বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) এবার বেশকিছু ম্যাচেই ভালো শুরু করেছিলেন তামিম ইকবাল। কিন্তু ইনিংস লম্বা করতে পারছিলেন না। চট্টগ্রামে নিজভূমে এসে ঝড়ো ফিফটিতে বড় পুঁজি এনে দেন ফরচুন বরিশালকে। এরপর বোলারদের দারুণ নিয়ন্ত্রিত বোলিং। তাতে বিধ্বংসী ব্যাটিং করেও দুর্দান্ত ঢাকাকে জেতাতে পারেননি আলেক্স রস। ঢাকাকে হারের বৃত্তে রেখেই জয় তুলে নিয়েছে বরিশাল। দারুণ এক জয়ে টেবিলের তিন নম্বরে উঠে এলো তামিমের দল।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বুধবার দিনের প্রথম ম্যাচে দুর্দান্ত ঢাকাকে ২৭ রানে হারিয়েছে ফরচুন বরিশাল। প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৮৬ রান করে তারা। জবাবে ২০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৫৯ রানের বেশি করতে পারেনি ঢাকা। মিরপুরে দুই দলের প্রথম লড়াইয়ে ৪০ রানে জিতেছিল বরিশাল।
আর এই জয়ে তিনে থাকা চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সকে স্পর্শ করল তামিম ইকবালের দল। বন্দর নগরীর দলটির মতো নয় ম্যাচে ১০ পয়েন্ট বরিশালের। অন্যদিকে টানা হারের বিব্রতকর রেকর্ডকে আরও সমৃদ্ধ টানা নয় ম্যাচ হেরে তলানিতে রয়েছে ঢাকা। নয় ম্যাচে ১৪ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে রয়েছে রংপুর রাইডার্স।
১৮৭ রানের লক্ষ্য তাড়ায় নেমে সাইফউদ্দিন ও সৈয়দ খালেদ আহমেদের তোপে শুরু থেকেই নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে ঢাকা। ফলে গড়ে ওঠেনি বলার মতো কোনো জুটি। দলীয় ৮০ রানেই সাত উইকেট হারিয়ে হার দেখতে শুরু করে দলটি। কেবল এক প্রান্ত আগলে চেষ্টা করে যান আলেক্স রস। কিন্তু তার চেষ্টা কেবল হারের ব্যবধানই কমিয়েছে।
তাসকিন আহমেদের সঙ্গে অষ্টম উইকেটে ৪৬ রানের জুটি গড়ে আশা দেখাচ্ছিলেন রস। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পেরে ওঠেননি এই অজি ক্রিকেটার। ৪৯ বলে ৫টি চার ও ৭টি ছক্কায় সাজানো হার না মানা ৮৯ রানের ইনিংস খেলেও মাথা নিচু করে মাঠ ছাড়তে হয় তাকে। দলের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১২ রান আসে উইলিয়ামসের ব্যাট থেকে। বরিশালের পক্ষে ৪ ওভার বল করে ২৬ রানের খরচায় ৪টি উইকেট নেন খালেদ। ৪ ওভার বল করে ৩১ রানের বিনিময়ে ৩টি উইকেট পান সাইফউদ্দিন।
এদিন টস জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ে নামে বরিশাল। আহমেদ শেহজাদকে সঙ্গে নিয়ে দারুণ সূচনা করেন তামিম। পাওয়ারপেস্নতে বিনা উইকেটে ৫৪ রান করেন তারা। আরাফাত সানির করা ইনিংসের পঞ্চম ওভারে দুটি করে চার ও ছক্কায় ২১ রান তুলে নেন তামিম। শেষ পর্যন্ত তাদের ওপেনিং জুটিতে আসে ৭৬ রান।
নবম ওভারে বল হাতে নিয়ে এই জুটি ভাঙেন আলাউদ্দিন বাবু। স্স্নগ করতে গিয়ে মিডউইকেটে ব্যক্তিগত ২৪ রানে ক্যাচ তুলে দেন শেহজাদ। এরপর সৌম্য সরকারকে নিয়ে দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন তামিম। গড়েন ৪৮ রানের জুটি। এ জুটিও ভাঙেন আলাউদ্দিন। তার স্স্নোয়ারে সাইফ হাসানের হাতে ক্যাচ দেওয়ার আগে তামিম খেলেন '৭১ রানের ইনিংস। ৪৫ বলের ইনিংসে ৭টি চারের সঙ্গে মেরেছেন ৪টি ছক্কা। তাতে বিপিএলে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ছক্কার সেঞ্চুরি করেছেন এই ওপেনার।
এরপর মাহমুদউলস্নাহকে ফিরিয়ে নিজের তৃতীয় শিকার ধরেন আলাউদ্দিন। সেট হলেও ইনিংস লম্বা করতে পারেননি সৌম্য সরকার। ২৩ বলে ২৮ রান করে শরিফুলের শিকার হন তিনি। পরের ওভারে মুশফিকুর রহিম ও মেহেদী হাসান মিরাজকে তুলে নেন তাসকিন আহমেদ। ফলে শেষদিকে রানের গতিতে লাগাম দিতে পেরেছিল তারা। কিন্তু শেষ ওভারে সাইফউদ্দিনের দারুণ এক ক্যামিওতে লড়াকু পুঁজিই পেয়ে যায় বরিশাল। শরিফুলের করা সে ওভারে দুটি করে চার ও ছক্কায় ২৩ রান আদায় করে নেন সাইফউদ্দিন। মাত্র ৬ বলে ২৩ রানের ক্যামিও খেলেন এই অলরাউন্ডার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ফরচুন বরিশাল : ২০ ওভারে ১৮৬/৬ (শেহজাদ ২৪, তামিম ৭১, সৌম্য ২৮, মাহমুদউলস্নাহ ১৩, মালিক ১০*, মুশফিক ১, সাইফউদ্দিন ২৩*; মোসাদ্দেক ০/২৬, শরিফুল ১/৪০, তাসকিন ২/৩০, আরাফাত ০/২১, উইলিয়ামস ০/২১, আলাউদ্দিন ৩/৩০, মেহেরব ০/১৫)
দুর্দান্ত ঢাকা : ২০ ওভারে ১৫৯/৮ (নাঈম ১০, রসিংটন ৪, সাইফ ৩, রস ৮৯*, উইলিয়ামস ১২, মেহেরব ৬, মোসাদ্দেক ৮, আলাউদ্দিন ৩, তাসকিন ১০, আরাফাত ৮*; মহারাজ ১/১৯, সাইফউদ্দিন ৩/৩১, ম্যাকয় ১/১৭, খালেদ ৩/২৬)
ফল : ফরচুন বরিশাল ২৭ রানে জয়ী
ম্যাচসেরা : তামিম ইকবাল (বরিশাল)