ফেডারেশনকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে মৌসুমের প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ঐতিহ্যবাহী ঢাকা আবাহনী ও মোহামেডানের। গ্রম্নপ পর্বের এই ম্যাচে প্রত্যাবর্তনের দারুণ এক গল্প লিখেছে মোহামেডান। প্রথমার্ধে এক গোল করে এগিয়ে যাওয়া ঢাকা আবাহনীকে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে মাত্র ৩ মিনিটের ব্যবধানে দুই গোল দিয়ে ম্যাচটা নিজেদের করে নিয়েছে সাদা-কালোরা। মঙ্গলবার ফেডারেশন কাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে গোপালগঞ্জের শেখ ফজলুল হক মণি স্টেডিয়ামে আবাহনীকে ২-১ গোলে হারায় মোহামেডান। জোড়া গোল করেন নাইজেরিয়ান মিডফিল্ডার ইমানুয়েল সানডে। এই জয়ে ৯ পয়েন্ট সংগ্রহ করে 'বি' গ্রম্নপের চ্যাম্পিয়ন হয় সাদা-কালোরা। গত মৌসুমে ফেডারেশন কাপের ফাইনালে টাইব্রেকারে আবাহনীকে ৪ (৪)-৪(২) গোলে হারিয়ে ১৪ বছর পর শিরোপা জিতেছিল মোহামেডান।
মঙ্গলবার দিনের অন্য ম্যাচে মুন্সীগঞ্জের বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লে. মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে 'বি' গ্রম্নপের অন্য ম্যাচে চট্টগ্রাম আবাহনী ৩-০ গোলে হারায় ব্রাদার্স ইউনিয়ন লিমিটেডকে।
দুই ম্যাচের মধ্যে গোপালগঞ্জে অনুষ্ঠিত আবাহনী-মোহামেডানের হাইভোল্টেজ ম্যাচটিতেই নজর ছিল দেশের ফুটবল দর্শকদের। দুই দলই আগেই শেষ আট নিশ্চিত করে ফেলেছিল। তবে এই ম্যাচের ফলাফলের ওপর নির্ভর করছিল কোন দল হবে 'বি' গ্রম্নপের চ্যাম্পিয়ন, অন্যদিকে ম্যাচটা ছিল দুই ঐতিহ্যবাহীর মর্যাদার লড়াইও। শুরু থেকেই হাড্ডাহাড্ডি লড়াই শুরু করে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী। তবে প্রথমার্ধে এগিয়ে যায় আবাহনী। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে দারুণ প্রত্যাবর্তন করে মোহামেডান। ৫ মিনিটে মোহামেডানের অধিনায়ক উজবেক মিডফিল্ডার মোজাফ্ফারভের ভুল পাসে বল পেয়ে যান আবাহনীর গ্রানাডিয়ান ফরোয়ার্ড কর্নেলিয়াস স্ট্রুয়ার্ট। তবে কোনো বিপদ ঘটার আগেই মোজাফফারভ নিজেই এগিয়ে গিয়ে বল ক্লিয়ার করেন। ১৬ মিনিটে বক্সে জটলার মধ্যে বল পেয়ে আবাহনীর জনাথন ও ওয়াশিংটন দু'জনেই চেষ্টা করেছিলেন। তবে ভাঙতে পারেননি মোহামেডানের শক্ত রক্ষণ। ৩৯ মিনিটে ম্যাচে লিড নেয় ঢাকা আবাহনী। মোহামেডানের হাসান মুরাদের পা থেকে বল কেড়ে নিয়ে সতীর্থকে পাস বাড়িয়ে দেন ওয়াশিংটন বান্দ্রাও। বল বুঝে নিয়ে ডানপায়ের জোড়াল শটে মোহামেডানের জাল কাঁপানো কর্নেলিয়াস স্ট্রুয়ার্ট (১-০)। এগিয়ে থেকেই বিশ্রামে যায় আবাহনী।
তবে পিছিয়ে পড়লেও এতটুকু আত্মবিশ্বাস হারায়নি আলফাজ আহমেদের শিষ্যরা। দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নামার আগে শিষ্যদের কানে যেন আরও বেশি উজ্জীবিত হওয়ার মন্ত্রটাই দিয়েছিলেন মোহামেডানের কোচ। এই অর্ধের শুরু থেকেই ম্যাচে ফেরার চেষ্টা চালিয়ে গেছে তারা। মাত্র ৩ মিনিটের ব্যবধানে দুটি গোলও আদায় করে নেয়। ৫১ মিনিটে ম্যাচে সমতা আনে মোহামেডান। প্রায় মাঝমাঠ থেকে মোজাফ্ফারভের বাড়িয়ে দেওয়া চলন্ত বল বক্সে পেয়ে ডানপায়ের শটে আগুয়ান গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন মোহামেডানের নাইজেরিয়ান মিডফিল্ডার ইমানুয়েল সানডে (১-১)। কিছুক্ষণ পরই মোজাফ্ফারভের শট বারে লেগে ফেরত আসে। ৫৪ মিনিটে ডানপ্রান্ত থেকে ডিফেন্ডার হাসান মুরাদের লম্বা থ্রোইনে বক্সে পেয়ে হেড করেন আইভরি কোস্টের মিডফিল্ডার দোসো সিদিক। তার দুর্দান্ত গতির উড়ন্ত বল ছিল নিশ্চিত গোল, সেই বলেই ফাইনাল টাচ দেন ইমানুয়েল সানডে (২-১)। ৭৪ মিনিটে ডানপ্রান্ত থেকে জনাথনের কর্নার বক্সে পেয়ে মাটি কামড়ানো শট নেন মোহাম্মদ রহিমউদ্দিন। তবে বল আটকে যায় প্রতিপক্ষের রক্ষণে। ৭৮ মিনিটে বা প্রান্ত থেকে ওয়াশিংটন বান্দ্রাওয়ের শটটি প্রায় ঢুকেই যাচ্ছিল মোহামেডানের জালে। তার আগেই বল ক্লিয়ার করেন মোহামেডানের গোলরক্ষক শাকিব আল হাসান। ৮৮ মিনিটে আবাহনীর এক ফুটবলারের দূরপালস্নার শট গ্রিপ করেন শাকিব। প্রথমে এগিয়ে থাকলেও এরপর আর ম্যাচে ফেরা হয়নি আবাহনীর। রেফারি শেষ বাঁশি বাজালে মৌসুমের প্রথম ঢাকা ডার্বিটি জিতে মাঠ ছাড়ে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব।