অপরাজিত বাংলাদেশের সামনে সেই ভারত
প্রকাশ | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
ক্রীড়া প্রতিবেদক
সাফ অনূর্ধ্ব ১৯ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের পর্দা নামতে যাচ্ছে আজ। সন্ধ্যা ৬টায় কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে শিরোপা লড়াইয়ে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন স্বাগতিক বাংলাদেশের মুখোমুখি হচ্ছে ভারত। এবারের আসরে এটি দুই দলের দ্বিতীয় দেখা। গ্রম্নপ পর্বে স্বাগতিকদের কাছে ১-০ গোলের ব্যবধানে হেরেছিল ভারত। ফাইনালে ভারতকে সমীহ করলেও নিজেদের সর্বোচ্চ দিয়ে শিরোপা ধরে রাখার প্রত্যয় বাংলাদেশ দলের কোচ সাইফুল বারী টিটুর।
এর আগের আসরটি হয়েছিল অনূর্ধ্ব ২০ পর্যায়ে। সেই আসরের ফাইনালে নেপালকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ। ভারত ওই আসরে অংশ নিলেও গ্রম্নপ পর্ব পার হতে পারেনি। তবে এবারের চিত্র ভিন্ন। নেপালই এবার বিদায় নিয়েছে গ্রম্নপ পর্ব থেকে। ভারতের দলে আছে চারজন অনূর্ধ্ব ১৭ বিশ্বকাপে খেলা ফুটবলার। রাউন্ড রবিন লিগ পদ্ধতিতে এবার অংশ নিয়েছে চার দল। এর মধ্যে ভুটান গ্রম্নপে সব থেকে খারাপ ফলাফল করে। ৩ ম্যাচ খেলে একটিতে জিততে পারেনি তারা। ভারত নিজেদের প্রথম ম্যাচে ভুটানকে ১০-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে শুরু করেছিল। পরের ম্যাচে তারা প্রতিপক্ষ হিসেবে পায় বাংলাদেশকে। স্বাগতিকদের সঙ্গে ৯০ মিনিট লড়াই করলেও ইনজুরি টাইমে স্বাগরিকার গোলে ম্যাচটা নিজেদের করে নেয় সাইফুল বারি টিটুর শিষ্যরা। সেই সঙ্গে এক ম্যাচ হাতে রেখে ফাইনালটাও নিশ্চিত করে ফেলে বাংলাদেশ। গ্রম্নপের শেষ ম্যাচে নেপালকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে ফাইনালে বাংলাদেশের সঙ্গী হয় ভারত। অন্যদিকে বাংলাদেশ নিয়ম রক্ষার ম্যাচে ভুটানের বিপক্ষে খেলতে নামে বেঞ্চের ফুটবলারদের নিয়ে। উদ্দেশ্য দলের নিয়মিত ফুটবলারদের বিশ্রাম দেওয়া ও বেঞ্চের ফুটবলারদের শক্তিটাও পরখ করে দেখা। সেই ম্যাচেও ভুটানকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে নিজেদের শক্তির জানান দিয়েছে বাংলাদেশ। বয়সভিত্তিক এই প্রতিযোগিতার গত চার আসরে তিনবার চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ। 'চারে চার' হয়নি, ২০২২ সালে ভারতের বিপক্ষে ফাইনালে হেরে যাওয়ায়। এই দুই দল এবার ফের মুখোমুখি। যদিও কোনো কোচের কণ্ঠে প্রতিশোধের দামামা বাজছে না, কিন্তু শিরোপা লড়াইয়ের উত্তাপ তাতে কমছে না একটুও।
গ্রম্নপ পর্বের দেখায় শেষ মুহূর্তের গোলে হারলেও ওই ম্যাচে আক্রমণে ছড়ি ঘুরিয়েছিল ভারতই। অনেক সুযোগ নষ্ট করার কারণেই সেদিন লক্ষ্যপূরণ হয়নি তাদের। এবার ফাইনাল নিয়ে যদিও দলটির কোচ শুক্লা দত্তের কণ্ঠে প্রতিশোধের ঝাঁঝ নেই, কিন্তু ওই হারের ক্ষত যে এখনো শুকায়নি, তা পরিষ্কার, 'প্রতিশোধ এই মানসিকতা আমার মধ্যে নেই। খেলতে এসেছি, খেলব। আবার বাংলাদেশের সঙ্গে দেখা হচ্ছে (ফাইনালে), সেটাই বড় ব্যাপার। আমারও ভালো লাগবে বাংলাদেশের সঙ্গে আবারও খেলতে, একটা ম্যাচ ওদের বিপক্ষে খেলেছি (হেরেছি), দেখা যাক, ফাইনালে কী হয়।'
২০২২ সালে অনূর্ধ্ব-১৮ বছর বয়সিদের আসরে রাউন্ড রবিন লিগ ও ফাইনাল- দুই ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে একই ব্যবধানে (১-০) হেরেছিল বাংলাদেশ। সেই হারের প্রতিশোধ নেওয়ার হুংকার ছাড়লেন না টিটুও, 'অতীত প্রসঙ্গ আমি আসলে খুব একটা অনুভব করি না, যেহেতু আমি ওই সময় দায়িত্বে ছিলাম না। আপনি যদি কোথাও না থাকেন, তখন আপনি ওই সময়ের উত্তাপটা অনুভব করবেন না। এটা ভিন্ন টুর্নামেন্ট, তুলনামূলক ভালো দলটিই জিতবে।'
বাংলাদেশ কোচের পরের কথাগুলো অবশ্য এতটা সাদামাটা নয়। সেখানে ভারতের প্রতি সমীহ থাকলেও তাদের হারিয়ে শেষটা রাঙানোর লক্ষ্য বেশ স্পষ্ট, 'ভারতের বিপক্ষে প্রথম যে ম্যাচটা খেলেছিলাম, সেখানেই তো বুঝেছিলাম কঠিন প্রতিপক্ষ। খুবই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচ হয়েছিল ওটা। ফাইনালেও ভারতকে সমীহ করতে হবে। ওভাবে নিজেদের খেলাটা খেলতে হবে। ফাইনাল এমন একটা বিষয়, আপনার শরীর চলবে না, কিন্তু মন চাইবে ভালো করার। ভারত ক্লান্ত থাকলেও ওভাবেই আসবে, আমাদের ওভাবেই খেলতে হবে। ফাইনালে যে কোনো দলই জিততে পারে। যারাই চ্যাম্পিয়ন হয়, সেরা দলকে হারিয়েই চ্যাম্পিয়ন হতে হয়।'
এবারের আসরে গোলের পরিসংখ্যানে ভারতের আক্রমণভাগ সবচেয়ে শক্তিশালী। তিন ম্যাচে তারা গোল দিয়েছে ১৪টি, হজম করেছে মাত্র ১টি। সেখানে তিন ম্যাচে বাংলাদেশ ৮টি দিয়ে খেয়েছে ১টি।
রাউন্ড রবিন লিগে হ্যাটট্রিক উপহার দিয়েছেন ভারতের পূজা, শিবানি দেবি। ৪ গোল নিয়ে পূজা গোলদাতার তালিকায় শীর্ষে। বাংলাদেশে হয়ে সর্বোচ্চ ৩ গোল করেছেন সাগরিকা; বাকি পাঁচ গোল করেছেন- ঐশি খাতুন (২টি), মুনকি আক্তার, নুসরাত জাহান মিতু ও তৃষ্ণা রানী।
সবশেষ ভুটানের বিপক্ষে ৪-০ গোলে বাংলাদেশ জিতেছে বেঞ্চের ৯ খেলোয়াড় দিয়ে একাদশ সাজিয়ে। তাই ফাইনালে সবাইকে সতেজ অবস্থাতেই পাচ্ছেন কোচ। টিটুর মনে হচ্ছে, অভীষ্ট লক্ষে পৌঁছতে হলে মাঝমাঠেই ভেস্তে দিতে হবে ভারতের আক্রমণ। পাশাপাশি স্বীকৃতি পাওয়ার তাড়নার বীজও তিনি বুনে দিচ্ছেন মেয়েদের মনে, 'ওদের আক্রমণভাগে কয়েকজন দ্রম্নতগতির খেলোয়াড় আছে। মাঝমাঠে ওদের পাসগুলোর জোগান নষ্ট করে দিতে হবে। তবে ফুটবল মজার খেলা (ফানি গেম)। অনেক কিছুই এখানে হতে পারে। কিন্তু শিরোপা যেন আমাদের হাতছাড়া না হয়, আমাদের তো এটার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টাই থাকবে। আপনারা জানেন, মেয়েদের স্বীকৃতিরও একটা ব্যাপার আছে। চ্যাম্পিয়ন হলেই ভালো স্বীকৃতি পায়, প্রধানমন্ত্রীও স্বীকৃতি দেয়; মেয়েরা সেই সুযোগটা তো নিতে চাইবেই।'