ফুটবল ইতিহাসে খেলোয়াড় ও কোচ- দুই ভূমিকাতেই বিশ্বকাপ জয়ী তিন ব্যক্তির দু'জন না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন তিন দিনের মধ্যে। মারিও জাগালোর পর পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেলেন জার্মান কিংবদন্তি ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার। তার মৃতু্যতে শোকে মুহ্যমান ফুটবল বিশ্ব। সোমবার জার্মানির সংবাদ সংস্থা ডিপিএ বেকেনবাওয়ারের মৃতু্যর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। মাঠে তার দাপুটে উপস্থিতির জন্য নিজ দেশের ভক্ত-সমর্থকরা তাকে ডাকতেন কাইজার (সম্রাট) নামে।
গত শনিবার মারা যান ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি জাগালো। সোমবার রাতে ফুটবল বিশ্বকে নাড়িয়ে দেয় বেকেনবাওয়ারের মৃতু্যর সংবাদ। বায়ার্ন মিউনিখের সাবেক এই ডিফেন্ডারের বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর। ১৯৭৪ সালে সেই সময়ের পশ্চিম জার্মানির বিশ্বকাপ জয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন বেকেনবাওয়ার। পরে কোচ হিসেবে ১৯৯০ বিশ্বকাপে জেতেন শিরোপা। বায়ার্নের খেলোয়াড় ও কোচ হিসেবেও জার্মানির শীর্ষ লিগের ট্রফি জয়ের স্বাদ পান তিনি। আরও অনেক রেকর্ড-অর্জনে ভাস্বর তার ক্যারিয়ার।
অনেকেই তাকে মনে করে থাকে জার্মানির ইতিহাসের সেরা ফুটবলার। যেমনটা বললেন জাতীয় দলের জার্মান কোচ ইউলিয়ান নাগেলসমান, 'আমার কাছে ফ্রানৎস বেকেনবাওয়ার জার্মান ইতিহাসের সেরা ফুটবলার। একজন ফুটবলার এবং পরে কোচ হিসেবেও তিনি দুর্দান্ত ছিলেন, তিনি সবকিছুর উপরে ছিলেন। ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার যখন কোনো ঘরে প্রবেশ করতেন, ঘরটি তখন আলোকিত হয়ে উঠত, যোগ্যতর হিসেবেই তিনি 'জার্মান ফুটবলের দীপ্তিমান একজন' উপাধি অর্জন করেছিলেন। আমি কৃতজ্ঞ এবং গর্বিত যে, তাকে জানতে পেরেছি এবং তাকে ভালোবেসে মনে রাখব।'
জার্মান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের (ডিএফবি) সভাপতি বার্ন্ড নিউয়েনডর্ফের মতে, গোটা ফুটবল বিশ্বের জন্যই একটা 'লেগ্যাসি' রেখে গেছেন বেকেনবাওয়ার। তিনি বলেন, 'আমরা তার জীবনের কর্মকে সম্মান এবং কৃতজ্ঞতার সঙ্গে দেখি। আমরা একজন অনন্য ফুটবলার ও প্রিয় এক ব্যক্তিকে হারালাম। ডেডর কাইজার' (বেকেনবাওয়ারের ডাক নাম) ছিলেন আমাদের খেলার ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড়দের একজন। ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার ডিএফবি ও সামগ্রিক ফুটবলের জন্য একটি দারুণ লেগ্যাসি রেখে গেছেন।'
১৯৯০ সালে যেবার কোচ হিসেবে বিশ্বকাপ জেতেন বেকেনবাওয়ার, সেই দলের অধিনায়ক ছিলেন লোথার মাথেউস। এই গ্রেট মনে করেন, বেকেনবাওয়ার মাঠের বাইরেও ছিলেন সেরাদের একজন। তিনি বলেন, 'ধাক্কাটা অনেক বড়। যদিও আমি জানতাম যে, ফ্রাঞ্জ ভালো বোধ করছেন না। তার মৃতু্য ফুটবল এবং সামগ্রিকভাবে জার্মানির জন্য বড় ক্ষতি। খেলোয়াড় ও কোচ হিসেবে তিনি ছিলেন সেরাদের একজন, মাঠের বাইরেও তাই। ফ্রাঞ্জ শুধুমাত্র ফুটবলেই অসামান্য ব্যক্তিত্ব ছিলেন না, তিনি বিশ্বব্যাপী পরিচিত ছিলেন। যারা তাকে চিনতেন তারা সবাই জানেন, ফ্রানৎস কত মহান এবং উদার ব্যক্তি ছিলেন।'
বেকেনবাওয়ারের মৃতু্য ছুঁয়ে গেছে সাবেক ইংলিশ ফুটবলার ও বর্তমানে ফুটবল বিশেষজ্ঞ গ্যারি লিনেকারকে, 'ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার মারা গেছেন শুনে খুবই খারাপ লাগছে। আমাদের খেলার সত্যিকারের গ্রেটদের একজন। ডের কাইজার ছিলেন ফুটবলারদের মধ্যে সুন্দরতম, যিনি সবকিছু জিতেছিলেন সহজাত সৌন্দর্য এবং মাধুর্য ছড়িয়ে।'
লিনেকারের মতো সাবেক ইংলিশ গোলরক্ষক পিটার শিল্টন সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ লিখেছেন, 'গ্রেট বেকেনবাওয়ারের মারা যাওয়ার খবর শুনে খুব খারাপ লাগছে। তিনি বিশ্বমানের দুর্দান্ত একজন খেলোয়াড ছিলেন।'
জনপ্রিয় টিভি ব্যক্তিত্ব ও সাংবাদিক পিয়ার্স মর্গ্যান লিখেছেন, 'ওপারে ভালো থাকবেন ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার। জার্মান ফুটবল কিংবদন্তি, যিনি খেলোয়াড় ও কোচ হিসেবে বিশ্বকাপজয়ী মাত্র তিনজন ব্যক্তির একজন ছিলেন। দুর্দান্ত ডিফেন্ডার, দুর্দান্ত কোচ, খেলার অসাধারণ একজন দূত।'
ইউরোপিয়ান ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্তা সংস্থা উয়েফা লিখেছে,' ইউরোপিয়ান ফুটবলের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের একজন ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার ৭৮ বছর বয়সে মারা গেছেন। ডের কাইজার ছিলেন অসাধারণ খেলোয়াড়, সফল কোচ এবং জনপ্রিয় ফুটবল বিশেষজ্ঞ।'