নারী আম্পায়ার নয়, দুই ক্লাবের আপত্তি অভিজ্ঞতায়

প্রকাশ | ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
সাথিরা জাকির জেসি
সাথিরা জাকির জেসি। বাংলাদেশের প্রথম আন্তর্জাতিক নারী আম্পায়ার তিনি। আগামী জুলাইয়ে শ্রীলংকায় বসবে নারী এশিয়া কাপ। টি২০ সংস্করণের এই আসরে আম্পায়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন জেসি। কিন্তু তাকে নিয়েই এক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে গেছে দেশের ক্রিকেটে। ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিমন ক্রিকেট লিগের ম্যাচে নারী আম্পায়ার সাথিরা জাকির জেসিকে নিজেদের ম্যাচে চায়নি মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব ও প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব। আনুষ্ঠানিকভাবে আপত্তি না জানালেও মৌখিকভাবে নিজেদের অনীহা প্রকাশ করার কথা স্বীকার করেছে তারা। গত বৃহস্পতিবার মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ডিপিএলে সুপার লিগে মুখোমুখি হয় এই দুদল। এই ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে দায়িত্ব পান এ আই এম মনিরুজ্জামান ও সাথিরা জাকির জেসি। ম্যাচটি শুরুতে আলোচনায় আসে মুশফিকুর রহিমের আউট ঘিরে। বাউন্ডারি লাইনে ক্যাচ হলেও ফিল্ডারের পা লাইন স্পর্শ করায় বিতর্কে ম্যাচ থেমে ছিল ১৩ মিনিট। তবে এ ক্ষেত্রে মাঠের আম্পায়ারের দিকে আঙুল তোলার সুযোগ ছিল না, সেটা করেওনি প্রাইম ব্যাংক। টিভি রিপেস্ন না থাকায় ফিল্ডারের সততার উপরই নির্ভর করতে হয় আম্পায়ারদের। তবে ম্যাচের পরদিন জানা যায় নারী আম্পায়ার নিয়েই আপত্তি ছিলো দুই দলের। বিসিবির আম্পায়ার কমিটির চেয়ারম্যান ইফতেখার আহমেদ মিঠুও গণমাধ্যমকে এই খবর জানিয়েছিলন, 'হ্যাঁ, বিসিবি নারী আম্পায়ারকে দায়িত্ব দেওয়ায় তারা অখুশি ছিল। কিন্তু ম্যাচ চলেছে।' 'তারা মন্তব্য করে নিজেদের অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে। তারা আমার কাছে কোন অভিযোগ করেনি, সিসিডিএমকে বলেছে। তবে এটা দুর্ভাগ্যজনক যে আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রীও একজন নারী। আমাদের এই ধরনের নিয়োগকে উৎসাহ দেওয়া উচিত।' এই ব্যাপারে মোহামেডানের ক্রিকেট সমন্বয় তরিকুল ইসলাম টিটু জানান, মৌখিকভাবে নিজেদের অখুশি মনোভাব প্রকাশ করেন তারা, 'আমরা আসলে আপত্তি তুলিনি। আমরা এমনিতে বলাবলি করছিলাম যে ম্যাচের মেরিট অনুযায়ী তো এত বড় ম্যাচে জেসি আম্পায়ার হতে পারে না। আমরা বলছিলাম এত বড় ম্যাচে আরও ভালো আম্পায়ার দরকার ছিল। আমরা অফিসিয়ালি অভিযোগ করিনি, অফিসিয়ালি অভিযোগ করব কেন। আমরা ওরকমভাবে রিপোর্ট টিপোর্ট করিনি।' টিটুর মতে জেসি নতুন হওয়াতেই আপত্তি ছিল তাদের। প্রাইম ব্যাংক ম্যানেজার শিকদার আবুল হাশেম কঙ্কনের কথায় ইঙ্গিত মেলে তাদের আপত্তি নারী আম্পায়ার হওয়াতেই ছিলো, 'মহিলা আম্পায়ার দেবে এটা তো জানি না আমরা। বাংলাদেশে মহিলা আম্পায়ারের অভিজ্ঞতা কেমন এটা তো আমরা সবাই জানি। আপত্তি করি না। যেহেতু এটা বড় ম্যাচ, এখানে নিয়মিত যারা করে তাদের আশা করছিলাম। মহিলা আম্পায়ার দেখেন যেটা এলবিডবিস্নউ সেটা দেয় নাই, যেটা হয় নাই সেটা দিছে। আমরা ম্যাচ শুরুর আগেও কিছু বলিনি। এমনিতে নিজেরা আলাপ করেছি। সিসিডিএমের কাউকে বলিনি। নিজেরাই আলাপ করেছি। অনভিজ্ঞতার জন্যই।' এই ম্যাচে পুরুষ আম্পায়ার যিনি ছিলেন সেই মনিরুজ্জামানের বিপক্ষেও অনেক সময় প্রশ্ন উঠেছে। এছাড়া পুরুষ আম্পায়ারদেরও নানান সময়ে এলবিডবিস্নউ নিয়ে বিতর্কিত সিদ্ধান্ত দেওয়ার নজির আছে। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে (ডিপিএল) আম্পায়ার সাথিরা জাকির জেসির দায়িত্ব পালন নিয়ে চলমান বিতর্ক নিয়ে গণমাধ্যমে নেতিবাচকভাবে পরিবেশিত তথ্যের জেরে হতাশা প্রকাশ করেছে ক্রিকেটারদের সংগঠন-ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (কোয়াব)। রোববার কোয়াবের সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত পালের পাঠানো বিবৃতিতে এই বিষয়ে আলোকপাত করা হয়। বিবৃতিতে কোয়াব জানিয়েছে, ক্রিকেটাররা জেসিকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছে। গণমাধ্যমে অসত্য, বিভ্রান্তিকর নেতিবাচক সংবাদ পরিবেশনে ক্রিকেটাররা হতাশ বলেও এতে জানানো হয়। যাকে নিয়ে এত ঘটনা সেই সাথিরা জাকির জেসিও জেনেছেন এ বিষয়ে। গণমাধ্যমে নিজের খারাপ লাগার কথা বলেছেন। অযোগ্য হলে বিসিবি কখনও তাকে এই দায়িত্ব দিত না বলে মনে করেন তিনি। অন্যান্য টুর্নামেন্টে আম্পায়ারিং করে আসলেও এই প্রথম বাজে অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন তিনি। তবে এসব নিয়ে পড়ে থাকতে চান না জেসি। সামনের দিকে চোখ রেখে চাপহীনভাবে দায়িত্ব পালন করে যেতে চান তিনি।