নারীদের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করেছেন বেগম রোকেয়া বহু বছর আগ থেকে। নারীদের শিক্ষিত করে তুলতে তিনি গোটা সমাজ ও সনাতন মনোভাবের সঙ্গে লড়েছেন। নারীজাগরণ নিয়ে তার বিভিন্ন মূল্যবান উক্তি পাওয়া যায় তার লেখা বিভিন্ন প্রবন্ধে।
১. যখনই কোনো ভগ্নী মস্তক উত্তোলনের চেষ্টা করেছেন, অমনি ধর্মের দোহাই বা শাস্ত্রের বচনরূপ অস্ত্রাঘাতে তার মস্তক চূর্ণ হয়েছে। আমরা প্রথমত, যা মানি না, তা পরে ধর্মের আদেশ ভাবিয়ে শিরোধার্য করেছি। আমাদের অন্ধকারে রাখার জন্য পুরুষরা, ওই ধর্মগ্রন্থগুলোকে ঈশ্বরের আদেশপত্র বলিয়া প্রচার করেছেন। এই ধর্মগ্রন্থগুলো পুরুষ রচিত বিধিব্যবস্থা ভিন্ন আর কিছুই নহে।
২. ভগিনীরা! চুল রগড়াইয়া জাগে উঠুন, অগ্রসর হউন! মাথা ঠুকে বল মা! আমরা পশু নই; বল ভগিনী! আমরা আসবাব নই; বল কন্যে আমরা জড়োয়া অলঙ্কাররূপে লোহার সিন্ধুকে আবদ্ধ থাকার বস্তু নই; সবাই সমস্বরে বল আমরা মানুষ।
৩. না জাগিলে ভারত ললনা, এ ভারত আর জাগিবে না।
৪. আমরা পুরুষের ন্যায় সাম্যক সুবিধা না পেয়ে পশ্চাতে পড়ে আছি।
৫. কন্যারা জাগ্রত না হওয়া পর্যন্ত দেশমাতৃকার মুক্তি অসম্ভব। (মুক্তিফল গল্প)
৬. যে শকটের এক চক্র বড় (পতি) এবং এক চক্র ছোট (পত্নী) হয়, সে শকট অধিক দূরে অগ্রসর হতে পারে না; সে কেবল একই স্থানে (গৃহকোণেই) ঘুরতে থাকবে। (মতিচুর প্রবন্ধগ্রন্থে নারী ও পুরুষকে এক গাড়ির দুই চাকার সঙ্গে তুলনা প্রসঙ্গে।)
৭. মেয়েদের এমন শিক্ষায় শিক্ষিত করে] তুলতে হবে, যাতে তারা ভবিষ্যৎ জীবনে আদর্শ গৃহিণী, আদর্শ জননী এবং আদর্শ নারীরূপে পরিচিত হতে পারে।
৮. আমরা সমাজের অর্ধাঙ্গ, আমরা পড়ে থাকিলে সমাজ উঠবে কীরূপে? কোনো ব্যক্তিকে এক পা বেঁধে রাখলে সে খোঁড়ে খোঁড়ে কতদূর চলবে? পুরুষের স্বার্থ এবং আমাদের স্বার্থ ভিন্ন নহে। তাদের জীবনের উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য যাহা আমাদের লক্ষ্য তাই।
৯. দেহের দু'টি চক্ষুস্বরূপ মানুষের সব রকমের কাজকর্মের প্রয়োজনে দু'টি চক্ষুর গুরুত্ব সমান।
১০. 'শিক্ষা লাভ করা সব নর-নারীর অবশ্য কর্তব্য।' কিন্তু আমাদের সমাজ সর্বদা তা অমান্য করেছে।