বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

মিরপুরের গ্যালারির সিঁড়িগুলো সাইফউদ্দিনের 'কষ্টের সাক্ষী'

ক্রীড়া ডেস্ক
  ০৩ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
মিরপুরের গ্যালারির সিঁড়িগুলো সাইফউদ্দিনের 'কষ্টের সাক্ষী'

বিপুল সম্ভাবনা নিয়েই ২০১৭ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রেখেছিলেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। অভিষেকের পর দলের ভরসা হয়ে উঠতেও সময় নেননি তিনি। তবে চোট আর ছন্দহীনতা তার ক্যারিয়ারের গতিপথ করে দেয় এলোমেলো। ২০২২ সালের অক্টোবরের পর আর ডাক পাননি জাতীয় দলে। এবার বিপিএল খেলা নিয়েও শঙ্কায় ছিলেন ডানহাতি এই পেসার।

প্রথম ৬ ম্যাচ পর ফরচুন বরিশাল খেলতে নামায় তাকে। টানা ৯ ম্যাচ খেলে তামিম ইকবালদের শিরোপা জেতায় বিশাল ভূমিকা রাখেন সাইফউদ্দিন। ৯ ম্যাচেই নেন ১৫ উইকেট। ফাইনালেও শেষ ওভারে দারুণ বল করে ম্যাচের মোড় ঘোরাতে রাখেন ভূমিকা। ফাইনাল শেষে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে কষ্টের দিনগুলোর কথা স্মরণ করেছেন ২৭ পেরুনো সাইফউদ্দিন।

প্রশ্ন : ৯ ম্যাচ খেলের ১৫ উইকেট নিলেন। পুরো টুর্নামেন্ট খেললে সর্বোচ্চ উইকেট নিতে পারতেন। আক্ষেপ আছে?

সাইফউদ্দিন : নাহ, আলহামদুলিলস্নাহ, যা হয়েছে সব মিলিয়ে খুশি। সবাইকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। যারা আমার ভক্ত-সমর্থক আছেন, যারা আমাকে সুযোগ দিয়েছেন, সমর্থন করেছেন, আমার জন্য দোয়া করেছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। তাদের দোয়ার কারণেই হয়তো প্রত্যাবর্তন করতে পেরেছি।?

প্রশ্ন :চোট কাটিয়ে দীর্ঘ দিন পর ফিরলেন প্রস্তুতিটা কীভাবে নিয়েছিলেন?

সাইফউদ্দিন : আমি সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। ব্যাটিং, বোলিং ও ফিটনেস নিয়ে অনেক কাজ করেছি। আপনারা হয়তো দেখেছেন, মিরপুরের গ্যালারির সিঁড়িগুলোতে অনেক স্ট্রেংথ ট্রেনিং করেছি ইফতি ভাইয়ের (ট্রেনার ইফতেখার ইসলাম) সঙ্গে। ইফতি ভাই সবসময় উজ্জীবিত করতেন, 'যখন ভালো কিছু করবি, উদ্‌যাপন করবি, তখন এই সিঁড়িগুলো সাক্ষী থাকবে।' আজকে খেলা শেষে যখন উদ্‌যাপন করছিলাম, দর্শকদের অ্যাপ্রিশিয়েট করছিলাম, প্রতিটি সিঁড়ির কথাই আমার মনে পড়ছিল, ওই

দিনগুলোর কথা।

প্রশ্ন : ফিরে আসতে আপনাকে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রাণিত করেছে কে?

সাইফউদ্দিন : সবাই, আমার পরিবার, নতুন বউ। ক্রিকেটের প্রতি তার তেমন আগ্রহ নেই। আজকেও অনেক অনুরোধ করেছিলাম মাঠে আসতে, তারপরও আসেনি। তবু আমার মনে হয় টিভি সেটের সামনে বসে খেলা দেখেছে। সত্যি বলতে, আমার মাকে ধন্যবাদ দিতে চাই। মা সবসময় আমার পাশে ছিল এবং খারাপ সময়ে সাহস দিয়েছে। আমাকে সবসময় উজ্জীবিত করেছে।

প্রশ্ন : অধিনায়ক হিসেবে তামিম ইকবাল কতটা উজ্জীবিত করেছেন আপনাকে?

সাইফউদ্দিন : অসাধারণ! অসাধারণ! রাসেল আগের ওভারে যখন ৩টি ছক্কা মেরেছিল, তখন তিনি (তামিম) আমার বুকে সাহস দিয়ে বলছিলেন, 'তুই এটা করতে পারবি।' কুমিলস্না ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে যখন (২০১৯ সালে) খেলেছিলাম, আমাকে একইভাবে অ্যাপ্রিশিয়েট করেছিলেন। যে কারণে আমার আত্মবিশ্বাস ছিল যে, রাসেল আমাকে একটা বাউন্ডারিও মারতে পারবে না। সত্যি বলতে শুধু অধিনায়ক বা বড় ভাই নয়, তিনি আবার খুব কাছের একজন। আমার পরিবারের সদস্যের মতোই। তিনি আমাকে উজ্জীবিত না করলে আজকে হয়তোবা এমন করতে পারতাম না।

প্রশ্ন : যখন দলে সুযোগ পেলেন, তামিম কীভাবে স্বাগত জানান আপনাকে?

সাইফউদ্দিন : তামিম ভাই আমাকে বলেছিলেন, চ্যাম্পিয়ন হলে দুইটা ব্যাট দেবেন। এজন্য আমি বেশি খুশি। অনেকের হয়তো টাকা-পয়সা, বাড়ি-গাড়ি, জমির নেশা থাকে। আমার এসব নেশা নেই। আমার শুধু ব্যাটের নেশা, ব্যাটিং পারি আর না পারি (হাসি)।

প্রশ্ন : আপনাদের উদ্‌যাপন নিয়ে আর কি পরিকল্পনা আছে?

সাইফউদ্দিন : এটা পুরোপুরি টিম ম্যানেজমেন্ট বলতে পারবে। সামনে রোজা আসছে। শুনেছি তামিম ভাই ছুটিতে দেশের বাইরে যাচ্ছেন। তামিম ভাই না থাকলে তো উদ্‌যাপনটা করা হবে না। হয়তো ঈদের পরে... ড্রেসিং রুমে অসাধারণ আবহ। কারণ বরিশাল এর আগে দু'বার খুব কাছে গিয়ে ফাইনাল হেরেছে। স্বাভাবিক এটা অন্যরকম উদ্‌যাপন হবে। আমরা উদ্‌যাপনের একটা অংশ শেষ করলাম। হোটেলে গেলে আরেকটা হবে। সব মিলিয়ে সময়টা উপভোগ করতে চাই।

প্রশ্ন : বিপিএলে আপনি ভালো করার আগেই জাতীয় দল ঘোষণা হয়ে গেছে, আক্ষেপ আছে কি একটু?

সাইফউদ্দিন : না, না, অবশ্যই আক্ষেপ নেই কোনো। আলস্নাহ যা করেন, ভালোর জন্যই করেন। বিসিবি আমার জন্য যেটা ভালো মনে করেছে। আমি টানা 'হাই ইনটেনসিটি' ম্যাচ খেলেছি। অবশ্যই আমার বিশ্রাম প্রয়োজন। যেহেতু অনেক দিন পর 'হাই ইনটেনসিটি' ম্যাচ খেলেছি। তাই একটা 'সোরনেস' থাকে পুরো শরীরে। পুরোপুরি ফিট হয়ে, বোলিং ওয়ার্কলোডের জন্য প্রস্তুত হয়ে জাতীয় দলে ফেরাটাই আমার জন্য

ভালো হবে।

প্রশ্ন : কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের সঙ্গে দেখা হয়েছে বা কথা হয়েছে?

সাইফউদ্দিন : না (হাসি)। প্রথম যখন এসেছিলাম, তাকে জিজ্ঞেস করলাম, 'কি ব্যাপার? তোমাকে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ দিলাম, সিন করলে না।' তিনি বললেন যে, 'আমি আসলে দেখিনি।' আমি আবার জিজ্ঞেস করি, আমাকে নিয়ে কোনো পরিকল্পনা আছে কি না। তখন তিনি বলেন, 'তুমি তো চোটে আক্রান্ত। কী পরিকল্পনা করব! পরে যখন ফিট হবে, তখন দেখা যাবে।'

প্রশ্ন : এখন কি আবার মেসেজ দেবেন?

সাইফউদ্দিন : দেখি! মুডের ওপর নির্ভর করে (হাসি)।

প্রশ্ন : অনেক চাপের ম্যাচ খেলার পর এখন বিশ্রাম। এই বিশ্রামটা কি টি২০ বিশ্বকাপের জন্য?

সাইফউদ্দিন বিশ্রামের তো আসলে সুযোগ নেই। সামনে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ শুরু হচ্ছে। এক সপ্তাহ সময় পাব হয়তো। আবার রমজান আসছে। সব মিলিয়ে আরও বেশি প্রস্তুত হতে হবে। ফিটনেসের ওপর আরও মনোযোগ দিতে হবে। যেহেতু টানা খেলার মধ্যে আছি, ধকল যাচ্ছে শরীরের ওপর। বয়সও যেহেতু বাড়ছে এখন, ২৬-২৭ পার হয়ে গেছে। তাই এখন ফিটনেস নিয়ে আরও সতর্ক থাকতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে