১, ২৩, ১২ জিম্বাবুয়ে সিরিজের প্রথম তিন ম্যাচে লিটন দাসের রান। খারাপ সময় যেন কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না টাইগার এই ওপেনারের। অন্যদিকে ছন্দে নেই টাইগার অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তও। ২১, ১৬ ও ৬। তিন ম্যাচে মাত্র ৪৩ রান। বিশ্বকাপের আগমুহূর্তে ঘরের মাঠে চেনা কন্ডিশনে দলের দুই বিশ্বস্ত ব্যাটসম্যানের ব্যাটে রানের দুর্ভিক্ষ নিশ্চিতভাবেই চিন্তায় ফেলছে টিম ম্যানেজমেন্টকে।
প্রথম বলেই বাউন্ডারি। লিটন দাসের সুদিন এলো বলে! না, ভুল। আসেনি। রানের চেয়ে বলের পার্থক্য বেশি, পাওয়ার পেস্নর সুবিধা কাজে লাগাতে পারছেন না। টানা দুবার স্কুপ করতে গিয়ে ব্যর্থ, তৃতীয় বলেও ক্ষান্ত হননি। জায়গা থেকে সরে বেস্নসিং মুজরাবানিকে স্কুপ করতে গিয়ে বোল্ড! ঊল-ব্যাটে ঠিকই লেগেছে, কিন্তু বাউন্ডারিতে যায়নি, সরাসরি আঘাত করে স্ট্যাম্পে। লিটনকে বরাবরের মতো ফিরতে হলো ব্যর্থতার গস্নানি নিয়ে। তার ব্যাট থেকে আসে ১৫ বলে ১২। আগের দুই ম্যাচের রান যথাক্রমে ১ ও ২৩।
একই মিছিলে এবার যোগ দিলেন খোদ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। তার স্ট্রাইক রেট নিয়ে যখন আলোচনা চলছে, তখন ক্রিজে এসে বাউন্ডারি হাঁকালেন, বেশিক্ষণ থাকতে পারলেন না। নিজের চতুর্থ বলে বোল্ড হলেন। শান্তর ব্যাট থেকে আসে ৪ বলে ৬ রান। আগের দুই ম্যাচে রান যথাক্রমে ১৬ ও ২১।
সাগরিকার পাড়ে তৃতীয় টি২০তে টস হেরে ব্যাটিং করতে নামে বাংলাদেশ। আগের দুই টি২০তে টস জিতে ফিল্ডিং নেওয়া শান্ত জানিয়েছেন, এই ম্যাচে তারা ব্যাটিং করতে চান। হয়তো নিজেদের দেখার জন্য, কিন্তু সেই দেখা তো হলো না। বরবারের মতো ব্যর্থ টপ অর্ডার।
টি২০তে বিস্ফোরক ব্যাটারদের কাতারে শান্তকে এমনিতে ফেলা যায় না। একটা দলের সবাইকে বিস্ফোরক ব্যাটার হওয়ার প্রয়োজনও নেই। প্রান্ত ধরে অন্তত দুই-একজন অ্যাংকর ভূমিকা পালন করতে পারেন। বাংলাদেশ দলে সেই ভূমিকা হয়তো শান্তর। তবে আধুনিক ক্রিকেটে সেই ভূমিকা পালন করতে গিয়েও খুব বেশি মন্থর হওয়ার সুযোগ নেই। রানের চাকা স্থবির করে চাপ বাড়ালে সেটা অনেক সময়ই সামলানো কঠিন হয়ে যায়। পুরো ব্যাটিং-লাইনআপেও যার প্রভাব পড়তে পারে। শান্ত এই ভূমিকায় মন্থর তো বটেই, ভীষণ অধারাবাহিকও।
সংক্ষিপ্ত সংস্করণের ক্রিকেটে সাম্প্রতিক সময়ের ছন্দও তাকে প্রশ্ন তৈরি করেছে। গত ১২ ইনিংসে শান্তর ব্যাট থেকে এসেছে কেবল একটা ফিফটি। শ্রীলংকার বিপক্ষে সিলেটে ৩৮ বলে অপরাজিত ৫৩ রান করেছিলেন তিনি। ওই ইনিংস ছাড়া গত এক বছরে টি২০তে আগে-পরে তার বলার মতো রান নেই। এ সময় স্রেফ ১৮.৫০ গড় আর ১০৬.৩২ স্ট্রাইকরেটে মোটে ১৮৫ রান করেছেন বাঁ হাতি ব্যাটার। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম দুই ম্যাচেও হাসেনি শান্তর ব্যাট। প্রথম ম্যাচে রান তাড়ায় চাপ বাড়িয়ে ২৪ বলে ২১ করে তিনি আউট হন। দ্বিতীয় ম্যাচেও একই পরিস্থিতিতে নেমে ১৫ বলে করেন ১৬ রান। তৃতীয় ম্যাচে মাত্র ৬!
লিটন-শান্তর বিদায়ের পর একই পথ ধরেন এই সিরিজে অভিষেক হওয়া তানজিদ হাসান তামিম। ১টি করে চার-ছয় হাঁকানোর পরও তার ব্যাট থেকে আসে ২১ বলে ২০। স্ট্রাইক রেট একশ'র নিচে। ধীরগতির ব্যাটিংয়ের কারণে পাওয়ার পেস্নতে বাংলাদেশের আসে ২ উইকেটে ৪২ রান। টি২০তে যেটি মানানসই নয়, সেখানে বাংলাদেশ এমন রান করছে নিয়মিত।
৬০ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর তাওহিদ হৃদয়-জাকের আলী অনিকের ব্যাটে এগোতে থাকে বাংলাদেশ। এরপর জিম্বাবুয়ের বোলারদের হতাশ করে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন হৃদয় ও জাকের। ৩৪ বলে ২ ছক্কা ও ২ চারের মারে আন্তর্জাতিক টি২০ ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি তুলে নেন হৃদয়। আগের দুই ম্যাচে ৩৩ ও ৩৭ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ৩৮ বলে ৩ চার ও ২ ছক্কায় ৫৭ রান করে ইনিংসের ১৯তম ওভারের তৃতীয় বলে মুজারাবানির শিকার হন হৃদয়। জিম্বাবুয়ান পেসারের ইয়র্কারের লাইন মিস করে বোল্ড হন তিনি। তাতে জাকেরের সঙ্গে ভাঙে ৮৭ রানের জুটি। এক বল বিরতি দিয়ে বিদায় নেন জাকেরও। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফিফটির খুব কাছে গিয়েও হাতছাড়া করেন তিনি। ৩৪ বলে ৩ চার ও ২ ছক্কায় ৪৪ রান করে মুজারাবানির বলে বোল্ড হন তিনি। নির্ধারিত ২০ ওভারে পাঁচ উইকেটে ১৬৫ রান সংগ্রহ করেছে বাংলাদেশ।