ইনজুরি কাটিয়ে ফিরে নিজের চেনা রূপটা দেখাতে পারছিলেন না ম্যানচেস্টার সিটির নরওয়েজিয়ান তারকা আরলিং হালান্ড। অপেক্ষায় ছিলেন কেবল। ফর্মটা যে অস্থায়ী আর ক্লাস পার্মানেন্ট, সেটা দেখাতে এফএ কাপের ম্যাচকেই বেছে নিলেন এই তারকা। তাতে ঝড় তুলে একাই করলেন পাঁচ গোল। তার ঝড় তোলা ম্যাচে পঞ্চম রাউন্ডের ম্যাচে লুটনের বিপক্ষে ম্যানসিটির জয় ৬-২ গোলের। তাতে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত হয়েছে ম্যানসিটির।
কেভিন ডি ব্রম্নইনার তিন অ্যাসিস্টে কেনিলওয়ার্থ রোডে ৪০ মিনিটের মধ্যে হালান্ড হ্যাটট্রিক পূরণ করেন। জর্ডান ক্লার্ক দ্রম্নত জোড়া গোল করে লুটনের ব্যবধান ৩-২'এ নামিয়ে এনেছিলেন। কিন্তু আবারও বিধ্বংসী হালান্ডে কপাল পুড়েছে পুচকে লুটনের। বিরতির পর নরওয়েজিয়ান এই স্ট্রাইকার জোড়া গোল করলে বড় জয়ে শেষ আটে পৌঁছে যায় সিটি। সিটির হয়ে বাকি গোলটি করেছে মাতেও কোভাচিচ। নভেম্বরে প্রিমিয়ার লিগে বোর্নমাউথকে ৬-১ গোলে বিধ্বস্ত করার পর এ মৌসুমে সিটির এটি দ্বিতীয় ছয় গোলের কৃতিত্ব।
মঙ্গলবার প্রতিপক্ষের মাঠে ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণ করে যেতে থাকে সিটি। তাতে মাত্র তিন মিনিটের মাথায় প্রথম গোলের দেখা পায় তারা। দুর্দান্ত শটে জাল খুঁজে নেন হালান্ড। এরপর অষ্টাদশ মিনিটে আরেকবার প্রতিপক্ষের জাল কাঁপিয়ে দেন নরওয়েজিয়ান তারকা।
এই ঝড় অব্যাহত থাকে ম্যাচের প্রথমার্ধের বিরতি পর্যন্ত। ৪০তম মিনিটে নিজের হ্যাটট্রিক পূরণ করেন হালান্ড। সিটির হয়ে এ নিয়ে ৮টি হ্যাটট্রিক হয়ে গেল হালান্ডের। বিরতির আগে লুটনের হয়ে এক গোল শোধ করেন জর্ডান ক্লার্ক। তাতে ৩-১ গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় পেপ গার্দিওলার দল।
বিরতির পর ৫৫ ও ৫৮ মিনিটে করেন আরও ২ গোল করেন হালান্ড। তাতে কেভিন ডি ব্রম্নইন ও হালান্ডের মধ্যে দারুণ রসায়নের কাজটা করেন বার্নার্দো সিলভা ও জন স্টোনস। ৫৮ মিনিটে হালান্ডের শেষ গোলটি বানিয়েছেন সিলভা। ৭২ মিনিটে মাতেও কোভাচিচের গোলের উৎস স্টোনস। ম্যাচের ৫২ মিনিটে আরও একটি গোল শোধ করে লুটন।
এই ম্যাচে ৫ গোল করার মধ্য দিয়ে ম্যানসিটির ইতিহাসে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে দুবার ৫ গোলের মাইলফলক ছুঁয়েছেন। ১৯৭০ সালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড কিংবদন্তি জর্জ বেস্টের পর শীর্ষ লিগের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে এফএ কাপে এক ম্যাচে একাই ৫ গোল করলেন হালান্ড। সিটির হয়ে হালান্ড এর আগে ৫ গোল করেছিলেন গত বছর চ্যাম্পিয়নস লিগে লাইপজিগের বিপক্ষে।
অবশ্য এফএ কাপের ম্যাচে সিটির হয়ে ম্যাচে ৫ গোল করার রেকর্ডের হালান্ডের আরও দুইজন ভাগিদার আছে। ১৯২৬ সালে ফ্র্যাঙ্ক রবার্টস এবং ১৯৩০ সালে বব মার্শাল ৫ গোল করেছিলেন বিশ্বের প্রাচীনতম এই ফুটবল প্রতিযোগিতায়।
এবারের মৌসুমে সব ধরনের প্রতিযোগিতায় এ নিয়ে হালান্ড ২৭ গোল করলেন। চেলসির বিপক্ষে সাম্প্রতিক ড্র হওয়া ম্যাচে বাজে পারফরমেন্সের কারণে সমালোচিত হালান্ড যেন জ্বলে ওঠার অপেক্ষায় ছিলেন। গত বছর মার্চে আরবি লিপজিগের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে শেষ ষোলোর দ্বিতীয় লেগের ম্যাচে নায়োকোচিত পারফরমেন্সের পর সিটির জার্সি গায়ে এক ম্যাচে দ্বিতীয়বার পাঁচ গোলের রেকর্ড গড়লেন হালান্ড।
সিটির বড় এই জয়ে অবশ্য অভিজ্ঞ ডি ব্রম্নইনাকেও কৃতিত্ব দিতে হয়। হালান্ড এ সম্পর্কে বলেছেন, 'কেভিন ছিলেন দুর্দান্ত। তার সঙ্গে খেলাটা সবসময়ই আনন্দের। একে অপরের কাছ থেকে কি চাই সেটা আমরা জানি।'
পায়ের ইনজুরির কারণে দুই মাস মাঠের বাইরে থাকার পর এই প্রথম নিজেকে প্রমাণ করলেন হালান্ড। নরওয়েজিয়ান এই তরুণ ফরোয়ার্ড বলেছেন, 'আমি নিজের সেরাটায় ফিরতে চেয়েছি। শেষ পর্যন্ত কিছুটা ভালো অনুভব করছি। এটা সত্যিই দারুণ এক অনুভূতি। আমাদের সময় এসেছে, আমরা সবাই ঘুড়ে দাঁড়িয়েছি। সবদিক থেকে আক্রমণ করতে আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত।'
সিটি বস পেপ গার্দিওলা বলেছেন, 'আমার আর কি বলার আছে। আর্লিং ও কেভিন এ ম্যাচের পার্থক্য গড়ে দিয়েছে। তাদের মধ্যে বোঝাপোড়া দারুণ ছিল। কেভিনের আর্লিংয়ের মতো খেলার প্রয়োজন ছিল, একই ভাবে আর্লিংয়ের কেভিনের মতো।'