বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৭ বৈশাখ ১৪৩২

বিজ্ঞানী ডট অর্গ : বিজ্ঞানীদের নেটওয়ার্ক

মানুষের কাছে পৌঁছানোর জন্য অন্যরা যেখানে পেইড মার্কেটিং করেন, সেখানে এ সাইট ব্যতিক্রম। তারা ওয়েবসাইট তৈরি এবং কনটেন্ট প্রমোশনের জন্য গুগল সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করেন। ফলে, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এ ওয়েবসাইটের মাসিক ভিজিটর ৫০ হাজার। বাংলাদেশিরাও প্রবাসী বিজ্ঞানীদের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি করতে পারবে। এতে দেশের উপকারে আসতে সুবিধা হবে
  ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
বিজ্ঞানী ডট অর্গ : বিজ্ঞানীদের নেটওয়ার্ক
বিজ্ঞানী ডট অর্গ : বিজ্ঞানীদের নেটওয়ার্ক

প্রবাসে বিভিন্ন দেশে কাজ করে প্রচুর বাংলাদেশি বিজ্ঞানী। তাদের কাজে উপকৃত হয় সেসব দেশ এবং ইনস্টিটিউট। তাদের একটি নেটওয়ার্কের অধীনে নিয়ে আসতে দীর্ঘদিন কাজ করছে বিজ্ঞানী ডট অর্গ। এ উদ্যোগ নিয়ে লিখেছেন নাদিম মজিদ

১৯৯৫ সাল। মশিউর রহমান তখন টগবগে যুবক। সদ্য কলেজের গন্ডি পেরিয়েছেন। বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশিপসহ আন্ডারগ্র্যাজুয়েট পড়ার জন্য আবেদন করে যাচ্ছিলেন। বেশ কয়েক জায়গা থেকে ইতিবাচক সাড়া পান। তিনি বেছে নেন জাপান। মনবুশো স্কলারশিপ নিয়ে সে বছর পাড়ি জমান সূর্যোদয়ের দেশে।

সে দেশে গিয়ে বাংলাদেশকে প্রবলভাবে অনুভব করেন।

কোথাও কোনো বাংলাদেশির খবর পেলে তার সঙ্গে দেখা করতেন। সময় করে আড্ডা দিতেন।

পড়াশোনা করেছিলেন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। ১৯৯৮ সালে জাপানের নারা ন্যাশনাল কলেজ থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে ডিপেস্নামা, ২০০০ সালে তোয়োহাশি ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি থেকে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে স্নাতক এবং ২০০২ সালে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। পরবর্তী সময়ে ২০০৫ সালে জাপানের দ্য গ্র্যাজুয়েট ইউনিভার্সিটি ফর অ্যাডভান্স স্টাডিজ থেকে পিএইচডি এবং ২০০৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মার্শাল ইউনিভার্সিটি থেকে বায়ো সেন্সর বিষয়ে পোস্ট ডক করে পড়াশোনার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শেষ করেন।

পড়াশোনার জন্য যেখানেই যান, আলাপ জুড়তেন প্রবাসী কোনো বাংলাদেশি পেলে। ই- মেইল আদান-প্রদান করতেন।

তখনো সোশাল মিডিয়ার যুগ শুরু হয়নি। ফলে, একটি সংবাদ শেয়ার করতে বেশ কসরত করা লাগত।

প্রবাসে পড়াশোন বা চাকরির খাতিরে যে দেশেই যান না কেন, তিনি বাংলাদেশকে নিয়ে ভাবতেন।

প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে প্রচুর মেধাবী শিক্ষার্থী বিদেশ চলে যাওয়ায় যে শূন্যতা তৈরি হয়, তার সমাধান কীভাবে হতে পারে- তা নিয়ে নানা উত্তর খুঁজে বেড়াতেন।

২০০৬ সালে তার মাথায় আসে বাংলা ভাষাভিত্তিক একটি ওয়েবসাইট খোলার। প্রথমদিকে তার ভাবনায় ছিল এখানে শুধু বিজ্ঞানীদের ডাটাবেইজ থাকবে। কোথায় থাকে, কোথায় জব করে, যোগাযোগের উপায়সহ মৌলিক কিছু তথ্য।

এটা নিয়ে প্রথমদিকে কিছু তথ্য সংগ্রহ করে বুঝতে পারলেন- এভাবে বিজ্ঞানীদের তথ্য সংগ্রহ করা কঠিন। শুধু ডাটাবেইজের তথ্য দেয়ার ক্ষেত্রে বিজ্ঞানীরা আগ্রহী না। ড. মশিউর রহমানও নিজে একজন বিজ্ঞানী। কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ করে বুঝতে পারেন, শুধু ডাটাবেইজ হলে বিজ্ঞানীরা তথ্য দেবে না। প্রয়োজন বাড়তি কিছু।

তথ্যের পাশাপাশি নিতে হবে সাক্ষাৎকার। এতে তথ্যও পাওয়া যাবে। আবার, কি নিয়ে কাজ করে তার বিশদ বিবরণ পাওয়া যাবে।

