টেস্টে ভরাডুবিতে ক্ষোভে ফুঁসছেন পাপন

প্রকাশ | ২৭ মার্চ ২০২৪, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
ক্রীড়ামন্ত্রী ও বিসিবির সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন
সিলেটে স্মরণকালের অন্যতম ভরাডুবির সাক্ষী হয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। শ্রীলংকার বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচ খেলতে নেমে ব্যাটিংয়ে নাস্তানাবুদ হয়েছে টাইগাররা। ৩২৮ রানের রেকর্ড ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ। দলের এমন পারফরম্যান্সে ক্ষোভে ফুঁসছেন ক্রীড়ামন্ত্রী ও বিসিবির সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। গতকাল মঙ্গলবার সিলেটে দলের হার নিয়ে গণমাধ্যমের সামনে কথা বলেন বিসিবি সভাপতি। দলের হতাশাজনক পারফরম্যান্সে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, 'এরা কেউ বাচ্চা ছেলে না যে, হঠাৎ করে আজকে ওদের মাঠে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে।' দলের হারে কেমন লেগেছে জানতে চাইলে নাজমুল হাসান পাপন বলেন, 'সবার কাছে যেমন লেগেছে আমার কাছেও তেমন লেগেছে। এটা ভালো লাগার কোনো কারণ নেই।' 'কী হয়েছে, এটা নিয়ে আমি চিন্তিত না। এটা যে একেবারেই অপ্রত্যাশিত ছিল তা না। টি২০-তে হারলাম কেন, হঁ্যা সেটা বলতে পারি, এটা হারা উচিত হয়নি। আপনারা বলতে পারেন ওডিআইতে ৩-০-তে জিতলাম না কেন, সেটা বলতে পারেন। সেটা নিয়ে আক্ষেপ আছে, ওই ম্যাচটা জিতব না কেন? কিন্তু টেস্টে শ্রীলংকার সঙ্গে জিতবই, ওই আত্মবিশ্বাসটা ছিল না। এটা আসলে ছিলই না।' টেস্ট নিয়ে বিসিবি সভাপতি বলেন, 'সমস্যাটা হারা নিয়ে না। সমস্যা হচ্ছে যেভাবে তারা হেরেছে। যেভাবে তারা খেলেছে। তাদের এই মানসিকতা, মনোভাব, শট সিলেকশন এটা জঘন্য, বিশ্রী ছিল। মনে হয়েছে, হয় তারা খেলতে চায় না এই ফরম্যাটটা অথবা অন্য কোনো সমস্যা। এটা নিয়ে আমরা কঠোর অবস্থানে আছি। হারা-জেতা নিয়ে একেবারে চিন্তিত নই। কিন্তু এই ধরনের শট সিলেকশন, এই ধরনের মানসিকতা এটা টেস্টে যায় না।' ক্ষোভ প্রকাশ করে বিসিবি সভাপতি বলেন, 'এরা কেউ বাচ্চা ছেলে না যে, হঠাৎ করে আজকে ওদের মাঠে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই জিনিসটা বলে দিতে হবে। তারা প্রত্যেকে জানে। এই কারণে আমাদের মনটা খারাপ হয়েছে এবং সেটা নিয়েই কথা বলব। সেজন্য আজকে সবার সঙ্গে বসার জন্য এখানে আসছি।' দলে সিনিয়র ক্রিকেটাররা না থাকা এবং পেস সহায়ক উইকেটে টেস্ট খেলা নিয়ে পাপন বলেন, 'একটা হচ্ছে তামিম সাকিব মুশফিক রিয়াদের মতো খেলোয়াড়রা নেই। ওরা এই প্রথম এরকম একটা খেলা খেলতে যাচ্ছে যেখানে কেউ নেই। দ্বিতীয়ত উইকেট আমরা টোটালি অন্য ধরনের এক উইকেটে খেলছি। এটাতে করে যারা খেলছে তাদের জন্য নতুন অভিজ্ঞতা।' ওয়ানডে সিরিজে টানা দুই ম্যাচে ডাক মারার পর তৃতীয় ওয়ানডেতে দল থেকে বাদ পড়েন লিটন দাস। এরপর টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচেও ব্যাট হাতে ব্যর্থ লিটন। দ্বিতীয় ইনিংসে দলের ৪ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর লিটন যেভাবে তেড়েফুঁড়ে এসে শট খেলতে গিয়ে আউট হয়েছেন, তা নিয়ে সমালোচনায় মুখর দেশের ক্রিকেটাঙ্গন। শুধু ব্যাটিংই নয়, খেলার মাঠে লিটনের মনোযোগ নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। দেশের সবচেয়ে স্ট্যাইলিশ ব্যাটার হিসেবে বিবেচনা করা হয় লিটন দাসকে। কিন্তু প্রত্যাশা খুব কমই পূরণ করতে পেরেছেন তিনি। সাম্প্র্রতিক সময়ে তার ব্যাটিং নিয়ে একটু বেশিই প্রশ্ন উঠেছে। উইকেট ছুড়ে দিয়ে আসা এখন লিটনের নিত্যদিনের কাজ। শ্রীলংকার বিপক্ষে চলমান টেস্ট সিরিজের প্রথম টেস্টে তার আউট হওয়ার ধরন দেখে হতাশ সমর্থকরা। মাঠে তার নিবেদন, খেলার প্রতি কতটা মনোযোগী তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন তারা। শ্রীলংকার বিপক্ষে টি২০ সিরিজে জয় পাওয়া ম্যাচে লিটন ব্যাট হাতে ভালো ভূমিকা রেখেছিলেন। কিন্তু ওয়ানডে সিরিজে দারুণভাবে ব্যর্থ হয়েছেন। প্রথম দুই ম্যাচে রানের খাতাই খুলতে পারেননি। যার প্রেক্ষিতে বাদ পড়েন তৃতীয় ওয়ানডে থেকে। গতকাল মঙ্গলবার মিরপুরে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছিলেন বিসিবির সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। অবধারিতভাবেই লিটন দাসকে নিয়ে প্রশ্নবাণ ছুটে গেল তার দিকে। একসময় জাতীয় দলের সহ-অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করা লিটন নেতৃত্বও দিয়েছেন বেশ কিছু ম্যাচে। বিপিএলেও কুমিলস্না ভিক্টরিয়ান্সকে নেতৃত্ব দিয়ে ফাইনালে তুলেছিলেন তিনি। সেই টুর্নামেন্টে ব্যাট হাতেও দারুণ খেলেছিলেন। তবে জাতীয় দলের নেতৃত্ব শেষ পর্যন্ত লিটনের কাছে যায়নি। নাজমুল হোসেন শান্তকে তিন ফরম্যাটেরই অধিনায়ক হিসেবে বেছে নিয়েছে বিসিবি। অধিনায়কত্ব না পাওয়াটাই কি তবে কাল হয়েছে লিটনের, প্রভাব ফেলেছে ফর্মে? এমন প্রশ্নের জবাবে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের স্পষ্ট উত্তর, 'কোচ-ক্যাপ্টেন কে হবেন, এটা বোর্ডের ডিসিশন। এটা কারো ব্যক্তিগতভাবে পছন্দ হলো কিংবা হলো না তাতে কিছু যায় আসে না।' পাপন যোগ করেন, 'ওর পারফরম্যান্স ওয়ার্ল্ড কাপ থেকেই দেখছি, সামথিং ইজ রং মনে হয়েছে। সে জন্য ওডিআই থেকে বাদও পড়েছে ও। চিন্তা করে দেখেন, ওর মতো ওপেনার, এত বছর ধরে আমরা যাকে খেলিয়েছি, ডিপেন্ড করেছি এবং হি ইজ পারফরমড। এমন না যে, ও খেলা পারে না। বিউটিফুল পেস্নয়ার। কিন্তু কিছু একটা সমস্যা হচ্ছে বলেই আমরা তাকে ওয়ানডে থেকে ড্রপ করেছি। এর চেয়ে বেশি কিছু সিগন্যাল তো হতে পারে না। দেয়ার ইজ অ্যা প্রবলেম, কিন্তু আমার দৃঢ় বিশ্বাস এর সঙ্গে ক্যাপ্টেন্সির কোনো সম্পর্ক নেই।' তৃতীয় ওয়ানডে থেকে বাদ পড়লেও সিলেট টেস্টে দলের অটোচয়েজই ছিলেন লিটন। টেস্টে তার ফর্মটাও ভালোই যাচ্ছিল। কিন্তু সিলেটে লিটন যেভাবে ব্যাটিং করেছেন, বা মাঠে যেরকম অমনোযোগী মনে হয়েছে তাকে, সেই হিসেবে দলের বাইরে রাখাই উত্তম ছিল বলে মনে করেন বিসিবি সভাপতি পাপন। তিনি বলেন, 'টেস্ট ম্যাচটাতে না খেলালেই ভালো হতো, আমাকে যদি জিজ্ঞেস করেন। কিন্তু আপনারা তখন বলতেন, টেস্টে তার এমন রেকর্ড, এই সেই, ওকে কেন বাদ দিল- হুলস্থূল একটা ব্যাপার খামাখাই করত মানুষ। কিন্তু ওকে এই সময়ে একটা ব্রেক দিলে আমার ধারণা ও ভালোভাবেই কামব্যাক করে আসতে পারবে।'