আধুনিক বিজ্ঞান নিয়ে যারা একটু-আধটু খোঁজখবর রাখেন এলিয়েন শব্দটি তাদের কাছে পরিচিত। পৃথিবীর বাইরে যদি কোনো প্রাণের অস্তিত্ব থাকে তাদের এলিয়েন বলা হয়। এলিয়েন আছে, কি নেই- সে তথ্য এখনো নিশ্চিত নয়। তবে, বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন যে, ভিনগ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব আছেই। এই মহাবিশ্বের কোথাও না কোথাও প্রাণ আছে। অপেক্ষা শুধু খুঁজে পাওয়ার। বহু আলোকবর্ষ দূরের কোনো গ্রহে যদি সামান্য পরিমাণেও পানির অস্তিত্ত্ব কোনোভাবে প্রমাণ করা যায় তাহলেও প্রাণের খোঁজ পেতে উদগ্রীব হয়ে ওঠে পৃথিবীর মানুষ। ২০১৯ সালের ২১ ডিসেম্বর জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এক ধরনের অতি শক্তিশালী টেলিস্কোপ ব্যবহার করে এমন কিছু তরঙ্গ শনাক্ত করেন- যা তাদের বিস্মিত করে। যেহেতু বিজ্ঞানীরা সব সময় কৌতূহল নিয়ে অন্য কোনো গ্রহে প্রাণ আছে কিনা তার জন্য অপেক্ষা করে। ফলে, এই তরঙ্গ তাদের বিস্মিত করে। বিজ্ঞানীরা হার্টবিটের মতো এক রহস্যময় বেতার তরঙ্গ শনাক্ত করলেন গবেষকরা। যাকে বিজ্ঞানীরা বলেছেন, ফাস্ট রেডিও বাস্ট বা এফআরবি। বিজ্ঞানীরা বলছেন, হৃদস্পন্দনের অনুরূপ সংকেত প্রায় এক বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরের এক গ্যালাক্সি থেকে এসেছিল। তবে তাদের কাছে এ সংকেতের প্রকৃত অবস্থান ও কারণ এখনো খুব পরিষ্কার নয়- যা নেচার পত্রিকায় প্রকাশও করেছেন গবেষকরা।
অনেকেই সিনেমা বা কার্টুনে এক ধরনের অদ্ভুত ধরনের প্রাণী দেখেছি যা কোনো গোলাকার এক ধরনের যানে চেপে পৃথিবীতে আসে। মনে কৌতূহল থাকে যে প্রাণীকে দেখছি তারা তো মানুষের মতো নয়। তাহলে এরা কারা? কোথায় থাকে? কেনই বা এরা মাঝে মধ্যে পৃথিবীতে আসে? সত্যিই কি এই ধরনের কেউ পৃথিবীর বাইরে থাকতে পারে? এরকম কত প্রশ্নই না মনে থাকে। এই অপরিচিত এবং অদেখা প্রাণীগুলোকেই বলা হয় ভিনগ্রহের প্রাণী। অর্থাৎ পৃথিবীর বাইরেও আরও প্রাণী আছে যাদের সঙ্গে আমাদের কোনো যোগাযোগ নেই। যাদের আজ পর্যন্ত কেউ দেখতে পায়নি। ফলে, ভিনগ্রহের প্রাণী আসলে দেখতে কেমন হবে তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। আমাদের পৃথিবীর বিজ্ঞানীরা প্রাণপণ চেষ্টা করছে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে। তবে তারাও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছে কিনা সেটা কিন্তু বোঝা যায় না। আবার এমনটাও হতে পারে যে, তারা আমাদের সম্পর্কে সব জানে! কারণ সেই যে গোলাকার চাকতির মতো যানগুলো আকাশ দিয়ে কয়েক সেকেন্ডের জন্য দেখা গেছে সেসব তো কেউ কেউ সত্যিই দেখেছে? যদি সেগুলো ভিনগ্রহের প্রাণীদের যানবাহন না হয় তাহলে আর কি!
