মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ৯ বৈশাখ ১৪৩২

কাঁসা-পিতল নিয়ে সফল শিউলি

ঝুমকি বসু
  ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
কাঁসা-পিতল নিয়ে সফল শিউলি
কাঁসা-পিতল নিয়ে সফল শিউলি

সংকর ধাতু হিসেবে কাঁসা-পিতলের ঐতিহ্য হাজার বছরের। এই ধাতুর তৈরি থালা-বাসন আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী আর অন্যদিকে যদি ঘর সাজানো বা হোম ডেকর জিনিসের কথা চিন্তা করি তাহলে ঘরকে আভিজাত্যে ভরিয়ে দিতে এর তুলনা নেই। তাছাড়া ইনভেস্টমেন্ট হিসেবেও আমরা কাঁসা-পিতল ক্রয় করতে পারি। কারণ কাঁসা-পিতলের রয়েছে রিসেল ভ্যালু। ধাতু হওয়ার কারণে কাঁসা-পিতল সহজে নষ্ট হয় না এবং বছরের পর বছর টিকে থাকে। তাই যে কোনো সময় আমাদের প্রয়োজনে বিক্রি করে প্রয়োজনীয় অর্থ ফেরত পেতে পারি।

শিউলি আক্তার কাজ করছেন দেশীয় পণ্য কাঁসা-পিতল নিয়ে। অনলাইনে কাজ করে তিনি আজ একজন সফল নারী উদ্যোক্তা। আট ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট শিউলি। বাবা ছিলেন ব্যবসায়ী এবং সমাজসেবক। ছোটবেলায় বাবাকে দেখেছেন অত্যন্ত পরিশ্রমী ব্যবসায়ী এবং উদ্যোক্তা হিসেবে। তখন থেকেই ইচ্ছে ছিল নিজেকে ব্যবসায়ী হিসেবে গড়ে তোলার। ২০২০ সালে যখন আমরা সবাই যখন করোনাকালীন লকডাউনে আটকা পড়ে গেলাম সেই সময় শিউলি ঢাকার বন্দিজীবন ছেড়ে বাবার বাড়ি চলে যান। ব্যস্ততা না থাকায় কয়েকটি উদ্যোক্তা গ্রম্নপে যুক্ত হন।

উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন জীবন সংগ্রামের গল্প পড়তে পড়তে নিজের জীবন নিয়েও নতুন করে ভাবতে শুরু করেন শিউলি। সংসার সামলে, বাচ্চাদের দেখাশোনা করেও তারা উদ্যোগের পিছনে সময় দিচ্ছে দেখে শিউলি অনুপ্রাণিত হন। একদিন সন্তানকে পড়াচ্ছিলেন তখন ছেলে তাকে প্রশ্ন করে, লেখাপড়া করে তার মা কি হয়েছে? এই প্রশ্নে বড়সড় ধাক্কা খান শিউলি এবং তার মনে হতে থাকে যে আসলেই সে জীবনে কিছুই করতে পারেনি। ওই মুহূর্ত থেকেই কিছু একটা করার দৃঢ় সংকল্প করেন। তবে চাকরি তাকে কোনো দিন টানেনি, তিনি স্বাধীনভাবে কিছু করতে চেয়েছেন। জন্মস্থান টাঙ্গাইল হওয়ায় টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী পণ্যগুলো নিয়েই কাজ করার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। ২০২১ সালে একটি অনলাইন পেইজ খুলেন এবং খুব চিন্তা-ভাবনা করে নাম রাখেন 'বি বাসিনী' পেজটির নামটা এমনভাবে দিয়েছেন, যা বাংলাদেশকে রিপ্রেজেন্ট করবে। বি বাসিনীর বি হচ্ছে বাংলাদেশ আর বাসিনী হচ্ছে বাস করে বা বাসিন্দা।

সামাজিক বা অর্থনৈতিক প্রতিকূলতা তেমন ফেস না করলেও ডিজিটাল পস্ন্যাটফর্মের অভিজ্ঞতা কম থাকার কারণে বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হয়েছে তাকে। আরেকটি প্রতিকূলতা হচ্ছে ক্রেতা খুঁজে পাওয়া। কারণ অনলাইনে কাঁসা-পিতলের ক্রেতা খুঁজে পাওয়া অনেক কঠিন।

অথচ বলা যায়, অনলাইনে এত দাম দিয়ে অথেন্টিক কাঁসা-পিতল পাবেন কি না এমন দ্বিধাতেও থাকেন সবাই। সেই প্রতিকূলতা কাটাতে তিনি প্রচুর অফলাইন মেলায় অংশ নেন। এছাড়া, যুক্ত হন নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জয়ীতা ফাউন্ডেশন এবং বাংলাদেশ কারুশিল্পের সঙ্গে। এতে ক্রেতারা তার পণ্য হাতে ধরে দেখার সুযোগ পান এবং তার অনলাইন পেজটি বিশ্বাসসযোগ্য হয়ে উঠে। এরপর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এখন শিউলির উদ্যোগ যেমন সুনাম কুড়িয়েছে, অনলাইন সেক্টরে সফল উদ্যোক্তা হিসেবে তিনি নিজের নামটিও লেখাতে পেরেছেন।

কাঁসা-পিতল বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী পণ্য। এই পণ্যগুলো যেন কালের বিবর্তনে হারিয়ে না যায় সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছেন তিনি। এছাড়া, শুধু দেশের মধ্যে নয়, বাংলাদেশের কুটিরশিল্পকে বিশ্ব দরবারে পৌঁছে দিতে চান শিউলি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে