বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

অনেক কিছু ঠিক হলেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরবেন তামিম!

ক্রীড়া ডেস্ক
  ০৩ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
বিপিএলের ফাইনালে কুমিলস্না ভিক্টোরিয়ান্সকে হারানোর পর উচ্ছ্বাস করছেন বরিশালের মাহমুদউলস্নাহ রিয়াদ, তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিমরা -ওয়েবসাইট

টি২০ ক্রিকেটে আগেই অবসরের ঘোষণা দিয়েছিলেন তামিম ইকবাল। গত ওয়ানডে বিশ্বকাপের ঠিক আগে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অবসরের ঘোষণা দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে ফিরেও এসেছিলেন। পরে আবার বিশ্বকাপ থেকে নিজের নাম প্রত্যাহারও করে নেন। তখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আর ফিরবেন কিনা এই ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছু বলেননি। জানিয়েছিলেন, বিপিএলের সময়টাতে সবকিছু পরিষ্কার করবেন। কিন্তু বিপিএল চ্যাম্পিয়ন হয়েও স্পষ্ট করেননি কিছু। কেবল বলেছেন, অনেক কিছু ঠিক হলেই কেবল ফিরতে পারেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে!

ঘটনাটা গত বছরের জুলাই মাসের। হুট করেই আফগানিস্তান সিরিজের মাঝে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের সিদ্ধান্ত নেন তিনি। একদিনের ব্যবধানে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের পর সিদ্ধান্ত বদলও করেছেন। সেপ্টেম্বরে বিশ্বকাপের আগে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হোম সিরিজে দুটি ম্যাচ খেললেও বিসিবির বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে হতাশ ছিলেন। শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপ দল ঘোষণার কয়েকদিন আগে নিজের নাম প্রত্যাহার করেন দেশসেরা এই ওপেনার। এরপর থেকেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বাইরে আছেন তিনি। বিশ্বকাপের পর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশ ঘরে-বাইরে দুটি সিরিজ খেলেছে। শ্রীলংকার বিপক্ষেও আসন্ন সিরিজের দল ঘোষণা হয়ে গেছে। সেখানেও নেই তামিম। শুধু তাই নয়, তামিমকে ছাড়াই বিসিবি চলতি বছরের কেন্দ্রীয় চুক্তি ঘোষণা করেছে। পরে জানা যায় যে, তামিম নিজেই কেন্দ্রীয় চুক্তিতে থাকতে চাননি।

সবকিছু মিলিয়ে তামিমের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার সম্ভাবনা ক্ষীণই। বিসিবিও তামিম ইসু্যতে স্পষ্ট করে কিছু বলছে না। শুক্রবার বিপিএল শিরোপা জয়ের পর সংবাদ সম্মেলনে অনেক কিছুর উত্তরই দিয়েছেন তিনি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার প্রশ্নে ধোঁয়াশাটা অবশ্য রেখেই দিয়েছেন। বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান জালাল ইউনুসের সঙ্গে আলোচনা করার কথা থাকলেও নানান কারণে সেটা হয়ে উঠেনি, 'আমার সঙ্গে জালাল ভাইয়ের কথা হয়েছে। কথা বলার জন্য এভেইলেবল ছিলাম কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সম্ভবত...আমার সঙ্গে বসার কথা ছিল। আমাদের যোগাযোগটা আছে। শনিবার সকালে আবার দেশের বাইরে চলে যাচ্ছি। আশা করি আসার পর আবার আমরা বসব।'

এরপরই তামিম জানালেন অনেক কিছু ঠিক হলেই কেবল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরতে পারেন তিনি, 'একটা জিনিস পরিষ্কারভাবেই আপনাদের বলতে চাই- আমার জন্য ফিরে আসার ক্ষেত্রে অনেক কিছু ঠিক হতে হবে। নয়তো শুধু এসে খেলার কোনো পয়েন্ট নেই। কারণ আমি ক্যারিয়ারের এমন স্টেজে আছি- হয়তো দুই বছর খেলব (সব মিলিয়ে)। ওই কথাগুলো বোর্ডের সঙ্গে বলতে হবে।'

তামিম বলেছেন, বোর্ডের সঙ্গে আলোচনা না করে কিছু বলাটা ঠিক হবে না, 'এখনো যেহেতু তাদের সঙ্গে চূড়ান্ত কথা হয়নি। এই সংবাদ সম্মেলনে এসে কিছু বলে দেওয়া উপযুক্ত না। ওটা বলাটাও উচিত হবে না।'

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার মতো অবস্থায় আছেন কিনা এই প্রশ্নে তামিম বলেছেন, 'ফিজিক্যালি আমি ওইসময় আরও ভালো ছিলাম। এখন তো একটু পেট বের হয়েছে দেখছেন। শারীরিকভাবে আমি ওইসময় আরও ভালো অবস্থায় ছিলাম।'

