সিকান্দার রাজার কাছে এবারের সফরটা অন্যরকম
প্রকাশ | ০৩ মে ২০২৪, ০০:০০
ক্রীড়া প্রতিবেদক
সিকান্দার রাজা জিম্বাবুয়ের হয়ে খেললেও তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা পাকিস্তানে। দেশটির হয়ে ক্রিকেট খেলার সুযোগ না পেয়ে এক সময় পাড়ি জমান জিম্বাবুয়েতে। এরপর থেকে দেশটির হয়েই খেলছেন তিনি। বর্তমানে জিম্বাবুয়ের টি২০ দলের অধিনায়কও তিনি।
\হসেই জিম্বাবুয়ে টেস্ট খেলুড়ে দেশ হয়েও এবার ২০ দলের টি২০ বিশ্বকাপ খেলতে পারছে না। এতে অবশ্য নিজেদের দায়টাই বেশি। বাছাইপর্বে উগান্ডার সঙ্গে হেরে দর্শক হয়ে থাকতে হচ্ছে তাদের। জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক সিকান্দার রাজার মতে তা এতই যন্ত্রণার যে খেলা ছাড়ার পরও এটা অনেকদিন পোড়াবে।
আগামী দুই বছরের মধ্যে জিম্বাবুয়ের সামনে কোন আইসিসি ইভেন্ট নেই। সিকান্দার রাজা, শন উইলিয়ামস, ক্রেইগ আরভিনদের মতো অভিজ্ঞ তারকাদের সামনেই তাই কিছু নেই। তবে রাজা মনে করেন, তারা এখনো খেলছেন আগামী প্রজন্মের কথা ভেবেই, একটা ঐতিহ্যের ধারা তৈরি করে বিদায় নিতে চান। বিদায়ের সুরও তার কণ্ঠে পরিষ্কার। এবার সফরে নিয়ে এসেছেন স্ত্রী, সন্তানদের। তাদের বাংলাদেশে আনার পেছনেও শেষের একটা ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক সিকান্দার রাজা বলেন, 'সঠিক মাইন্ডসেট নিয়ে, খুব ভালো প্রস্তুতি নিয়ে আমরা এই সিরিজ খেলতে এসেছি। আমরা জয়ের জন্যই বাংলাদেশে এসেছি। আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে যদি বলি ৩-০, ৪-০, ৫-০ ব্যবধানে জিতব, ব্যাপারটা বাংলাদেশের প্রতি অসম্মান করা হবে। আবার যদি বলি বাংলাদেশ জিতবে, তাহলে এটা আমার দলকে অসম্মান করা হয়।'
সিকান্দার রাজার ভাষ্য, 'আমার মনে হয় তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। বাংলাদেশের সামনে বিশ্বকাপ আছে, অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যাপার আছে। ইনশাআলস্নাহ, দুই দলের জন্যই ভালো সিরিজ হবে। বাংলাদেশ শ্রীলংকার কাছে সর্বশেষ সিরিজ হেরে গেলেও একটি ম্যাচ জিতেছিল। তাদের দলে ব্যাটিং ইউনিটের অনেক গভীরতা আছে। রিয়াদ ভাই ভালো খেলেছে, জাকের ভালো খেলেছে। তরুণরাও ভালো করছে।'
বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই রাজার কাছে বিশ্বকাপে না থাকার প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হয়। রাজা জানান, কতটা বেদনার তাদের এই সময়, 'আমি জানতাম প্রশ্নটা আসবে। আমার মনে হয় এটা এমন কিছু যা সবসময়ই বেদনাদায়ক। শুধু যখন খেলছেন তখন না, যখন অবসর নিবেন তখনো। ক্রিকেটার, ক্রিকেট ম্যানেজমেন্ট সবার জন্যই বেদনাদায়ক যে আমরা বিশ্বকাপে নেই। শুধু এখনকার জন্য না, এটা এমন একটা বিষয় যা দীর্ঘদিন পোড়াবে।'
