একজন সফল ফ্রিল্যান্সার এবং আইটি উদ্যোক্তা সজিবুল ইসলাম

প্রকাশ | ২৪ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০

মারসিফুল আলম রিমন
ডিজিটাল মার্কেটিং এবং ডাটা এনালাইসিস জগতে সফলতার দেখা পেয়েছেন সজিবুল ইসলাম। আয়ত্ত করেছেন ভার্চুয়াল জগতের নানাবিধ জাদুকরী সব সমাধান। অধ্যবসায় ও চেষ্টা সাফল্যের শীর্ষ স্থানের ছোঁয়া পেতে সহযোগিতা করেছে সজিবুলকে। ডিজিটাল মার্কেটিং আইটি উদ্যোক্তা থেকে শুরু করে ভার্চুয়াল সকল কাজে রয়েছে আশ্চর্যজনক আয়ত্ত এই তরুণের। তরুণ এই উদ্যোক্তার বাড়ি বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার বাদলপাড়া গ্রামে। তার বাবার নাম মো. হারুন অর রশিদ। তিনি একজন ব্যবসায়ী। বর্তমানে তারা বরিশাল কাউনিয়া প্রথম গলির সুরমা নিবাসে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। ২০১৮ সালে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স ২য় বর্ষে থাকাকালীন সজিব সিদ্ধান্ত নেন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবেন। তার দৃঢ় প্রচেষ্টা জেদ এবং অক্লান্ত পরিশ্রমে প্রতিষ্ঠিত হন একজন সফল উদ্যোক্তায়। সজিবুল ইসলাম কীভাবে সফল আইটি উদ্যোক্তা হলেন জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, এই সফল আইটি উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার পেছনে প্রধান অবদান রাখেন তার বড় ভাই সাব্বির আহমেদ অন্তর। তিনি টেক সফট ভিউ (ঞবপয ঝড়ভঃঠরব)ি কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা। তার নেতৃত্বে টেক সফট ভিউ প্রযুক্তি ও রিয়েল এস্টেট মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রে এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। সাব্বিরের শিক্ষা, পেশাগত দক্ষতা এবং কাজের অভিজ্ঞতা তাকে এই সাফল্যের দিকে নিয়ে গিয়েছে। সাব্বির এবং সজিব দুই ভাই এখন সফল ফ্রিল্যান্সার। সজিবুল ইসলাম বলেন, 'শুরুতেই ফাইবারে ডাটা এন্ট্রি ২৫ ডলারের একটি কাজ পাই, সেখান থেকেই অনুপ্রেরণা পাই কাজ করার। এরপর ক্লাসের পাশাপাশি যতটুকু সময় পেতাম পুরোটাই ফ্রিল্যান্সিংয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। তবে মনে হতো হয়তো আর কাজ আসবে না কিন্তু আমার ভাই এবং বাবার বিশ্বাস ছিল লেগে থাকলে কাজ আসবে। তাদের দেওয়া সাহসে আমার মনোবল আরো দৃঢ় হয়। আমি নিজেকে আরো সময় দেই, অনলাইনে কিছু ট্রেনিং নেই। এভাবে অল্প অল্প করে কাজ করতে থাকি লেখাপড়ার পাশাপাশি। তবে সেমিস্টার ফাইনালের সময় ম্যানেজ করা কঠিন হয়ে যেত তারপরও কাজ চলমান রেখে গেছি, যদি কোনো কাজ আসতো চেষ্টা করতাম যথা সময়ে শেষ করতে।' সজিবুল ইসলাম আরো বলেন, 'কোভিডের সময়টাকে আমি কাজে লাগিয়েছি ইংরেজি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে। আমার