টি২০ সিরিজে শ্রীলংকার সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে হেরেছিল বাংলাদেশ। এরপর প্রথমবারের মতো লঙ্কানদের ওয়ানডে সিরিজ হারায় নাজমুল হোসেন শান্তর দল। ফলে টেস্ট সিরিজেও হাড্ডাহাড্ডি প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস পাওয়া যাচ্ছিল। কিন্তু সিলেটে প্রথম টেস্টে দুই ইনিংসেই ব্যর্থ বাংলাদেশি ব্যাটাররা। ফলে বড় ব্যবধানে হেরে টেস্ট সিরিজ শুরু করল টাইগাররা।
শ্রীলংকার দেওয়া ৫১১ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে দ্বিতীয় ইনিংসে ১৮২ রানে থেমেছে বাংলাদেশ। ফলে ৩২৮ রানের বিশাল ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ। মুমিনুল ইসলাম দ্বিতীয় ইনিংসে লড়াইটুকু না করলে হারের ব্যবধান আরও বড় হতো। এই ইনিংসে ৮৭ রানে অপরাজিত থাকেন মুমিনুল। দ্বিতীয় ইনিংসে টাইগারদের মোট পাঁচজন ব্যাটার রানের খাতা খুলতে পারেননি। দলের এমন ব্যাটিং বিপর্যয় অবাক করেছে সমর্থকদের। অধিনায়ক শান্ত, লিটন দাসদের মতো অভিজ্ঞদের পাশাপাশি ব্যাট হাতে ব্যর্থ নবীন মাহমুদুল হাসান জয়-শাহাদাত দীপুরাও।
বাংলাদেশের মতো দুই ইনিংসে লঙ্কানরাও ধাক্কা খেলেও অধিনায়ক ধনঞ্জয়া ডি সিলভা ও কামিন্দু মেন্ডিস দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে লঙ্কানদের জয় এনে দিয়েছেন। হারের পর তাই দুই সেঞ্চুরিয়ানকে কৃতিত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত।
টেস্ট ম্যাচ শেষে শান্ত বলেন, 'ধনঞ্জয়া এবং কামিন্দু যেভাবে ব্যাটিং করেছে তা দুর্দান্ত ছিল।' একইভাবে নিজের দলের বোলারদেরও ক্রেডিট দিলেন টাইগারদের অধিনায়ক, 'আমাদের বোলাররাও যেভাবে বোলিং করেছে তা দুর্দান্ত ছিল। উইকেট ভালো ছিল।'
দলের ব্যাটিং ব্যর্থতায় কোনো অজুহাত অবশ্য দেননি শান্ত। ব্যর্থতা মেনে নিয়ে দিলেন উন্নতির প্রতিশ্রম্নতি, 'আমাদের নতুন বলের ব্যাটিংয়ের জন্য উন্নতি করতে হবে। পরের টেস্টের আগে অনেক কাজ করতে হবে এটা নিয়ে। যখন চট্টগ্রামে যাব পরিকল্পনা থাকবে তখন আশা করি, আমরা আরও ভালো করব।'
দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের একমাত্র প্রাপ্তি মুমিনুল হকের রানে ফেরা। প্রথম ইনিংসে মাত্র ৫ রান করা মুমিনুল দ্বিতীয় ইনিংসে শেষ পর্যন্ত ১২ চার ও ১ ছয়ে ৮৭ রান করে অপরাজিত ছিলেন। তাকে নিয়ে শান্ত বলেন, 'তিনি চাপের মধ্যে একটি অসাধারণ নক খেলেছেন এবং আশা করি সামনেও দলের জন্য এভাবেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখবেন।'
বড় হারের পর সমালোচনার সবটা জুড়ে ব্যাটারদের কান্ডজ্ঞানহীন ব্যাটিং। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে টেস্টে দেশের সেরা ব্যাটার লিটন দাস যেভাবে আউট হয়েছেন তা মেনে নিতে পারছেন না অধিকাংশ সমর্থক।
৩৭ রানে যখন ৪ উইকেট হারিয়ে ধুকছে বাংলাদেশ। সে সময়ে ক্রিজে এসেই লিটন যা করেছেন তার ব্যাখ্যা দেওয়া অসম্ভব। ক্রিজ থেকে তেড়েফুঁড়ে বেরিয়ে সজোরে পুল করতে গিয়ে ক্যাচ আউট হন তিনি। দলের বিপদ বাড়িয়ে লিটনের এমন আউট নিয়ে চারদিকে শুরু হয়েছে সমালোচনার ঝড়।
টাইগার অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তকে লিটনের আউটের ধরন নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। গণমাধ্যমের সেই প্রশ্নের জবাবে শান্ত বলেন, 'লিটনের আউটটা নিয়ে আসলে আমি বলতে পারব না। লিটনই ভালো ব্যাখ্যা দিতে পারবে। তবে হঁ্যা, সাধারণত টেস্ট ক্রিকেটে এ ধরনের আউট খুব একটা দেখা যায় না। আমার আউটটা নিয়ে যেটা বলতে পারব, ভুল বল বেছে নিয়েছিলাম। উইকেট যেমন ছিল, নতুন বলে এ ধরনের বল টপ অর্ডার ব্যাটার হিসেবে ছেড়ে দেওয়া উচিত। আমার মনে হয় মিস জাজমেন্ট। পরের ম্যাচে ভালো করার জন্য সবাই চিন্তা করবে এবং ভালোভাবে কামব্যাক করবে।'
শান্ত এ সময় জানান, লিটন কেন এই শট খেলেছেন তা নিয়ে ব্যাটিং কোচ তার সঙ্গে কাজ করবে। শান্তর ভাষায়, 'নির্দিষ্ট শট নিয়ে কথা বলার জন্য ব্যাটিং কোচ আছে। কেন খেলেছেন কী কারণে খেলেছেন এটা নিয়ে ব্যাটিং কোচ তার সঙ্গে কাজ করবে। এটা আমার কাজ না। এ আউট নিয়ে খুব বেশি কথা বলার দরকার সেটাও আমি মনে করছি না। ঠিকমতো হলে এটা নিয়ে এত কথা হতো না। আউট তো আউটই। তবে এ ধরনের আউট যেন না হয়, ব্যাটিং কোচ বা লিটন আরও ভালোভাবে পরিকল্পনা করবে।'