শিরোপা পুনরুদ্ধারের অভিযানে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। সবশেষ যুব এশিয়া কাপ জেতা দলে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। যেখানে যুব এশিয়া কাপজয়ী অধিনায়ক মাহফুজুর রহমান রাব্বির কাঁধেই বিশ্বকাপ মিশনের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছে। আগামী ১৯ জানুয়ারি থেকে পর্দা উঠবে যুব বিশ্বকাপের। এবারের আসরটি শ্রীলংকায় গড়ানোর কথা ছিল। কিন্তু আইসিসির নিষেধাজ্ঞার কারণে টুর্নামেন্টটি শ্রীলংকা থেকে সরে দক্ষিণ আফ্রিকায় নেওয়া হয়েছে।
এদিন টাইগার যুবাদের নির্বাচক হান্নান সরকার জানিয়েছেন, 'আমরা ২০২০-এ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম। ২০২২-এ সেটা ধরে রাখতে পারিনি। সেটাকে আবার ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করব। চ্যাম্পিয়ন তো বলে-কয়ে হওয়া যায় না। তবে আমাদের লক্ষ্য সবসময়ই থাকে চ্যাম্পিয়ন হওয়া, অনূর্ধ্ব-১৯ লেভেলে বিশেষ করে।'
শেষ মুহূর্তে শ্রীলংকা থেকে বিশ্বকাপ সরে গেলেও স্কোয়াডের ভাবনায় খুব বেশি পরিবর্তন আনেননি বলে জানিয়েছেন হান্নান। তিনি বলেন, 'আমরা শ্রীলংকা ধরেই এগোচ্ছিলাম। শেষ মুহূর্তে তেমন কোনো পরিবর্তন করিনি। আমাদের অধিনায়ক, সঙ্গে জীবন (শেখ পারভেজ) ভালো অলরাউন্ডার। আরিফুল ভালো বোলিং করে। আমাদের পেস বোলিং অলরাউন্ডারও আছে, রিজওয়ান। সবকিছু মিলিয়ে আমাদের অলরাউন্ডারের সংখ্যাটা বেশ ভালো। তাই আমরা মূল শক্তি হিসেবে আমরা চিন্তা করি, আমাদের দলে অলরাউন্ডারের সংখ্যা বেশি।'
কোচের মতো একই ভাবনার কথা জানিয়েছেন অধিনায়ক মাহফুজুর রহমান রাব্বি, 'আশা তো অবশ্যই বেড়ে গিয়েছে (এশিয়া কাপ জেতার পর)। আমরা ভালো ক্রিকেট খেলার চেষ্টা করব। মানসিকভাবে আমাদের এশিয়া কাপ শেষ হয়ে গিয়েছে। আমাদের এখন বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার সময়। আমরা যদি ওই জিনিসটাকে (যুব এশিয়া জেতা) ধরে রাখি, আমার মনে হয় সেটা ঠিক হবে না। আমাদের এখন বিশ্বকাপ নিয়ে ভাবা উচিত।'
এবার দক্ষিণ আফ্রিকায় হতে যাওয়া অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের দলটি তৈরির পেছনে ছিলেন স্টুয়ার্ট ল। তার অধীনে জুনিয়র টাইগাররা জিতেছে এশিয়া কাপ। তাদের নিয়ে বেশ ঝমকালো উদযাপনও হয় দেশে। বিশ্বকাপেও তাই তারা কেমন করেন, তা নিয়ে আছে মানুষের কৌতূহল।
তবে সোমবার মিরপুরে সংবাদ সম্মেলনে ল জানালেন, তার মূল অগ্রাধিকারের জায়গায় ফল নেই, আছে অন্য চিন্তা, 'প্রক্রিয়া সবসময় প্রথম অগ্রাধিকার। আপনি যদি অনেক ওপরের বিষয় যেমন জয় নিয়ে চিন্তা করেন, তাহলে এই পথে কী করতে হবে, তা ভুলে যাবেন। তো আমি শুধু খেলা বা শেষের ফলের দিকে মনোযোগ দেই না। বরং যা আমাদের হাতে আছে, তা নিয়ন্ত্রণ করতে চাই। আর আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে প্রস্তুতি, কীভাবে আমরা এগোবো, নিজেদের পরিকল্পনায় অনড় থাকা, ভিন্ন প্রতিপক্ষের জন্য কৌশল সাজানো এবং সব কাজ করে প্রতি ম্যাচে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে যাওয়া। এটিই আমার মূল মনোযোগের জায়গা।'
'সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ হলো পরের ম্যাচ। আর সেটি এখন ২০ তারিখে, ভারতের বিপক্ষে। তো এই মুহূর্তে সেটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ওই ম্যাচের পর এটি শেষ। পরের ম্যাচ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিবার একটি করে ম্যাচ, সেই একই পুরনো কথা। তবে প্রক্রিয়া অনুসরণে কঠোর পরিশ্রম করা।'
২০২০ সালে যুব বিশ্বকাপ জিতেছিল বাংলাদেশ। সেই দলে খেলা অনেকেরই পা পড়েছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। এবারের দলটি থেকেও অনেককে আগামীর জাতীয় দলে দেখছেন ল। তবে বয়সভিত্তিক ক্রিকেটের সঙ্গে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের যে ফারাক, সেটাও কয়েকজনের পারফরম্যান্সে এর মধ্যে হয়েছে স্পষ্ট।
এর আগের যুব বিশ্বকাপগুলোতেও বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের সঙ্গে অন্য দেশের যারা ছিলেন, সিনিয়র ক্রিকেটে এসে তারা দ্রম্নত ওপরে উঠেছেন, আর সর্বোচ্চ পর্যায়ের ক্রিকেটে খাবি খেয়েছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা।
কাজেই ফল নাকি প্রক্রিয়া অনুসরণ? বয়সভিত্তিক পর্যায়ে বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনটা বেশি অগ্রাধিকার পাবে, এই প্রশ্ন পুরনো। ল মনে করিয়ে দিলেন, এই পর্যায়ে খেলোয়াড়দের ভেতর স্রেফ প্রতিভাটাই থাকে, সেই প্রতিভা বাস্তবায়নের পথে যেতে হলে পরের এগিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়াটা বেশি জরুরি, 'শুধু বাংলাদেশ নয়, বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে যে কোনো দলে প্রতিভা থাকে অনেক। এখানে শুধু প্রতিভাটাই থাকে। বিষয়টা হলো চাপের মুহূর্তে ধারাবাহিকভাবে বাস্তবায়ন করা। তা করতে পারলে পরবর্তী ধাপে তারা মনোযোগ পাবে। ক্রিকেটারদের জন্য এটি (অনূর্ধ্ব-১৯) দুই বছরের যাত্রা।'
এশিয়া কাপে ভালো খেলে ব্যাটার আশিকুর রহমান শিবলি, অলরাউন্ডার মাহফুজুর রহমান রাব্বি, পেসার মারুফ মৃধা এরই মধ্যে আলো কেড়েছেন। বিশ্বকাপেও এই তরুণদের ঝলক দেখার অপেক্ষায় যুবদলের কোচ, তিনি চান তারা যেন নিজেদের মেধার অপচয় না করে, 'বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার সম্ভাবনার ছাপ রাখছে। তারা এখন যে সুযোগ পাচ্ছে, সবার মনোযোগের কেন্দ্রে থাকছে। এশিয়া কাপ একটি সুযোগ ছিল। তাদের জন্য বিশ্বকাপ আরেকটি সুযোগ, নিজেদের স্কিল দেখানোর। আমার বিশ্বাস, বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার (জাতীয় দলে) খেলতে পারবে। তবে পুরোটাই তাদের ওপর নির্ভর করবে। তাড়নাটা হৃদয় থেকে আসতে হবে, মাথা থেকে আসতে হবে।'
'নিজেদের প্রতিভা যেন অপচয় না করে, সুযোগ যেন নষ্ট না করে। একই সঙ্গে মাঠে নেমে নিজেদের ক্রিকেট উপভোগ করতে হবে। আমি ওদের দেখেছি, যখন ভালো খেলে, মুখে চওড়া হাসি থাকে। মাঠে সতীর্থের কাঁধে তাদের হাত থাকে। ওরা একে অপরের সাফল্য উপভোগ করে। আমরা সবাই যদি তা করি, তাহলে ফলটা দারুণ পাওয়া যাবে।'