গেল বছরের নভেম্বরে দারাজের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয় বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের। এরপর অবশ্য নতুন স্পন্সর পাচ্ছিল না বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। অবশেষে জাতীয় দলের জন্য স্পন্সর পেয়েছে বিসিবি। টেলিকম সেবা প্রদানকারী কোম্পানি রবি আজিয়াটা লিমিটেড এগিয়ে এসেছে বাংলাদেশ দলকে পৃষ্ঠপোষকতা দিতে। গতকাল শুক্রবার মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে আনুষ্ঠানিকভাবে চুক্তি সম্পন্ন হয়। বিসিবির পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজামউদ্দিন চৌধুরী সুজন ও রবির পক্ষে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী রাজীব শেঠি। তৃতীয়বারের মতো বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের স্পন্সর হলো রবি আজিয়াটা লিমিটেড।
অন্য সময় তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে স্পন্সর আসায় কত টাকার চুক্তি হয় সেটা স্পষ্টভাবে জানা যেত না। আনুমানিক বলা হতো। তবে এবার বিসিবি নিজ উদ্যোগে বিজ্ঞাপন দিয়ে স্পন্সর জোগাড় করায় স্পন্সর মানির বিষয়টি প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরী সুজন জানিয়েছেন, সাড়ে তিন বছরের চুক্তিতে (২০২৪ সালের ফেব্রম্নয়ারি থেকে ২০২৭ সালের জুন) বিসিবিকে ৫০ কোটি টাকা দেবে রবি।
আগের চুক্তিগুলোর সঙ্গে তুলনা করে দেখা যায়, স্পন্সর মানি ২০১৫ ও ২০১৭ সালের চেয়ে কমেছে। ২০১৫ সালে রবি দুই বছরের জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের স্পন্সর হয়েছিল। সেই সময় আনুমানিক ৩০ থেকে ৪২ কোটি টাকা দিয়েছিল তারা। এরপর ২০১৭ সালে তিন বছরের জন্য আবার স্পন্সর হয়েছিল রবি। সেবার টাকার অঙ্কটা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে ৬০ থেকে ৬৪ কোটি টাকা হয়েছিল।
জানা যায়, সবশেষ দারাজের কাছ থেকে স্পন্সর মানি হিসেবে বিসিবি পেয়েছিল ৭০ কোটি টাকার মতো। সেখানে সাড়ে তিন বছরের জন্য এবার রবি দিচ্ছে ৫০ কোটি টাকা!
বর্তমান সময়ে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি অনুযায়ী যেখানে ক্রিকেট দলের স্পন্সর মানি বাড়ার কথা সেখানে আরও কমে গেল কিনা? এ বিষয়ে প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরী সুজন বলেন, 'আমাদের মনে হয়েছে অন্যদের তুলনায় এটি ভালো চুক্তি। বর্তমান প্রেক্ষাপট ও অন্যান্য বিষয় মিলিয়ে লাভজনকই মনে হয়েছে। আগ্রহী অন্যান্য পৃষ্ঠপোষকদের সঙ্গেও কথা হয়েছিল আমাদের। সেই তুলনায় মনে হয়েছে রবির সঙ্গে এই চুক্তিটা আমরা করতে পারি।'
বিবিসির পরিচালক ও মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান তানভীর আহমেদ টিটুও মনে করছেন চুক্তিটি লাভজনক হয়েছে, 'আসলে পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনায় টাকার পরিমাণ কমেছে বলা যাবে না। দারাজের সঙ্গে আমাদের আড়াই বছরের চুক্তি ছিল। সে সময় তারা ৪০ কোটি ১০ লাখ টাকা দিয়েছিল। এবার রবি সাড়ে তিন বছরে ৫০ কোটি টাকা দিচ্ছে। সেক্ষেত্রে দারাজের তুলনায় কিন্তু স্পন্সর মানি বেড়েছে।'
এবার অবশ্য শর্ত যুক্ত করে স্পন্সর হয়েছে টেলিকমিউনিকেশন প্রতিষ্ঠানটি। শর্ত হলো- চলতি বছরে জাতীয় দলের অধিনায়ক ও সহ-অধিনায়ক এবং কেন্দ্রীয় চুক্তিতে থাকা কোন খেলোয়াড় অন্য কোনো টেলিকমিউনিকেশন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করতে পারবেন না। অর্থাৎ অন্য টেলিকমিউনিকেশন প্রতিষ্ঠানের কোনোরকম প্রচারণা করতে পারবেন না।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে রাজীব শেঠি বলেন, 'এ দেশের ক্রিকেটের অনেক 'প্রথম' সাফল্যের সঙ্গে রবির নামটি যুক্ত। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি রবির 'পারবে তুমিও' চেতনায় উদ্দীপ্ত হয়ে টাইগাররা আগামীতেও বিশ্বমঞ্চে আরও বড় বড় সাফল্য নিয়ে আসবে। বাংলাদেশ ক্রিকেটের সঙ্গে আবারও নিবিড়ভাবে যুক্ত হওয়ার সুযোগ পেয়ে রবি গর্বিত। সব বাধা পেরিয়ে সামনে এগোনোর এ রোমাঞ্চকর যাত্রায় রবিকে সব সময় পাশে পাবে বাংলাদেশ ক্রিকেট।'
আসন্ন শ্রীলংকা সিরিজের আগেই স্পন্সর পেল দেশের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থা। আগামী সাড়ে তিন বছর জাতীয় পুরুষ ও নারী ক্রিকেট দল ছাড়াও বয়সভিত্তিক দল ও এইচপি দলেরও স্পন্সর থাকবে রবি।