এসব বিষয়ে একা কাজ করা কঠিন। ভুল-শুদ্ধ বাতলে দিতেও প্রয়োজন সমমনা এক বা একাধিক ব্যক্তি। সোশ্যাল মিডিয়া না থাকায় পরিচিতদের কাছে পৌঁছানো কঠিন। নিজের নেটওয়ার্কে থাকা ব্যক্তিদের তিনি ই-মেইল এবং বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যমর জানান। এভাবে পরিচয় হয় কানাডার বিজ্ঞানী ড. শফিউল ইসলামের সঙ্গে। সহ-প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তিনিও যোগ দেন এ উদ্যোগে।

ডোমেইন ও ওয়েবসাইট

বিজ্ঞান না বিজ্ঞানী- ডোমেইনের প্রথম নাম কি হবে, তা নিয়ে নিজেদের মধ্যে বিতর্ক ছিল। পরে ঠিক হয়, নাম হবে বিজ্ঞানী। কারণ, এ নাম নিলে বিজ্ঞানও অবধারিতভাবে চলে আসবে। বিজ্ঞান নিয়েও লেখা যাবে।

বিজ্ঞান নিয়ে কাজ করা এবং পরবর্তী সময়ে এ কাজকে প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ নিতে কিনলেন বিজ্ঞানী ডট অর্গ (নরমমধহর.ড়ৎম)।

প্রথম দিকের বাংলা ওয়েবসাইট

এ ওয়েবসাইট যখন চালু হচ্ছিল, তখন বাংলা ভাষাভিত্তিক ওয়েবসাইট ছিল হাতেগোনা। দৈনিকপত্রিকাগুলো ইপেপার আপলোড দিত। খবর পড়ার দরকার হলেও আলাদা করে বিজয় ইনস্টল করা লাগত পিসিতে।

২০০৭ সালে চালু হওয়া এ ওয়েবসাইটের উদ্যোক্তাদের ভাবনায় ছিল- কীভাবে বাংলাকে বিশ্বজনীন করা যায়। তাই, তারা ইউনিকোডে তাদের ওয়েবসাইট তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেন। সাধারণত তখনকার ওয়েবসাইটের ভাষা থাকত ইংরেজিতে। বাংলা সাইটের খোঁজখবর কারো কাছে তেমন থাকত না। এ ওয়েবসাইট ভিজিট করতে আসা যে কোনো বাংলাদেশি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতেন। কারণ, স্ক্রিনে ভাসত বাংলা ভাষায় লেখা কনটেন্ট।

২০০৭ সালে যাত্রা শুরু

২০০৭ সালের ৬ জুন যাত্রা শুরু করে এ ওয়েবসাইট। ড. মশিউর রহমান বলেন, এটি আনন্দদায়ক মুহূর্ত। আমরা তখন প্রকাশ করেছিলাম জিনবিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরীর সাক্ষাৎকার। টাইটেল ও ক্যাপশন ছিল বাংলায়। আর সাক্ষাৎকার শুনতে হতো ক্লিক করে।

১৫০+ সাক্ষাৎকার

এ সাইটের দুই প্রতিষ্ঠাতা-ই ব্যক্তিজীবনে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। তারা কনটেন্ট সংগ্রহ করেন, সাক্ষাৎকার নেন নিজেদের ব্যস্ততার সঙ্গে তাল মিলিয়ে। এ পর্যন্ত তারা ১৫০টির বেশি বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন।

নিজেরা বিজ্ঞানী হওয়ায় কনটেন্টগুলোতে রয়েছে বৈচিত্র। ওজন বুঝে প্রশ্ন করায় অন্য সাধারণ সাক্ষাৎকার থেকে তা ভিন্নতা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে।

আবার, বিজ্ঞানের কোনো টার্ম সাধারণ মানুষের বুঝতে অসুবিধা হবে মন করলে তারা তার ব্যাখ্যাও দেন।

বিজ্ঞানীদের দেশ এবং কর্মস্থল পরিবর্তন হয়। এসব তথ্যও তারা নিয়মিত আপডেট করেন। ফলে, এ সাইট বিজ্ঞানীদের আগ্রহ ও ভরসার জায়গা হিসেবে দাঁড়িয়েছে।

প্রচার করে দেয় গুগল!

এ সাইটের কনটেন্টগুলো তারা নিজেরা সংগ্রহ করেন। মানুষের কাছে পৌঁছানোর জন্য অন্যরা যেখানে পেইড মার্কেটিং করেন, সেখানে এ সাইট ব্যতিক্রম। তারা ওয়েবসাইট তৈরি এবং কনটেন্ট প্রমোশনের জন্য গুগল সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করেন। ফলে, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এ ওয়েবসাইটের মাসিক ভিজিটর ৫০ হাজার।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

এ ওয়েবসাইট হলো গবেষক, বিজ্ঞানী এবং পেশাজীবীদের নেটওয়ার্ক। এ সাইটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ড. মশিউর রহমান জানান, আমরা সীমিত সামর্থ্য নিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে কাজ করছি। আমাদের লক্ষ্য ১০০০ বিজ্ঞানীর সাক্ষাৎকার প্রকাশ করা। এ লক্ষ্যে আমরা সাক্ষাৎকার দলের সদস্য সংখ্যা বাড়াচ্ছি। যারা বাইরের দেশে উচ্চতর পড়াশোনা করতে চায়, তাদের আমরা সুযোগ দিচ্ছি।

অন্যদিকে, বাংলাদেশিরাও প্রবাসী বিজ্ঞানীদের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি করতে পারবে। এতে দেশের উপকারে আসতে সুবিধা হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে