শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে কুমিলস্নাকে হারিয়ে রংপুরের তৃতীয় জয়
প্রকাশ | ৩১ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
ক্রীড়া প্রতিবেদক
হার দিয়ে আসর শুরু করে চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা নতুন কিছু নয় কুমিলস্না ভিক্টোরিয়ান্সের কাছে। গত আসরেও প্রথম ম্যাচ হেরে শিরোপা জিতেছিল তারা। চলতি আসরেও চার ম্যাচ খেলে মাত্র একটিতে জয় পেয়েছে কোচ সালাউদ্দিনের শিষ্যরা। চতুর্থ ম্যাচে রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে ৮ রানে হেরেছে কুমিলস্না। পাঁচ ম্যাচের রংপুরের তৃতীয় জয় এটি, চার ম্যাচে কুমিলস্নার জয়-হার দুটি করে।
লক্ষ্যটা খুব বেশি কঠিন ছিল না। রান পাচ্ছিল ব্যাটাররাও। তবে রংপুর রাইডার্সের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে হাতে পর্যাপ্ত উইকেট থাকলেও মন্থর ব্যাটিংয়ে জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় রান তুলতে ব্যর্থ হয়েছে কুমিলস্না ভিক্টোরিয়ান্স। সিলেটে মঙ্গলবার টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে কুমিলস্না ভিক্টোরিয়ান্সকে ১৬৬ রানের লক্ষ্য দেয় রংপুর রাইডার্স। জবাব দিতে নির্ধারিত ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৫৭ রান সংগ্রহ করে তারা। এতে ৮ রানের জয় পায় রংপুর রাইডার্স। হেভিওয়েট দুই দলের লড়াইটা শেষ পর্যন্ত হয়ে গেল একপেশে।
বিশ-বিশ চলিস্নশ ওভারের ম্যাচ রূপ নিয়েছিল মূলত তিন-তিন ছয় ওভারের লড়াইয়ে। ১৭ ওভার শেষেও রংপুরের স্কোর বোর্ডের ছিল রুগ্ণ চেহারা। কিন্তু শেষ তিন ওভারে তান্ডব চালিয়ে তারা তুলে ফেলে ৫২ রান। রান তাড়ায় শেষ তিন ওভারে কুমিলস্নার প্রয়োজন পড়ল ঠিক ৫০ রানের। তারা পারেনি সেই সমীকরণ মেলাতে। আজমাতউলস্নাহ ওমরজাইয়ের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সের পথ ধরে দারুণ এক জয় আদায় করে নিয়েছে রংপুর। ২০ বলে ৩৬ রানের অপরাজিত ইনিংসের পর বল হাতে দুই উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা আজমাতউলস্নাহ ওমরজাই। এবারের আসরে দ্বিতীয়বার ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতলেন আফগান এই অলরাউন্ডার।
শক্তি-সামর্থ্যে বিপিএলের বড় দুই দলের লড়াই উত্তেজনা ছড়িয়েছে বেশ। সেখানে চ্যাম্পিয়ন কুমিলস্নাই আত্মসমর্পণ করেছে। ম্যাচ হারলে কুমিলস্নার হয়ে ব্যক্তিগত অর্জন রয়েছে মাহিদুল ইসলামের। ৪০ ম্যাচের টি২০ ক্যারিয়ারে প্রথম ফিফটির স্বাদ পেয়েছেন মাহিদুল ইসলাম। তবে চারটি চার ও তিন ছক্কার পরও ৬৩ রান করতে ৫৫ বল খেলে ফেলেন তিনি।
টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি রংপুরের। এদিনও ব্যাট হাতে ব্যর্থ হন ব্রেন্ডন কিং। ১ চার ও সমান ছক্কায় এ ব্যাটার ১২ বলে ১৪ রান করে স্টাম্পিং হন তানভীর ইসলামের বলে। এরপর ৫৫ রানের জুটি গড়ে তোলেন ফজলে মাহমুদ রাব্বি ও বাবর আজম।
১১তম ওভারের তৃতীয় বলে গিয়ে আউট হয়ে যান ৩৬ বলে ৩৭ রান করা বাবর আজম। এরপর বেশিক্ষণ টেকেননি ২১ বলে ৩০ রান করা ফজলে রাব্বিও। রংপুরের রান বাড়ে মূলত শেষদিকে এসে। শেষ তিন ওভারে ৪২ রান করে তারা। এর মূল ভূমিকায় থাকেন আফগানিস্তানের অলরাউন্ডার আজমতউলস্নাহ ওমরজাই। ৩ চার ও ২ ছক্কায় ২০ বলে ৩৬ রান করেন তিনি। এছাড়া ৬ বলে ১ ছক্কা ও চারে ১৫ রান করেন নুরুল হাসান। মাঝখানে এসে ৭ বলে ১৩ রান করেন মোহাম্মদ নবি। কুমিলস্নার পক্ষে ৩ ওভারে ২০ রান দিয়ে দুই উইকেট নেন রেমন রেইফার। একটি করে উইকেট পান তানভীর, মুস্তাফিজুর রহমান ও খুশদিল শাহ।
রান তাড়ায় শুরুতেই হোঁচট খায় কুমিলস্না ভিক্টোরিয়ান্স। দলটির হয়ে ইনিংস উদ্বোধনে নামেন লিটন দাস ও মোহাম্মদ রিজওয়ান। ম্যাচের প্রথম ওভারেই এ জুটি ভাঙেন আজমতউলস্নাহ ওমারজাই। এতে গোল্ডেন ডাক খেয়ে ড্রেসিং রুমের পথ ধরেন লিটন (০)।
ইনিংস বড় করতে পারেনি আরেক ওপেনার মোহাম্মদ রিজওয়ানও। ২১ বলে ১৭ রান করে নবিকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে সাকিবের হাতে কাটা পড়েন এই পাকিস্তানি ব্যাটার। এরপর তাওহিদ হৃদয়কে সঙ্গে নিয়ে রান তুলতে থাকেন মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন। ৪২ বলে নিজের ফিফটি তুলে নেন এই ডান হাতি ব্যাটার। দুজনের ব্যাটে জয়ের পথে এগিয়ে জেতে থাকে বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা।
১৭তম ওভারে গিয়ে আউট হওয়ার আগে ৪টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৫৫ বলে ৬৩ রান করে আউট হন মাহিদুল ইসলাম। এরপরও ম্যাচ জমিয়ে তুলেছিলেন খুশদিল শাহ। আজমতউলস্নাহ ওমরজাইয়ের করা ১৮তম ওভারে প্রথম বলেই ছক্কা হাঁকান তিনি। তৃতীয় বলও হাওয়ায় ভাসিয়ে বাউন্ডারি ছাড়া করেন। কিন্তু পরের বলেই ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে থার্ডম্যানে ফজলে রাব্বির হাতে ক্যাচ দেন খুশদিল। ৮ বলে ১৩ রান করে ফিরতে হয় তাকে। এরপর কুমিলস্নার জন্য ম্যাচ কঠিন হয়ে যায় স্বাভাবিকভাবেই।
শেষ ওভারে দলটির দরকার ছিল ২৮ রান। হাসান মাহমুদ, মোহাম্মদ নবী ও ওমরজাইয়ের ওভার ততক্ষণে শেষ হয়ে যায়। প্রথম বলে ওয়াইড হলেও পরের বলে রান আউট হয়ে যান তাওহিদ হৃদয়। দ্বিতীয় রান নেওয়ার সময় সরাসরি থ্রোতে মিড উইকেট থেকে তার স্টাম্প ভাঙেন নবি। ২৮ বলে ৩৯ রান করে ফিরতে হয় হৃদয়কে। পরের বলে লং অনে আমির জামেলের ক্যাচ নেন বাবর আজম। এরপর টানা দুই বলে দুই ছক্কা হাঁকান জাকের আলী। কিন্তু তখন আর জয়ের সুযোগ ছিল না কুমিলস্নার সামনে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
রংপুর রাইডার্স
২০ ওভারে ১৬৫/৫
(কিং ১৪, বাবর ৩৭, ফজলে মাহমুদ ৩০, শামীম ১৪, ওমরজাই ৩৬*, নবি ১৩, সোহান ১৫*; তানভির ১/১৯, আলিস ০/২৭, মুস্তাফিজ ১/৪৮, জামাল ০/২১, খুশদিল ১/২৫, রিফার ২/২০)।
কুমিলস্না ভিক্টোরিয়ান্স
২০ ওভারে ১৫৭/৬
(রিজওয়ান ১৭, লিটন ০, মাহিদুল ৬৩, হৃদয় ৩৯, খুশদিল ১৩, রিফার ১*, জামাল ০, জাকের ১৮*; ওমরজাই ২/৩১, মুরাদ ০/২৫, সাকিব ১/৪১, হাসান ১/২৩, নবি ১/১৯)।
ফল
রংপুর রাইডার্স ৮ রানে জয়ী।
ম্যাচসেরা
আজমাতউলস্নাহ ওমরজাই।