খুব ইচ্ছে ছিল উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে পড়তে যাওয়া কিন্তু কোভিড সময়টাতে এই সুযোগগুলো বন্ধ ছিল। তখন আমি আমার প্রশিক্ষণগুলো ফ্রিল্যান্সিংয়ে কাজে লাগাই, আপওয়ার্কয়ে অ্যাকাউন্ট করে সেখানেও কাজ পাই এবং আলস্নাহর অশেষ রহমতে একটি ফুল টাইম রিমোট জব পাই। সেখান থেকেই এই প্রফেশনে আসা। নিজের মধ্যে আগ্রহ জাগে আরো এটাও একটা প্রফেশন হতে পারে এবং আমি এটি করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছি। যথেষ্ট স্বাধীনতা এবং অর্থনৈতিকভাবেও ভালো ছিল। এরপর অনার্স শেষে মাস্টার্স করে চিন্তা করলাম ডিজিটাল মার্কেটিংয়েই আমার ইচ্ছেটা বেশি।' সজিবুল ইসলামের মতে, 'ঘরে বসে ফ্রিল্যান্সিং করা যায় তবে এতে কিছু টাকা আয় হবে কিন্তু বড় কোনো ব্যবসা দাঁড় করানো বা বড় আয় সম্ভব হবে না। সেজন্য এতে ভালো কিছু করতে হলে কয়েকজন মিলে অফিসিয়ালি বা সাংগঠনিক কাঠামোর মধ্যে কাজ করতে হবে। আর এই কাজ করতে তিনটি জিনিস মাথায় রাখতে হবে- ১. যেকোনো একটি কাজ ভালো করে শেখা, ২. মার্কেট পেস্নসে প্রবেশের আগে নিজের ভালোমানের একটি পোর্টফোলিও তৈরি করা এবং তারপর মার্কেট পেস্নসে প্রবেশ করে নিবিড় অনুশীলনের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধি করা। তাহলেই কেবল একটি ব্যবসা দাঁড় করানো সম্ভব হবে। সেজন্য আমি নিজের টিম করেছি, তাদের দক্ষ করতে কাজ করতে লাগলাম। এখন আমার টিমে ১২ জন কাজ করছে। ৬ জন আমার অফিসে এসে বাকি ৬ জন রিমোটলি করছে। আমি আপওয়ার্কয়ে টপ রেটেড সেলার এবং ফাইবারে লেভেল টু সেলার (২৩০০+ প্রজেক্ট সম্পন্ন এবং ৭৫০+ ৫* রিভিউ) এবং এর পাশাপাশি বর্তমানে আমি যুক্তরাজ্যের একটি অনলাইন এডুকেশন কোম্পানিতে হেড অফ অ্যাডমিন হিসেবে কর্মরত আছি।' দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের মধ্য দিয়ে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে নিজের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন এই উদীয়মান ফ্রিল্যান্সার। নবীনদের সফলতার বিষয়ে এ ফ্রিল্যান্সার বলেন, উপার্জন করা অর্থ শুরুতেই ইচ্ছে মতো উড়িয়ে দেওয়া উচিত নয়। উপার্জনকৃত অর্থের ৭০ ভাগ খরচ করে ৩০ শতাংশ জমা করতে হবে। কারণ এই জমাকৃত অর্থ দিয়ে মার্কেট পেস্নসকে প্রসারিত করাতে হবে। এমনকি নিজের ডেস্কটপ, ল্যাপটপ, ইন্টারনেট ও কর্মক্ষেত্রে একটা ভালো পরিমাণ অর্থ ইনভেস্ট করতে হবে। তবেই সফলতা আসতে শুরু করবে। সজিবুল ইসলাম বলেন, 'এখন আমার এজেন্সি ঠঅ'ং ঞৎড়ড়ঢ় নিয়ে স্বপ্ন দেখছি এবং কাজ করে যাচ্ছি এই এজেন্সিকে বিশ্বমানের করে তোলার। এছাড়াও আমি স্বপ্ন দেখি দেশে আগামীতে খুব ভালো প্রযুক্তিবিশ্লেষক তৈরি হবে এবং আমাদের এই দেশকে প্রযুক্তি খাতে উন্নতির শিখরে তুলে ধরবে।'