ফাইনাল শেষে পুরস্কার বিতরণীসহ যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা তখন শেষে। ড্রেসিং রুমে উদযাপন শেষে সংবাদ সম্মেলনের দিকে হাঁটা দিলেন তামিম ইকবাল। সঙ্গী করে নিলেন তিনি তাইজুল ইসলামকেও। একটু বিস্ময়ই জাগাল তা। তাইজুল কোনো পুরস্কার বা স্বীকৃতি পাননি, উলেস্নখযোগ্য কোনো ঘটনাও ছিল না এদিন তাকে ঘিরে। শেষ পর্যন্ত অবশ্য সংবাদ সম্মেলন কক্ষে ঢোকার আগেই অধিনায়ককে বলে-কয়ে আবার ড্রেসিং রুমে ফিরে গেলেন এই বাঁহাতি স্পিনার। তবে কেন তাকে নিয়েই সংবাদ সম্মেলনে আসতে চেয়েছিলেন তামিম, তা পরিষ্কার হলো একটু পরই।

এবারের বিপিএলে ফরচুন বরিশালের সাফল্যের পেছনে যাদের ভূমিকা বেশি, তাদের কথা বলতে গিয়ে তাইজুলের অবদানের কথা বললেন তামিম। সেখানেই তিনি শোনালেন সাড়ে ৫ মাস আগের একটি ঘটনা। তামিম বলেন, 'আমাকে এটা বলতেই হবে তাইজুল, হয়তো আমার বলা উচিত নয়, তবে মনে হচ্ছে এটা বলার উপযুক্ত সময় এখনই। আমি যখন ড্রাফটে ওকে দলে নিয়েছি, একটা নির্দিষ্ট দল ছিল, যারা হাসাহাসি করছিল। আমার এত খারাপ লাগছিল, এত খারাপ একজন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারকে আমি দলে নিয়েছি, অথচ একটা দল হাসছিল যে তাকে নিয়েছি। এখন ওর জন্য আমি খুবই খুশি যে, এত বড় অবদান রাখতে পেরেছে। ওর এই পারফরম্যান্সের কারণে বিসিবি ও নির্বাচকরা ওকে বাংলাদেশের ওয়ানডে ও টি২০ দলে নিয়েছে।'

ইনিংসের সেটি শেষ ওভার। স্ট্রাইকে তখন আগের ৮ বলে ৪টি ছক্কা মারা আন্দ্রে রাসেল। শেষ ওভারেই তার ব্যাটে চার-ছক্কার ঝড় ছিল প্রত্যাশিতই। কিন্তু তাকে একদম মিইয়ে রাখেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। পাঁচ বল খেলে ছক্কা তো দূরের কথা, কোনো বাউন্ডারিও মারতে পারেননি রাসেল। সাইফউদ্দিনের ওভারটি ছিল এতটাই দুর্দান্ত। কুমিলস্না ভিক্টোরিয়ান্সের বিপক্ষে ফাইনাল ম্যাচের শেষ ওভারটির মতো প্রায় সব ম্যাচেই ফরচুন বরিশালের বোলিংয়ের বড় নির্ভরতা ছিলেন সাইফউদ্দিন। প্রয়োজনের সময় ব্যাট হাতেও অবদান রেখেছেন ২৭ বছর বয়সি পেস বোলিং অলরাউন্ডার। তাই তো তামিম ইকবালের চোখে বরিশালের 'গেম চেঞ্জার' সাইফউদ্দিন।

সাইফউদ্দিনের মতো অলরাউন্ড নৈপুণ্যে শিরোপা জয়ে বড় অবদান রেখেছেন কাইল মেয়ার্সও। শিরোপা জয়ের পর ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডারের কথাও আলাদা করে বললেন বরিশাল অধিনায়ক। পরে বিদেশি সমস্যার সমাধান হয়ে আসেন মেয়ার্স। টুর্নামেন্টের শেষ দিকে দলে যোগ দিয়ে সাইফউদ্দিনের মতোই অলরাউন্ড অবদান রাখেন ক্যারিবিয়ান তারকা। নতুন বলে সুইং বোলিংয়ের প্রদর্শনী আর ব্যাট হাতে ঝড়ো ইনিংসে প্রতি ম্যাচেই বরিশালকে এগিয়ে দেন তিনি।

ক্যারিবিয়ান তারকাকেও প্রাপ্য কৃতিত্ব দিতে ভোলেননি বরিশাল অধিনায়ক তামিম, 'আমরা যখন কাইল মেয়ার্সকে দলে নেওয়ার সুযোগ পেলাম... সে নতুন বলে বোলিং করে এবং যেভাবে ব্যাটিং করে, আমার মতে তার অন্তর্ভুক্তি অসাধারণ ছিল। আসার পর থেকে ব্যাটিং বা বোলিং, কোনো না কোনো কিছুতে ওর প্রভাব ছিল। প্রতিটি ম্যাচে সে দুটিই করেছে। তার পারফরম্যান্সটা আমাদের জন্য অনেক বড় বিষয় ছিল।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে