বাবর ম্যাজিকে জিতল রংপুর
প্রকাশ | ২৪ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
ক্রীড়া প্রতিবেদক
সিলেটকে অল্প রানে গুটিয়ে দিয়ে কাজটা আগেই সহজ করে রেখেছিলেন রংপুরের বোলাররা। তবে মামুলি লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে বেশ বড়সড় ধাক্কা খায় রংপুর রাইডার্স। সিলেটের বোলিং তোপে মাত্র ৩৯ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে একপ্রকার ছিটকে পড়েছিল রংপুর রাইডার্স। তাতে স্বল্প পুঁজি নিয়েও জয়ের আশা জেগেছিল সিলেট শিবিরে। কিন্তু বাবর আজম ও আজমতউলস্নাহ ওমরজাই মিলে দাপুটে ব্যাটিংয়ে মাশরাফিদের নিরাশ করে রংপুরকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন। ওমরজাই ম্যাচসেরা নির্বাচিত হন।
মঙ্গলবার হোম অব ক্রিকেট মিরপুরে টস জিতে সিলেটকে ব্যাটিংয়ে আমন্ত্রণ জানায় রংপুর। ব্যাটিংয়ে নেমে শেখ মেহেদী-রিপন মন্ডলদের বোলিং তোপে ৮ উইকেটে ১২০ রানের মামুলি পুঁজি দাঁড় করায় সিলেট। জবাবে লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে পাকিস্তানি ব্যাটার বাবর আজমের দায়িত্বশীল ইনিংসের ১০ বল বাকি থাকতেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় রংপুর।
সিলেটের ছুড়ে দেওয়া মামুলি লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই উইকেট হারায় রংপুর। রিচার্ড এনগারাভাকে বলে সজোরে শট হাঁকাতে গিয়ে গালি পয়েন্টে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন রনি তালুকদার। ৭ বলে মাত্র ৬ রানে ফেরেন এই ওপেনার। পরের ওভারেই ফেরেন ব্রেন্ডন কিং। ৫ বল মোকাবিলায় রানের খাতাই খুলতে পারেননি তিনি। গত ম্যাচের মতো এই ম্যাচেও ডাক মারেন তিনি। তাকে ফিরিয়ে চিরচেনা নাগিন ভঙ্গিমায় উলস্নাসে মাতেন নাজমুল ইসলাম অপু।
পাওয়ার পেস্নতে অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহানের উইকেটও হারায় রংপুর। তরুণ তানজিম সাকিবের অফ-সাইডের বাইরের বলে ডিপ স্কয়ার লেগে ক্যাচ তুলে দেন উইকেটকিপার এই ব্যাটার। এক ওভার বাউন্ডারিতে মাত্র ৮ রানের ইনিংস উপহার দেন তিনি।
ম্যাচের সপ্তম ওভারে ৩ উইকেট শিকার করে পুরো ম্যাচের চিত্র পাল্টে দেন লঙ্কান স্পিনার দুশান্থ হেমান্থ। এই ওভারে ওভার হ্যাটট্রিক করেন তিনি। ৪ বলের মধ্যে শামীম হোসেন পাটোয়ারি, মোহাম্মদ নবি ও শেখ মেহেদীকে ফেরান তিনি। তিনজনই পড়েন লেগ-বিফোরের ফাঁদে। এতে দলীয় ৩৯ রানের মধ্যেই ৬ ব্যাটারকে হারিয়ে ফেলে দলটি।
এরপর সেখান থেকে দলকে টেনে নেওয়ার দায়িত্ব নেন বাবর আজম ও আফগান ব্যাটার ওমরজাই। ঠান্ডা মাথায় রংপুরকে পথ দেখান এই দুই ব্যাটার। ক্রমেই ম্যাজিশিয়ান বনে গিয়ে রানের চাকা সচল রাখেন সাবেক পাকিস্তানি অধিনায়ক। দেখেশুনে নিজের হাফ-সেঞ্চুরিও তুলে নেন তিনি। মূলত বাবর ম্যাজিকেই জয়ের পথ সহজ হয়েছে রংপুরের। আর দ্য গ্রিনম্যানদের সাবেক এই দলপতিকে যোগ্য সঙ্গ দিয়ে শেষ পর্যন্ত ৩ ছক্কা ও ২ চারে ৪৭ রানে অপরাজিত থেকেছেন ওমরজাই। এর মধ্য দিয়ে আসরের প্রথম জয়ের স্বাদ পেল রংপুর।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা মোটেই ভালো হয়নি সিলেট স্ট্রাইকার্সের। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই ওপেনার মিঠুনকে হারায় দলটি। শেখ মেহেদীর বলে স্টাম্পিংয়ের শিকার হয়ে ৩ বলে ৫ রানে ফেরেন সিলেটের সহ-অধিনায়ক। তিনে নেমে খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি দু'টি পাতা একটি কুঁড়ির দলপতি মাশরাফি বিন মর্তুজাও। মিঠুনের ফেরার ওভারেই বাউন্ডারিও হাঁকান জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক। তবে পরের বলেই রান-আউটের ফাঁদে পড়েন ম্যাশ। সহজ সিঙ্গেল তাড়া করতে গিয়ে ৭ বলে ৬ রান করে প্যাভিলিয়নে ফেরেন তিনি।
পাওয়ার পেস্ন'র শেষ ওভারে ইয়াসির আলী চৌধুরী রাব্বিকেও ফেরান মেহেদী। মেহেদীর বলে লং অনে মোহাম্মদ নবির হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। সাজঘরে ফেরার আগে খেলেন ৬ বলে ৯ রানের ছোট ইনিংস। এরপর সপ্তম ওভারেই জাকির হাসানের উইকেটও হারায় সিলেট। নবির বলে স্টাম্পিংয়ের শিকার হন এই ব্যাটার। ৩৬ রানের মাথায় ৪ উইকেট হারিয়ে বেশ বিপাকে পড়ে যায় সিলেট।
৩ রান ব্যবধানে আবারও উইকেট খুইয়ে বসে ম্যাশের দল। অন্য ব্যাটারদের আসা-যাওয়ার মিছিলে যোগ দেন ইনিংসের গোড়াপত্তন করতে আসা নাজমুল হোসেন শান্ত। ২৪ বলে ১৪ রানে থাকা শান্তর উইকেট নেন হাসান মুরাদ। এরপর সেখান থেকে দলকে এগিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব পড়ে দুই বিদেশি রিক্রুট বেনি হাওয়েল এবং বেন কাটিংয়ের ওপর। কার্যকরী ব্যাটিং নৈপুণ্যে ঠিকই দলের আস্থার প্রতিদান দেন এই দুই ব্যাটার। এই দুই ব্যাটার মিলে গড়েন ৬৮ রানের জুটি।
এই জুটিতে ম্যাচ ফিরলেও পুঁজি বড় করতে পারেনি ম্যাশের দল। ইনিংসের ১৮তম ওভারে এই জুটি ভাঙেন রিপন। ডিপ-কভারে রিপনের বল উড়িয়ে মারতে গিয়ে তালুকদারের তালুবন্দি হন কাটিং। অজি এই ব্যাটার ফেরেন ৩ চার ও এক ছক্কায় ৩১ রানের ইনিংস খেলে। শেষ পর্যন্ত বেনি হাওয়েলের ৩৬ বলে ৪৩ রানের সুবাদে ৮ উইকেট হারিয়ে ১২০ রানের লড়াকু পুঁজি পায় সিলেট। আর শেষ দিকে দাসুন হেমান্থাকে রান আউট করেন বাবর আজম। রংপুর রাইডার্সের হয়ে রিপন মন্ডল ও মাহেদী হাসান দু'টি করে উইকেট নেন। এছাড়াও মোহাম্মদ নবি এবং হাসান মুরাদ একটি করে উইকেট শিকার করেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
সিলেট স্ট্রাইকার্স: ২০ ওভারে ১৩৬/৮ (শান্ত ১৪, মিঠুন ৫, মাশরাফি ৬, ইয়াসির ৯, জাকির ১, হাওয়েল ৩৭, কাটিং ৩৭, তানজিম ২*, হেমান্থা ১, এনগারাভা ১; ওমারজাই ০/১০, শেখ মেহেদি ২/১৮, হাসান ০/২৬, নবি ১/১৭, মুরাদ ১/২৯, রিপন ২/১৯)।
রংপুর রাইডার্স: ১৮.২ ওভারে ১২৫/৬ (রনি ৬, বাবর ৫৬*, কিং ০, সোহান ৮, শামীম ২, নবি ০, শেখ মেহেদি ০, ওমারজাই ৪৭*; এনগারাভা ১/২৮, তানজিম ১/৩৬, নাজমুল অপু ১/১৮, হেমান্থা ৩/২০, হাওয়েল ০/২২)।
ফল: রংপুর রাইডার্স ৪ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচসেরা: আজমাতউলস্নাহ ওমারজাই।