২০২৩ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বেও যন্ত্রণাদায়ক সমাপ্তি হয় জিম্বাবুয়ের। ২০২৩, ২০২৪ পর পর দু'টি আইসিসি ইভেন্টে খেলতে পারছে না তারা। ২০২৭ সালে নিজেদের মাঠে বিশ্বকাপের আগে ২০২৬ সালে টি২০ বিশ্বকাপ আছে। কিন্তু ততদিনে ৩৮ পেরুনো রাজা, আরভিন। ৩৭ পেরুনো উইলিয়ামসের খেলা চালিয়ে
যাওয়া কঠিন। কোন প্রেরণায় খেলছেন এই প্রসঙ্গ আসা
তাই স্বাভাবিক।
অভিজ্ঞ রাজা এখানে মেলে ধরলেন আগামী প্রজন্মকে নিয়ে তার চিন্তার কথা, 'আমি সব সময় বলি ক্রিকেট খেলার জন্য আমার প্রেরণা দরকার হয় না। প্রেরণা ভেতর থেকেই আসে এবং দলের সঙ্গে কথা বলে আসে। আমরা অনুপ্রাণিত। বিশ্বকাপ আমাদের একটা লক্ষ্য ছিল যা অর্জন করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের অনেক বড় দায়িত্ব আছে দেশের জন্য। ছোটরা যারা আছে, যারা এই খেলাটা খেলছে, যারা এখানে ক্যারিয়ার গড়তে চায় তাদের জন্য (প্রেরণা খুঁজছি)। বৃহৎ দৃষ্টিকোণ থেকে যদি বাইরে থেকে কোনো প্রেরণা নিতে হয় তাহলে ওই শিশুদের থেকে নেব যারা আগামীতে খেলবে, আগামীর খেলাধুলার কথা যদি ভাবি তাহলে পর্যাপ্ত অনুপ্রেরণা আছে। এটা মাথায় রেখে যন্ত্রণা সরিয়ে এক ধাপ আগাতে পারি। খেলাটাকে বিকশিত করতে পারি। একটা ঐতিহ্য তৈরি করে যেতে পারি।'
ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে বাংলাদেশে অনেকবারই এসেছেন রাজা। এবারের আসাটা তার ভিন্ন। কেন জানি জিম্বাবুয়ের অধিনায়কের মনে হচ্ছে হয়ত এবার শেষবার এলেন। তার সঙ্গে নিয়ে এসেছেন স্ত্রী ও দুই সন্তানকে। বাংলাদেশে যে ভালোবাসা পেয়ে এসেছেন পরিবারকে তা দেখাতে চান তিনি। এই দেশ থেকে নানাভাবে সমৃদ্ধ হওয়ায় কৃতজ্ঞতাও জানালেন রাজা, 'আমি বাংলাদেশে ঘন ঘন আসতাম। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের সূচি, আমার জীবন বাংলাদেশে খুব বেশি থাকতে দিচ্ছে না। আমি জানি না জীবন কোনদিকে যাবে আগামীতে। আমি যদি বাংলাদেশে শেষবার আসি, আমি চাইছিলাম আমার স্ত্রী, কন্যা, পুত্রদের নিয়ে আসব। তারা দেখুক এখানে আমি কতটা আতিথ্য, ভালোবাসা পেয়ে আসছিলাম। আমার প্রথম ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ বাংলাদেশে, যেটা ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ। দ্বিতীয়টাও বাংলাদেশে, যেটা বিপিএল। আমার আন্তর্জাতিক অভিষেক বাংলাদেশের বিপক্ষে। বাংলাদেশ জিম্বাবুয়ের খুব ভালো বন্ধু। আমরা আপনাদের আতিথেয়তা দিই, আপনারাও দেন নিয়মিত।'
'আমার ক্যারিয়ারের অনেক কিছু বিকশিত হওয়ার পেছনে, খেলোয়াড় হিসেবে সমৃদ্ধ হওয়ার পেছনে বাংলাদেশের সফরগুলো কাজে দিয়েছে। আমি তিনটা বিপিএল, তিনটা ডিপিএল খেলেছি। আমি জানি না আমি আর আসব কিনা। কাজেই এবার ভেবেছি এটাই সেরা সময় আমার পরিবারকে এখানে নিয়ে আসার। আমি যতটা যত্ন এখানকার খেলোয়াড় কর্মকর্তাদের কাছ থেকে পেয়েছি সেটা আমি শেষবার তাদের দেখাতে চাই। আলহামদুলিলস্নাহ তারা খুশি। খুব ভালো যাচ্ছে। ধন্যবাদ।'