বাংলাদেশ প্রিমিয়ার ফুটবল লিগে আরও একটি বড় জয় পেয়েছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংস। শুক্রবার মুন্সীগঞ্জের বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লে.মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে কিংসরা ৫-০ গোলে হারায় চট্টগ্রাম আবাহনীকে। জোড়া গোল করেন কিংসের ফরোয়ার্ড রাকিব হোসেন। ২৮ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষেই থাকল কিংস। একই দিনে গোপালগঞ্জের শেখ ফজলুল হক মনি স্টেডিয়ামে প্রতিশোধের ম্যাচে ফর্টিস এফসির সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করে ঢাকা আবাহনী। তবে এই ১ পয়েন্ট পেতেই অনেক ঘাম ঝড়াতে হয়েছে ঐতিহ্যবাহীদের। ইনজুরি টাইমের এক গোলে কোনমতে পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়ে আবাহনী। অন্যদিকে রাজশাহীর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্টেডিয়ামে ব্রাদার্স ইউনিয়নকে ২-০ গোলে হারায় রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটি।
শুক্রবার মুন্সীগঞ্জে ম্যাচের প্রথম মিনিটেই কর্নার আদায় করে নেয় বসুন্ধরা। বা প্রান্ত থেকে রবসন রবিনহোর কর্নার বক্সে ক্লিয়ার হয়। তবে ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটেই লিড নেয় কিংস। প্রায় মাঝ মাঠ থেকে সতীর্থ রিমন হাসানের বাড়িয়ে দেয়া বল বক্সে জটলার মধ্যে পেয়ে প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে ডান পায়ের দারুণ শটে লক্ষ্যভেদ করেন কিংসের ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড ডরিয়েলটন গোমেজ (১-০)। ১২ মিনিটে পেনাল্টি পায় বসুন্ধরা। রবিনহোর স্পট কিক ফেরাতে ব্যর্থ হন চট্রলার গোলরক্ষক আশরাফুল ইসলাম রানা (২-০)। ১৯ মিনিটে নিজেদের তৃতীয় গোলটিও আদায় করে নেয় অস্কার ব্রম্নজনের শিষ্যরা। মাঝ মাঠ থেকে দলীয় অধিনায়ক রবসন রবিনহোর বাড়িয়ে দেয়া বল নিয়ে দারুণ দক্ষতায় চট্টগ্রাম আবাহনীর বক্সে ঢুকে পড়েন ফরোয়ার্ড রাকিব হোসেন। তাকে বাধা দিতে পেছনে ছুটছিলেন প্রতিপক্ষের এক ডিফেন্ডার। বল ক্লিয়ার করতে পোস্ট ছেড়ে সামনে এগিয়ে এসেছিলেন গোলরক্ষক রানাও। তবে কেউই ঠেকাতে পারলেন না রাকিবকে। রানার সামনে থেকেই বা পায়ে দর্শণীয় শটে লক্ষ্যভেদ করেন রাকিব (৩-০)। ২২ মিনিটে পোস্ট লক্ষ্য করে শট নেন রবিনহো। তবে বল চলে যায় বারের বেশ ওপর দিয়ে। ২৭ মিনিটে বক্সের মাথা থেকে করা ডরিয়েলটন গোমেজের শট ছিল নিশ্চিত গোল। কিন্তু বল ফিস্ট করে ডরিয়েলটনকে হতাশ করেন রানা। ২৮ মিনিটে চট্টগ্রাম আবাহনীর উজবেকিস্তানের ফরোয়ার্ড সাগদুলস্নায়েভের স্পট কিক কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন জিকো। কর্নার কাজে লাগিয়ে গোলের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারেনি চট্রলা। ৪৫ মিনিটে ডান প্রান্ত থেকে রবিনহোর কর্নার হেডে ক্লিয়ার করেন প্রতিপক্ষের দুই ডিফেন্ডার। প্রথমার্ধের ইনজুরি টাইমের শুরুতেই গোলের হালি পূর্ণ করে কিংস। (৪৫+১ মিনিটে)। মাঝ মাঠ থেকে উজবেক ডিফেন্ডার ববুরবেগের দ্রম্নত গতির পাসে বল বুঝে নিয়ে চট্টগ্রাম আবাহনীর বক্সে ঢুকে পড়েন তারই স্বদেশী মিডফিল্ডার আসরর গফুরভ। এবারও পোস্ট ছেড়ে সামনে এগিয়ে এসেছিলেন রানা। তবে শেষ রক্ষা করতে পারেননি। ততক্ষণে বল জালে পাঠিয়ে দিয়েছেন গফুরভ (৪-০)। এগিয়ে থেকেই বিশ্রামে যায় বসুন্ধরা।
৫২ মিনিটে নিজেদের মধ্যে বল দেয়া-নেয়া করতে করতে আক্রমণে যায় কিংস। বক্সের ডান প্রান্ত থেকে ডরিয়েলটনের যোগান দেয়া বলে ফাইনাল টাচে নিজের দ্বিতীয় ও দলের পঞ্চম গোলটি আদায় করে নেন রাকিব (৫-০)। ৭১ মিনিটে বক্সের ভেতর থেকে দারুণ ভলি নিয়েছিলেন চট্টগ্রাম আবাহনীর ফরোয়ার্ড আসাদুল ইসলাম সাকিব। তবে অল্পের জন্য বল জড়ায়নি জালে। ৮২ মিনিটে একক প্রচেষ্টায় বল নিয়ে বসুন্ধরার বক্সে ঢুকে শট নিয়েছিলেন মান্নাফ রাব্বি। প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারের পায়ে লেগে বল ফেরত আসে। শেষ পর্যন্ত আর ম্যাচে ফেরা হয়নি বন্দর নগরীর দলটির।
অন্যদিকে গোপালগঞ্জে ফর্টিসের সঙ্গে লড়াই করে কোন মতে এক পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছেড়েছে ঢাকা আবাহনী। লিগে ফর্টিস যেনো বড় প্রতিপক্ষ হয়ে দাড়িয়েছে আকাশী-নীলদের। প্রথম পর্বে এই ফর্টিসের কাছেই প্রথম হারের তিক্ত স্বাদটি পেয়েছিল আবাহনী। শুক্রবার ম্যাচের প্রথমার্ধে কোন গোল করতে পারেনি ঢাকা আকাশী-নীলরা। ফর্টিসও গোলমুখ খুলতে ব্যর্থ হওয়াতে প্রথমার্ধ ছিল গোলশূন্য। ম্যাচের ৬১ মিনিটে ইউক্রেনের মিডফিল্ডার হ্যারিসন ভ্যালেরীর গোলে লিড নেয় ফর্টিস (১-০)। ইনজুরি টাইমের শেষ দিকে এসে (৯০+৫ মিনিট) একটি গোল পায় আবাহনী। গোলটি করেন আবাহনীর সেন্ট ভিনসেন্টের ফরোয়ার্ড কর্নেলিয়াস স্টুয়ার্ট (১-১)। ইনজুরি টাইমের এই গোলে কোনমতে পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়ে আবাহনী।
একই দিনে রাজশাহীতে ব্রাদার্স-রহমতগঞ্জের লড়াইয়ে ৪৪ মিনিটে মোস্তফা খারাবার গোলে লিড নেয় রহমতগঞ্জ (১-০)। ৮৫ মিনিটে রকির যোগান দেয়া বলে লক্ষ্যভেদ করে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন রহমতগঞ্জের ঘানাইয়ান ডিফেন্ডার আরনেস্ট বুয়েটাং (২-০)। এই গোলেই জয় নিশ্চিত হয় পুরনো ঢাকার দলটির।