তীব্রতর হচ্ছে প্রাকৃতিক গ্রিন হাউস প্রতিক্রিয়া
প্রকাশ | ২৪ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
রায়হান শাহরিয়ার
আমাদের পৃথিবী সূর্য থেকে শক্তি গ্রহণ করে। অতিবেগুনি রশ্মি, দৃশ্যমান আলো ও অবলোহিত রশ্মিরূপে যার বেশির ভাগই বায়ুমন্ডল কর্তৃক শোষিত না হয়ে পৃথিবীতে ফিরে যায়। প্রাপ্ত শক্তির মোট অংশ বায়ুমন্ডলের উপরিভাগে থাকে এবং যার প্রায় ৫০ শতাংশ পৃথিবীপৃষ্ঠ কর্তৃক শোষিত হয়। ভূপৃষ্ঠ উত্তপ্ত হওয়ার দরুন উষ্ণ অবলোহিত রশ্মি বিকিরণ করে, যার তরঙ্গদৈর্ঘ্য প্রধান শোষণকৃত তরঙ্গদৈর্ঘ্যের তুলনাই অনেক দীর্ঘ হয়।
বায়ুমন্ডলের যে সব গ্যাস তাপীয় অবলোহিত সীমার মধ্যে বিকিরিত শক্তি শোষণ ও নির্গত করে সে সব গ্যাসকে গ্রিন হাউস গ্যাস বলে। গ্রিন হাউস গ্যাস ছাড়া পৃথিবী পৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রা হতো -১৮ ক্কঈ (০ ক্কঋ), যা বর্তমানে ১৫ ক্কঈ (৫৯ ক্কঋ)। সৌরজগতের বিভিন্ন গ্রহ যেমন- শুক্র, মঙ্গল ইত্যাদির বায়ুমন্ডলেও বিভিন্ন গ্রিন হাউস গ্যাস রয়েছে।
শিল্প বিপস্নবের পর থেকে মানুষের বিভিন্ন কর্মকান্ডের কারণে বায়ুমন্ডলে ৪০% কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস বৃদ্ধি পেয়েছে। কার্বন ডাই অক্সাইডের এই বৃদ্ধির বেশির ভাগই ঘটেছে মূলত জীবাশ্ম জ্বালানি, কয়লা, তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস পোড়ানোর ফলে। এ ছাড়া বন উজাড়, ভূমি ব্যবহারে পরিবর্তন এবং ভূমিক্ষয়ও এর জন্য দায়ী। ধারণা করা হয়, বর্তমানে যে হারে গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গত হচ্ছে তা যদি অব্যাহত থাকে তাহলে বাস্তুতন্ত্র (ঊপড়ংুংঃবস) ও জীববৈচিত্র্যসহ বিভিন্ন প্রাণী ও মানুষ মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন হবে।
যেসব গ্রিন হাউস গ্যাস পৃথিবীর বায়ুমন্ডল প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। সেগুলো হলো- জলীয় বাষ্প, কার্বন ডাই অক্সাইড, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড, ওজোন, ক্লোরো ফ্লোরো কার্বন ও হাইড্রোফ্লুরো কার্বনগুলো।
বায়ুমন্ডলে গ্রিন হাউস গ্যাসের ঘনত্ব মূলত এর উৎস ও ব্যবহৃত হয়ে যাওয়ার পরিমাণের ওপর নির্ভর করে। নির্গত গ্যাসের যে অংশ বায়ুমন্ডলে থেকে যায়, তাকে 'বায়ুবাহিত ভগ্নাংশ' বা ধরৎনড়ৎহব ভৎধপঃরড়হ (অঋ) বলে।
গ্রিন হাউস গ্যাস নয় যে গ্যাস বায়ুমন্ডলের প্রধান উপাদানগুলো। যেমন- নাইট্রোজেন, অক্সিজেন এবং আর্গন গ্রিন হাউস গ্যাস নয়। কারণ, তারা অবলোহিত রশ্মি শোষণ করে না। আবার মনোঅক্সাইড অথবা হাইড্রোজেন ক্লোরাইড অবলোহিত রশ্মি শোষণ করলেও তাদের সক্রিয়তা ও দ্রবণীয়তার জন্য তারা বায়ুমন্ডলে অতি স্বল্প সময়ের জন্য থাকতে পারে। সে জন্য গ্রিন হাউস প্রতিক্রিয়াতে তাদের তাৎপর্যপূর্ণ অংশগ্রহণ না থাকায় গ্রিন হাউস গ্যাস হিসেবে বিবেচনা করা হয় না।
গ্রিন হাউস প্রতিক্রিয়া হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া, যার দ্বারা ভূপৃষ্ঠ থেকে বিকীর্ণ তাপ বায়ুমন্ডলীয় গ্রিন হাউস গ্যাসগুলো দ্বারা শোষিত হয়ে আবার বায়ুমন্ডলের অভ্যন্তরে বিকিরিত হয়। এই বিকীর্ণ তাপ ভূপৃষ্ঠে উপস্থিতিতেও বায়ুমন্ডলের নিম্নস্তরে ফিরে এসে ভূপৃষ্ঠের তথা বায়ুমন্ডলের গড় তাপমাত্রাকে বাড়িয়ে দেয়।
মূলত সৌর বিকিরণ দৃশ্যমান আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্যে বায়ুমন্ডলের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করে
ভূপৃষ্ঠকে উত্তপ্ত করে এবং ভূপৃষ্ঠ পরবর্তীকালে এই শক্তি নিম্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যে অবলোহিত রশ্মি আকারে নির্গত করে। এই অবলোহিত রশ্মি বায়ুমন্ডলের গ্রিন হাউস গ্যাসগুলো দ্বারা শোষিত হয়ে অনেক বেশি শক্তি আকারে ভূপৃষ্ঠে ও বায়ুমন্ডলের নিম্নস্তরে পুনঃবিকিরিত হয়। শীতপ্রধান দেশগুলোতে সাধারণত কাচ নির্মিত গ্রিন হাউস তৈরি করে উদ্ভিদ উৎপাদন করার পদ্ধতি অনুসরণ এই প্রক্রিয়ার নামকরণ করা হয়। একটি গ্রিন হাউসে সৌর বিকিরণ কাচের মধ্য দিয়ে গ্রিন হাউসটিকে উত্তপ্ত রাখে, এখানে মৌলিক পার্থক্য হচ্ছে গ্রিন হাউসটিকে বাতাসের প্রবাহ হ্রাস করে উত্তপ্ত বাতাস কাচের কাঠামোর মধ্যে পরিচলন ব্যতিরেকে ধরে রাখতে পারে। পৃথিবীতে এই প্রাকৃতিক গ্রিন হাউস প্রতিক্রিয়ার প্রাণের সৃষ্টি করতে সহায়তা করেছে। কিন্তু মানুষের বিভিন্ন কর্মকান্ড বিশেষত, জীবাশ্ম জ্বালানির অতিরিক্ত দহন এবং বনাঞ্চল ধ্বংসের কারণে প্রাকৃতিক গ্রিন হাউস প্রতিক্রিয়া তীব্রতর হচ্ছে ফলে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।