০ ও ওয়ানডে সিরিজে খেলেন তাসকিন। তার আগে অবশ্য খেলেছেন বিপিএলেও। টি২০ বিশ্বকাপের আগে ইনজুরিমুক্ত রাখতে তাসকিনকে আইপিএল থেকে দূরে রেখেছে বিসিবি। অথচ এই ফ্র্যাঞ্চাইজি টি২০ আসরে খেলতে না দিলেও তাসকিন খেলেছেন ডিপিএলে। এবারের তাপদাহের সময়ও ঢাকা আবাহনীর হয়ে টানা খেলে গেছেন তাসকিন। ২০ ওভারের টুর্নামেন্টে খেলাটা ঝক্কির মনে করলেও বিসিবি ৫০ ওভারের টুর্নামেন্ট ডিপিএলে তার খেলাটাকে ততটাও ঝক্কির মনে করেনি। শুধু তাই নয়, জিম্বাবুয়ের মতো খর্ব শক্তির দলের বিপক্ষেও তাসকিনকে টানা খেলানোর যুক্তি খুঁজে পাচ্ছেন না দেশের ক্রিকেট সমর্থকরা। চট্টগ্রাম তৃতীয় ম্যাচে সিরিজ নিশ্চিত হওয়ার পরও ঢাকা পর্বের প্রথম ম্যাচে বিশ্রাম দেওয়া হয়নি তাসকিনকে। এমনকি ইনজুরিতে না পড়লে পঞ্চম টি২০তেও তার খেলাটা নিশ্চিত ছিল। একজন ইনজুরিপ্রবণ পেসারকে অগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচেও বিশ্রাম দিতে না পারাটা টিম ম্যানেজমেন্টের দুর্বলতা নাকি উদাসীনতা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এফটিপিতে থাকায় জিম্বাবুয়ে সিরিজকে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি টুর্নামেন্ট বলতে নারাজ বিসিবি সভাপতি পাপন। তারপরও এমন দুর্বল প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ঝুঁকি নিতে ভয় পাওয়াকে সহজভাবে নিচ্ছেন না দেশের ক্রিকেট সমর্থকরা। নিউজিল্যান্ডের মতো দল পাকিস্তানের মতো প্রতিপক্ষের বিপক্ষে আনকোরা দল খেলিয়েছে, আয়ারল্যান্ড তাদের সেরা বোলারকে আইপিএলে রেখে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ খেলতে নেমেছে। অথচ বাংলাদেশ বাছাই পর্বে বাদ পড়া দলের বিপক্ষেও সেরা একাদশ ছাড়া নামতে রাজি নয়। এমন দুর্বল আত্মবিশ্বাস ও ভিতু মানসিকতা নিয়ে টাইগাররা কতটা আগাবে সে প্রশ্ন জাগাটাই স্বাভাবিক।