বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১

খাদের গভীর থেকে মাথা তুলে তাকানোর চেষ্টা জিম্বাবুয়ের

ক্রীড়া ডেস্ক
  ০৮ মে ২০২৪, ০০:০০
খাদের গভীর থেকে মাথা তুলে তাকানোর চেষ্টা জিম্বাবুয়ের

ক্রিকেটে জিম্বাবুয়ে জৌলুশপূর্ণ সময়টা পার করে ১৯৯৭ সাল থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত। ওই সময় এক অস্ট্রেলিয়া বাদে প্রত্যেকটা টেস্ট পেস্নয়িং নেশনের বিপক্ষেই জয় ছিল তাদের। এরপর ধীরে ধীরে উন্নতির গ্রাফ নিচ দিকে ধাবিত হতে থাকে, জিম্বাবুয়ে এক সময় পড়ে যায় খাদের গভীরে। সেখান থেকে এখন একটু একটু করে মাথা তুলে তাকানোর চেষ্টা তাদের।

১৯৮০ সালে স্বাধীনতা পাওয়ার পরের বছর জিম্বাবুয়ে আইসিসির সহযোগী সদস্যের মর্যাদা পায়। এরপর ১৯৮৩, ১৯৮৭ ও ১৯৯২ বিশ্বকাপেও অংশ নেয় তারা। ওই আসরগুলোতে প্রত্যাশাকে ছাপিয়ে যেতে না পারলেও বেশ কয়েকটি চমক উপহার দেয় তারা। ১৯৯২ সালেই জিম্বাবুয়ে পায় টেস্ট স্ট্যাটাস।

১৯৯৭ সাল থেকে শুরু হয় জিম্বাবুয়ের স্বর্ণযুগ। এ সময় দলে ছিলেন অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার, হেনরি ওলোঙ্গা, গ্রান্ট ফ্লাওয়ার, অ্যান্ডি বিস্নগনট, হিথ স্ট্রিক, মারে গুডউইন, অ্যালিস্টার ক্যাম্পবেল, ডেভ হটন, পল স্ট্রং, এডো ব্রান্ডেস ও নেইল জনসনের মতো পেস্নয়াররা। তাদের দাপটে পাখা গজায় জিম্বাবুয়ের। দলটি হারায় ভারত, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলংকা, বাংলাদেশের মতো দলগুলোকে। ২০০৩ সালের পর ধীরে ধীরে রাজনীতির কালো ছায়া পড়তে শুরু করে জিম্বাবুয়ের ওপর।

জিম্বাবুয়ের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রবার্ট মুগাবের শাসনামলে দেশে বিশৃঙ্খলা, দুর্নীতি, সহিংসতা বাড়তে থাকে। যার প্রভাব এসে পড়তে শুরু করে ক্রিকেট দলেও। ফলস্বরূপ দেশের গণতন্ত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলেন অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার ও হেনরি ওলোঙ্গা। ২০০৩ সালে দেশের মাটিতে আয়োজিত বিশ্বকাপের এক ম্যাচে 'গণতন্ত্রের মৃতু্য'র প্রতিবাদে হাতে কালো আর্মব্যান্ড পরে খেলতে নামেন তারা। বাকি ম্যাচগুলোতেও একই কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন তারা। এরপর দল থেকেই বের করে দেওয়া হয় তাদের।

২০০৪ সালে অধিনায়ক হিথ স্ট্রিককে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট বরখাস্ত করে। সরকারের উপর্যুপরি এসব প্রভাবের কারণে ১৪ জন পেস্নয়ার দলত্যাগ করেন। এরপর সরকারের একের পর এক বৈরি সিদ্ধান্তে বিপদের মুখোমুখি হন ক্রিকেটাররা। অনেকের বেতন-ভাতাদি আটকে গিয়েছিল, নিষিদ্ধ হয়েছিল জিম্বাবুয়ের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট টুর্নামেন্ট। ক্রিকেটারদের অনেকে পরে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন, ফ্লাওয়ার ও ওলোঙ্গা স্থায়ী হন ইংল্যান্ডে।

বন্ধ হয়ে যায় জিম্বাবুয়ের টেস্ট ক্রিকেট। ২০১১ সালে এ আঙিনায় ফিরে তারা, রিবুককে স্পন্সর করে চালু প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট। সরকারের প্রভাব ছিল, চলছিল আর্থিক টানাপড়েনও, যে কারণে পুরোদমে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার শক্তি ছিল না তাদের মধ্যে। তারা কোয়ালিফাই করতে পারেনি ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপেও। একই বছর সরকারের হস্তক্ষেপের কারণে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটকে বরখাস্ত করে আইসিসি।

নিষেধাজ্ঞা থেকে ফিরে ২০২২ টি২০ বিশ্বকাপ বাছাইয়ে চমক দেখায় জিম্বাবুয়ে। সিকান্দার রাজার ওপর ভর করে বাছাইয়ে প্রথম হয়ে বিশ্বকাপে জায়গা করে নেয় তারা। 'বি' গ্রম্নপে জায়গা করে নিয়ে জিম্বাবুয়ে গ্রম্নপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে সুপার টুয়েলভে উঠে। যদিও সুপার টুয়েলভের ২ নম্বর গ্রম্নপে সবার শেষ দল হিসেবে প্রতিযোগিতা শেষ করে তারা।

মাথা তুলে তাকানোর আপ্রাণ চেষ্টা থাকলেও এ বছরের টি২০ বিশ্বকাপে জায়গা করে নিতে পারেনি জিম্বাবুয়ের।

আফ্রিকা অঞ্চলের বাছাই থেকে তাদের পেছনে ফেলে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের টিকিট পেয়েছে উগান্ডা, তারা সঙ্গী হয়েছে নামিবিয়ার।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে