টেস্ট ক্রিকেটের আঙিনায় প্রায় দুই যুগের বিচরণে একটি জায়গায় শূন্যতা ছিল বাংলাদেশ ক্রিকেটের। অবশেষে সেই অপেক্ষার অবসান হলো। দেশের প্রথম আম্পায়ার হিসেবে আইসিসি এলিট প্যানেলে জায়গা করে নিলেন শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদ সৈকত। সাবেক এই বাঁহাতি স্পিনার অনেক দিন ধরেই দেশের সেরা আম্পায়ার। আইসিসি আম্পায়ারদের 'ইমার্জিং' প্যানেলের ওপরের দিকে ছিলেন তিনি বেশ কিছু দিন ধরে। যেটির মানে, এলিট প্যানেলের দুয়ারে কড়া নাড়ছিলেন তিনি। অবশেষে সেই দুয়ার তার জন্য খুলে গেল।
সম্প্র্রতি আম্পায়ার মারাইস ইরাসমাস অবসরে যাওয়ায় এলিট প্যানেলে সৈকতের অন্তর্ভুক্তির সম্ভাবনা বেড়ে যায়। আইসিসি বৃহস্পতিবার বিবৃতি দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জানায় তাকে শীর্ষ আম্পায়ারদের কাতারে তুলে নেওয়ার খবর। আইসিসির একটি নির্বাচক কমিটি তাকে এই প্যানেলে তুলে আনে, যে কমিটিতে আছেন আইসিসি মহাব্যবস্থাপক (ক্রিকেট) ওয়াসিম খান, সাবেক ভারতীয় ব্যাটসম্যান ও ধারাভাষ্যকার সাঞ্জায় মাঞ্জরেকার, এলিট প্যানেলের সাবেক আম্পায়ার নিউজিল্যান্ডের টনি হিল ও পরামর্শক স্থানাপন্ন বিশেষজ্ঞ মাইক রাইলি।
বাংলাদেশের প্রথম আম্পায়ার হিসেবে ওয়ানডে বিশ্বকাপের ম্যাচ পরিচালনা করেছেন সৈকত। অস্ট্রেলিয়ায় টেস্ট ম্যাচে দাঁড়িয়েছেন এই দেশের প্রথম আম্পায়ার হিসেবে। এলিট প্যানেলেও বাংলাদেশের প্রথম প্রতিনিধি হওয়ার ইতিহাস গড়াটাও তার অবধারিতই ছিল। আইসিসির প্রধান নির্বাহী জেফ অ্যালারডাইস বিবৃতিতে শুভেচ্ছা জানান সৈকতকে, 'আইসিসি এলিট প্যানেলে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদ সৈকতকে অভিনন্দন জানাই এবং বাংলাদেশের প্রথম আম্পায়ার হিসেবে এই প্যানেলে জায়গা পাওয়ার অর্জনকে অভিবাদন জানাই। আন্তর্জাতিক ম্যাচে ও আইসিসি টুর্নামেন্টগুলোয় বহু বছরের ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের কারণে এই স্বীকৃতি তার দারুণভাবেই প্রাপ্য।'
নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের নিয়মিত মুখ ছিলে সৈকত। 'এ' দল ও জাতীয় দলে খেলেছেন, সেই সময়ের বিশ্বকাপ বাছাইয়ের আসর আইসিসি ট্রফিতে অংশ নিয়েছেন। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কখনো খেলার সুযোগ পাননি। খেলোয়াড়ী জীবন শেষে নাম লেখান আম্পায়ারিংয়ে। ২০০৬ সাল থেকে তিনি আইসিসি ইন্টারন্যাশনাল প্যানেলের অংশ। আন্তর্জাতিক ম্যাচে মূল আম্পায়ার হিসেবে অভিষেক হয় যদিও ২০১০ সালে, মিরপুরে বাংলাদেশ-শ্রীলংকা ওয়ানডে দিয়ে। পরের বছর বাংলাদেশ-পাকিস্তান ম্যাচ দিয়ে প্রথমবার আম্পায়ার হিসেবে দাঁড়ান টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে।
ইতিহাস গড়তে পেরে দারুণ উচ্ছ্বসিত ৪৭ বছর বয়সি আম্পায়ার সৈকত, 'আইসিসি এলিট প্যানেলে জায়গা পাওয়া বড় সম্মানের। এই প্যানেলে দেশের প্রথম প্রতিনিধি হতে পারা বাড়তি স্পেশাল এবং আমার ওপর যে আস্থা রাখা হয়েছে, তা ন্যায্য প্রমাণ করতে মুখিয়ে আছি আমি। বছরের পর বছর ধরে অনেক অভিজ্ঞতা আমার হয়েছে এবং আরও চ্যালেঞ্জিং অভিযানের জন্য আমি তৈরি।'
এলিট প্যানেলে নতুন আম্পায়ার যুক্ত হওয়ার পাশাপাশি একটি পরিবর্তন আছে ম্যাচ রেফারিদের এলিট প্যানেলেও। তবে এখানে যুক্ত হননি কেউ, বরং আগের সাত জনের তালিকা থেকে এবার নেই ক্রিস ব্রড। ম্যাচ রেফারি হিসেবে দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ১২৩ টেস্ট, ৩৬১ ওয়ানডে ও ১৩৫ টি২০ পরিচালনা করেছেন সাবেক এই ইংলিশ ক্রিকেটার।
আইসিসি এলিট প্যানেল অব ম্যাচ রেফারিজ : ডেভিড বুন (অস্ট্রেলিয়া), জেফ ক্রো (নিউ জিল্যান্ড), রাঞ্জান মাদুগালে (শ্রীলংকা), অ্যান্ড্র পাইক্রফট (জিম্বাবুয়ে), রিচি রিচার্ডসন (ওয়েস্ট ইন্ডিজ), জাভাগাল শ্রীনাথ (ভারত)।
আইসিসি এলিট প্যানেল অব আম্পায়ার্স : কুমার ধার্মাসেনা (শ্রীলংকা), ক্রিস গ্যাফানি (নিউজিল্যান্ড), মাইকেল গফ (ইংল্যান্ড), আড্রিয়ান হোল্ডস্টক (দক্ষিণ আফ্রিকা), রিচার্ড ইলিংওয়ার্থ (ইংল্যান্ড), রিচার্ড কেটেলবরো (ইংল্যান্ড), নিতিন মেনন (ভারত), আহসান রাজা (পাকিস্তান), পল রাইফেল (অস্ট্রেলিয়া), শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদ সৈকত (বাংলাদেশ), রডনি টাকার (অস্ট্রেলিয়া), জোয়েল উইলসন (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)।