সাধারণত বিভিন্ন মাধ্যমে দেখা যায়, তারা আমাদের চেয়েও প্রযুক্তিতে উন্নত। কারণ এই যান মুহূর্তেই আকাশেই অদৃশ্য হয়ে যায়। কোথায় যায় কেউ ধরতেই পারে না। জাদুর মতো মিলিয়ে যায় তারা। যদি তারা প্রযুক্তিতে উন্নত না হতো তাহলে কি এত তাড়াতাড়ি অদৃশ্য হতে পারতো? এই ভিনগ্রহের প্রাণীদের বহনকারী যানকে সংক্ষেপে বলা হয় ইউএফও (আনআইডেনটিফায়েড ফ্লাইং অবজেক্ট)। এদের নিয়ে আজ পর্যন্ত ভূরি ভূরি গল্প, সিরিয়াল, সিনেমা ও কার্টুন তৈরি হয়েছে। সেসব জায়গায় তাদের বিভিন্ন রকম দেখানো হয়েছে। এখন প্রশ্ন হলো সত্যিই কি পৃথিবীর বাইরেও কোনো জায়গা আছে- যেখানে আমাদের মতো বা আমাদের চেয়েও উন্নত কোনো প্রাণী রয়েছে? গত ২০ বছরে ১২০টির বেশি এমন ঘটনা প্রত্যক্ষ করা গেছে।
ভিনগ্রহের যান নিয়ে পৃথিবীর বড় বড় বিজ্ঞানীরা গবেষণা করছেন, পর্যবেক্ষণ করছেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী, পৃথিবীর নানা দেশে নানা সময় আকাশে উড়তে দেখা গেছে এগুলোকে। এদের আকৃতি কখনো গোলাকার, চাকতির মতো বা চারকোণা বলে শোনা যায়। কিন্তু এখনো এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি যে বস্তুগুলো প্রকৃতপক্ষে কি হতে পারে। সবকিছু থেকেছে অনেকটাই অনুমানের ওপর। আজ সিনেমায় বা কার্টুনে এসব বস্তু বা ভিনগ্রহের প্রাণীদের দেখি তা কিন্তু কল্পনাতেই আঁকা। কারণ, এসব প্রাণীকে কেউ তো আর দেখতে পায়নি। তাই তারা দেখতে কেমন, লম্বা না বেঁটে, মাথায় চুল আছে না নেই, তারা কি আমাদের মতো খাওয়া-দাওয়া করে এসব নিয়ে কোনো প্রমাণাদি নেই। যেহেতু উড়ন্ত ইউএফও দেখা গেছে; এ বিষয়ে কিছু ব্যক্তি আছেন- যারা তা দেখেছেন এবং এগুলো পৃথিবীর মানুষের তৈরি কোনো প্রযুক্তি না- তাই ধরে নেওয়া যায় ভিনগ্রহে কেউ থাকে। তবে কারা থাকে তা কবে জানা যাবে এ নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারে কিনা। উইকিপিডিয়া বলছে, ভিনগ্রহী প্রাণ বলতে সেই জীবদের বোঝানো হয়, যাদের উদ্ভব এই পৃথিবীতে হয়নি বরং পৃথিবীর বাইরে মহাবিশ্বের অন্য কোথাও হয়েছে।
এদের ইংরেজি ভাষায় সংক্ষেপে এলিয়েন (ইংরেজি: অষরবহ) বলে। বিশ্বের বাইরে প্রাণের অস্তিত্ব আছে বলে অনেক বিজ্ঞানী দাবি করেছেন আর এই দাবি নিয়ে অনেক বিতর্কও রয়েছে। বহির্জাগতিক প্রাণের অস্তিত্বের কথা বর্তমানে কেবল কাল্পনিক, কারণ পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের বাইরে এই পর্যন্ত কোনো জীবাণু অথবা অতি ক্ষুদ্র জীবাণু আছে বলে, পরিষ্কার প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবুও বিজ্ঞানীদের একটি বিরাট অংশ বিশ্বাস করেন যে, এদের অস্তিত্ব রয়েছে। এলিয়েনদের খোঁজে আমরা যেমন অভিযান চালাচ্ছি তেমনি হতে পারে তারাও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চায়। মাঝে মধ্যে পৃথিবীতে এমন অনেক নিদর্শন পাওয়া যায়- যা ভিনগ্রহের প্রাণীর বা এলিয়েনদের তৈরি করা বলে মনে করা হয়। পৃথিবীতে বহুবার ফ্লাইং সসার আসার ঘটনা ঘটেছে। তার সাক্ষী আছে মানুষ। চোখের নিমেষেই উধাও হয়ে যায়- এসব যান। বছরের পর বছর কেবল রহস্যই ছড়িয়েছে এসব ভিনগ্রহের যানগুলো। কিন্তু কোনো কুলকিনার হয়নি। নাসা বর্তমানে হ্যাবিটেবল ওয়ার্ল্ডস অবজারভেটরি (এইচডবিস্নউও)-এর পরিকল্পনা করছে। আগামী ২০৩০-এর দশকে এটির কাজ শেষ হতে পারে। জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের পর এবার মহাশূন্যে আরেকটি টেলিস্কোপ পাঠাতে চায়। যার কাজ হবে আমাদের পৃথিবীর মতো সমধর্মী গ্রহগুলোতে প্রাণের অনুসন্ধান চালানো। এ প্রকল্পের নাম হ্যাবিটেবল ওয়ার্ল্ডস অবজারভেটরি (এইচডবিস্নউও)। আগামী ছয় বছরের মধ্যে এর কাজ শেষ হবে। এছাড়া, এ দশকের শেষ ভাগে কাজ শুরু করবে এক্সট্রিমলি লার্জ টেলিস্কোপ (ইএলটি)। এ যন্ত্র চিলির মরুভূমিতে বসানো হবে। এটি সেখান থেকেই দূরের গ্রহে প্রাণ আছে কিনা তা জানার চেষ্টা করবে।
নাসার জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ (জেডবিস্নউএসটি) সম্প্রতি সৌরজগতের বাইরের একটিগ্রহে প্রাণ থাকার সম্ভাবনার ইঙ্গিত পেয়েছে। জোসেফ এম. গ্যাসনার কিংবা বিজ্ঞানে সাংবাদিক নীল ডি গ্র্যাস টাইসন-এর মতো জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা একমত যে, আদিম এককোষী জীবন মহাকাশে প্রায় সর্বত্রই থাকতে পারে কিন্তু তারাও মনে করেন পৃথিবীর বাহিরে বহুকোষী বুদ্ধিমান জীবনের অস্তিত্ব থাকার প্রোবাবিলিটি খুবই কম।
অনেকে এটাও বিশ্বাস করেন যে, মহাবিশ্বে অনেক নক্ষত্রের সঙ্গে, জীবনের বিকাশের সম্ভাবনা প্রায় অন্তহীন এবং অনিবার্যভাবে পৃথিবী ছাড়াও এক বা একাধিক গ্রহ থাকতে পারে যেখানে বুদ্ধিমান জীবনের বিকাশ ঘটেছে। পৃথিবীর বাইরে প্রাণের অস্তিত্ব সম্পর্কে সঠিক তথ্য পেতে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে শনির সবচেয়ে বড় উপগ্রহ টাইটানের দিকে তাকিয়ে আছেন। পৃথিবীর বাইরেও প্রাণ আছে এই মতাদর্শেই বিশ্বাস করেন অধিকাংশ বিজ্ঞানী এবং বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ। সব মিলিয়ে প্রাণের জয়জয়কার। যেদিন এই পৃথিবীর মানুষের সঙ্গে নতুন কোনো গ্রহের প্রাণীর পরিচয় হবে সেদিন বিজ্ঞানের নতুন দিগন্ত সূচনা হবে।