মিরপুরের শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের পিচ নিয়ে প্রায়ই নেতিবাচক কথা শোনা যায়। এই তো নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সবশেষ সিরিজেই ডিমেরিট পয়েন্ট জুটেছে এই মাঠের কপালে। কিংবা দক্ষিণ আফ্রিকা-ভারত টেস্ট সিরিজে কেপটাউন টেস্টের কথাই ধরা যাক। ব্যাটারদের জন্য বধ্যভূমি হয়ে ওঠা পিচে মাত্র দেড় দিনে টেস্ট শেষ হয়ে গিয়েছিল। টেস্ট ক্রিকেটে এমন বিরূপ পিচ বানানোর ঘটনা অবশ্য নতুন নয়।
ক্রিকেট এমন একটা খেলা যেখানে ফল নির্ধারণ করতে ২২ গজের পিচ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারে। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে স্বাগতিক দলগুলো প্রায়ই নিজেদের শক্তিমত্তা অনুযায়ী পিচ তৈরি করে থাকে। টেস্ট ক্রিকেটে পিচের ভূমিকা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। তবে মাঝেমধ্যে সুবিধা নেওয়ার বিষয়টা এমন পর্যায়ে চলে যায় যে, উল্টো বুমেরাং হয়ে ওঠে। এমন ভূরিভূরি উদাহরণ খুঁজলেই পাওয়া যাবে। সুবিধা নিতে গিয়ে পিচের এমন অবস্থা দাঁড়ায় যে, তা আর খেলারই উপযুক্ত থাকে না। পাঁচ দিন তো দূরের কথা, ম্যাচ তিন দিনও টেকে না।
তবে ভয়ংকর পিচের গল্প বলতে গেলে জ্যামাইকার স্যাবাইনা পার্কের কথা চলে আসবেই। টেস্ট ক্রিকেটের সবচেয়ে ভয়ংকরতম পেস বোলিং প্রদর্শনীর সঙ্গে যে, জুড়ে গেছে এই মাঠের নাম। যে মাঠে মাত্র ৬২ বলেই শেষ হয়ে গিয়েছিল পাঁচ দিনের টেস্ট ম্যাচ!
সালটা ১৯৯৮। ২৯ জানুয়ারি স্যাবাইনা পার্কে সিরিজের প্রথম টেস্টে মুখোমুখি মাইক আথারটনের ইংল্যান্ড ও ব্রায়ান লারার ওয়েস্ট ইন্ডিজ। পিচ পরিদর্শনে নেমে মাইক হোল্ডিং জানালেন উইকেটে জায়গায় জায়গায় ঘাস আছে এবং অসমান বাউন্স পাবেন বোলাররা। টস জিতলে আগে ব্যাটিং নেওয়াটাই মোক্ষম। টস জিতে মাইক আথারটন সেই কাজটাই করলেন।
তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক ব্রায়ান লারা বললেন
ভিন্ন কথা। টস জিতলে তিনি আগে ফিল্ডিং নিতেন।
কারণ পিচের চরিত্র তার কাছে কিছুটা রহস্যময় মনে হচ্ছিল।
ইংল্যান্ড ব্যাটিংয়ে নামলে লারার কথাই ফলে গেল। স্যাবাইনা পার্কের পিচ যে সাক্ষাৎ বধ্যভূমি। রান করা তো দূরের কথা এই মাঠে ব্যাট হাতে অক্ষত দাঁড়িয়ে থাকাই তো বড় ব্যাপার। কোর্টনি ওয়ালশ আর কার্টলি অ্যামব্রোসের জুটি ততক্ষণে সংহারি মূর্তি ধারণ করেছে। একেকটা বল আগুনের গোলার মতো ছুটে এসে কখনো লাফিয়ে উঠছে কাঁধ-মাথা বরাবর, তো কোনোটা হাঁটুর নিচেই রয়ে যাচ্ছে।
খাবি খেতে থাকা অ্যালেক স্টুয়ার্ট তো বার দুয়েক কাঁধে আঘাতও পেলেন। ওয়ালশের বলে আথারটন ২ রানে ও মার্ক বুচার রানের খাতা খোলার আগেই বিদায় নিলেন। উইকেটে আসা নাসের হুসেইনকে স্বাগত জানাতে এগিয়ে আসা অ্যালেক স্টুয়ার্ট বললেন, 'আজ শনিবার, ঘড়িতে আটটা বাজে, এটা একটা জুয়া!'
এদিন ঘণ্টাখানেকের মাঝেই মোট ছয়বার মাঠে আসতে হয়েছে ইংল্যান্ড দলের ফিজিওকে। দিতে হয়েছে আহত খেলোয়াড়দের শুশ্রূষা।
তবে নাসের বেশিক্ষণ টেকেননি। ১৮ বলে ১ রান করেই অ্যামব্রোসের শিকারে পরিণত হন তিনি। উইকেটে আসেন গ্রাহাম থর্প। স্টুয়ার্টের সঙ্গে কিছুক্ষণ উইকেটে খাবি খান তিনিও। ১৭ রান তুলতেই ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলেছে ইংল্যান্ড। এর মধ্যেই অবশ্য এই ম্যাচের ভাগ্য নিয়ে কানাঘুষা শুরু হয়ে গেছে। এগিয়ে আসেন মাঠের দুই আম্পায়ার স্টিভ বাকনার ও শ্রীনিবাস ভেঙ্কটরাঘবন। আলোচনার পর খেলা শেষ করে দেন সেখানেই।
ম্যাচের বয়স তখন সবে এক ঘণ্টার কিছু বেশি আর মাঠে গড়িয়েছে মাত্র ৬২ বল! টেস্ট ইতিহাসে এটিই দ্বিতীয় সংক্ষিপ্ততম টেস্টের রেকর্ড।