তীরে এসে তরী ডুবল বাংলাদেশের

প্রকাশ | ২৭ মার্চ ২০২৪, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনাতে মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের ম্যাচে স্বাগতিক বাংলাদেশকে ও ফিলিস্তিনের খেলোয়াড়দের মধ্যে বল দখলের লড়াই -বাফুফে
একেই বলে দুর্ভাগ্য! তা না হলে ম্যাচের শেষ দিকে এসে কেনই বা ইনজুরিতে পড়ে মাঠ ছাড়বেন বাংলাদেশের নিয়মিত গোলরক্ষক মিতুল মার্মা! পুরো ম্যাচ জুড়ে দুর্দান্ত ফুটবল উপহার দেওয়া বাংলাদেশ কেনই বা শেষের দিকে এসে মনোযোগ হারিয়ে ইনজুরি টাইমে এক গোল হজম করবে! মঙ্গলবার বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনাতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের ম্যাচে স্বাগতিক বাংলাদেশকে ১-০ গোলে হারিয়েছে সফরকারী ফিলিস্তিন। ম্যাচের একমাত্র গোলটি করেন মিকাইল তেরমানীনি 'মহান স্বাধীনতা দিবসে অন্তত একটি পয়েন্টের প্রত্যাশা ছিল জামাল-রাকিবদের কাছে। 'ঘরের মাঠে বাংলাদেশ আরও বেশি শক্তিশালী' বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরার এমন আশ্বাসই বোধহয় বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনাতে দর্শকের ঢল। এমনিতেও বাংলাদেশের যে কোনো ম্যাচেই দর্শকদের থাকে সীমাহীন আগ্রহ। মঙ্গলবারও জামালদের উৎসাহ দিতে কার্পণ্য করেননি বাংলাদেশের ফুটবল দর্শকরা। ম্যাচ জুড়ে শক্তিধর ফিলিস্তিনের বিপক্ষে দারুণ ফুটবল খেলেছে বাংলাদেশ। তবে সেই পুরানো বদভ্যাসে ৩ পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারেনি তারা। কিংস অ্যারেনাতে ম্যাচের ১৮ মিনিটে রাশিদের ফ্রি কিক ক্লিয়ার করেন তপু বর্মণ। কর্নার পায় ফিলিস্তিন। তবে সে সুযোগ তারা কাজে লাগাতে পারেনি। ২৩ মিনিটে বা প্রান্ত থেকে ফয়সাল আহমেদ ফাহিমের বা পায়ের শট চলে যায় বারের উপর দিয়ে। ২৬ মিনিটে ফিলিস্তিনের একটি আক্রমণ কর্নারের বিনিময়ে ক্লিয়ার করেন বিশ্বনাথ ঘোষ। রশিদ কর্নার নেয়ার সময় বেজে উঠে রেফারির বাঁশি। জানিয়ে দেন কর্নারটি আবারও নিতে হবে। কিছু একটা বলে প্রতিবাদ করতে যান বাংলাদেশের সাদ উদ্দিন। রেফারি তাকে হলুদ কার্ড দেখিয়ে সতর্ক করে দেন। ৩২ মিনিটে ফিলিস্তিনের বক্সের সামান্য দূর থেকে জামাল ভুইয়া ফ্রি কিক নিলেও পোস্টে রাখতে পারেননি। ডান পোস্ট ঘেষে বল চলে যায় মাঠের বাইরে। ৩৯ মিনিটে বাংলাদেশের বক্সের কয়েক গজ দূরে বা প্রান্ত থেকে রশিদের ফ্রি কিক বাংলাদেশের গোলপোস্ট ছুঁয়ে যায়। মিতুল মার্মাও হাত উঁচু করে বল ফিস্ট করতে চেষ্টা করেন। তবে কোনো বিপদ ঘটেনি বাংলাদেশের। ৪১ মিনিটে বা প্রান্ত ধরে বল নিয়ে ফিলিস্তিনের অর্ধে ঢুকে পড়েন ফয়সাল আহমেদ ফাহিম। রাকিবের উদ্দ্যেশ্যে বল বাড়িয়ে দিলেও কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা পায় ফিলিস্তিন। ডান প্রান্ত থেকে জামাল ভুইয়ার শর্ট কর্নার রিসিভ করতে পারেননি সোহেল রানা। বল পেয়ে আক্রমণে যায় ফিলিস্তিন। ৪৪ মিনিটে জামাল ভুইয়ার থ্রম্ন পাসে বল পেয়ে দারুণ গতিতে ফিলিস্তিনের বক্সে ঢুকে পড়েন ফাহিম। তবে শট করার মতো তেমন কোনো জায়গা পাননি। দুই ডিফেন্ডার আর এগিয়ে আসা গোলরক্ষককে পরাস্ত করতে শট করেন গোলরক্ষকের পায়ের ফাঁক দিয়ে। প্রথমার্ধ শেষ হয় গোলশূন্যভাবেই। দ্বিতীয়ার্ধে ও বাংলাদেশ খেলেছে দারুণ ফুটবল। ৭৯ মিনিটে বা প্রান্ত থেকে কর্নার করেন কার্ড সমস্যা কাটিয়ে এই ম্যাচে ফেরা মিডফিল্ডার সোহেল রানা (সিনিয়র)। তবে সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি বাংলাদেশ। এই ম্যাচেও একটি হলুদ কার্ড দেখেন তিনি। ম্যাচের প্রায় শেষ দিকে এসে বাধ্য হয়েই গোলরক্ষক পরিবর্তন করে বাংলাদেশ। যতক্ষণ মাঠে ছিলেন, করেছেন দুর্দান্ত সব সেইভ। ৮৩ মিনিটে ইনজুরিতে পড়ে মাঠ ছাড়েন মিতুল মার্মা। এম্বুলেন্সে করে নিতে হয় তাকে। মিতুলের স্থানে মাঠে নামেন আরেক গোলরক্ষক মেহেদী হাসান শ্রাবণ। ৮৮ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে ফিলিস্তিনের আলাদিনের শট চলে যায় বারের উপর দিয়ে। এরই মধ্যে একটি পরিবর্তন করেন ক্যাবরেরা। রক্ষণ আগলে রেখে আক্রমণে যাবার পরিকল্পনা করে বাংলাদেশ। নির্ধারিত ৯০ মিনিট শেষে যোগ হয় ৮ মিনিট ইনজুরি টাইম। আর এই ইনজুরি টাইমই হয়ে উঠে আরও নাটকীয়। (৯০+১ মিনিটে) মাঝ মাঠ থেকে কিছুক্ষণ আগেই বদলি নামা ইসা ফয়সাল বল বাড়িয়ে দেন রাকিবের উদ্দ্যেশ্যে। ফাউলের শিকার হন রাকিব। দশ জনের দলে পরিণত হয় ফিলিস্তিন। আহত রাকিবকে টেনে মাঠের বাইরে বের করে দেন ফিলিস্তিনের আহমেদ মাহাজনে। রেফারি তাকে হলুদ কার্ড দেখান। তাতেও ক্ষান্ত হননি। রেফারির সঙ্গে বিতর্কে জড়ান। এবার মাহাজনেকে লাল কার্ড দেখান রেফারি। তবে পরের মিনিটেই মেহেদী হাসান শ্রাবণ বলের ফ্লাইট মিস করেন। ফিলিস্তিনও টের পেয়ে যায় বাংলাদেশের রক্ষণের এই দুর্বলতা। সেই সুযোগটা কাজে লাগিয়েই গোলরক্ষক শ্রাবণকে পরাস্তও করে তারা। ৯০+৪ মিনিটে মিকাইল তেরমানীনি পেছন থেকে এসে দারুণ শটে বল জড়িয়ে দেন বাংলাদেশের জালে (১-০)। শেষের দিকে এসে গোল হজম যেনো বাংলাদেশ ফুটবল দলের অতীত ইতিহাসকেই মনে করিয়ে দেয় আরও একবার। এই গোলেই জয় নিশ্চিত হয় ফিলিস্তিনের।