বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১০ বৈশাখ ১৪৩২

ঘরে ও বাইরে নারী

নন্দিনী ডেস্ক
  ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
ঘরে ও বাইরে নারী
ঘরে ও বাইরে নারী

পরিবার, কর্মক্ষেত্রে, সমাজ- সর্বত্রই নারীর জন্য চ্যালেঞ্জ একটু বেশি। আর কর্মজীবী নারীর চ্যালেঞ্জটা যেন আর একটু বেশি। সংসার- সন্তান সামলে কর্মক্ষেত্রকেও দিতে হয় সমান গুরুত্ব।

কর্মজীবী নারী শব্দটি শুনলেই চোখে ভেসে ওঠে ব্যস্ত ও দায়িত্বশীল এক চেহারা। দশভুজার মতো কর্মজীবী নারী ঘরে ও বাইরে দুই জায়গাতেই নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করে থাকেন। দায়িত্ব পালন শুরু হয় সেই ভোর থেকেই। সকালের খাবার তৈরি করা, বাচ্চাদের স্কুলে পাঠানোর জন্য তৈরি করা, তাদের টিফিন তৈরি করা, সকাল ও দুপুরে খাবার গুছিয়ে রাখা, দুপুরে পরিবারে বাকি সদস্যরা কী খাবে সেই দিকটা সামলে অফিসের জন্য নিজেকে তৈরি করা তো সোজা কথা নয়। বাচ্চারা ঠিকমতো স্কুলে গেল কিনা, বাসায় এলো কিনা, খেল কিনা, বাসায় অসুস্থ বয়স্ক সদস্য থাকলে তার খাওয়া হলো কিনা কিংবা ওষুধ খেল কিনা- এ সবের খোঁজ নেওয়াটাও তাদের নিত্যদিনের রুটিনেরই অংশ। এসব তদারকি করার পাশাপাশি অফিসকেও দিতে হয় সমান গুরুত্ব। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যরোর (বিবিএস) জরিপ অনুযায়ী কর্মজীবী পুরুষের তুলনায় কর্মজীবী নারী কাজ করেন তিনগুণ। তবে কর্মজীবী নারীর গৃহস্থালি কর্মকান্ডের আর্থিক মূল্যায়ন করা হয় না, এর গুরুত্বও দৃশ্যমান হয় না। শ্রমবাজারে নারীর অংশগ্রহণ দিন দিন বাড়ছে; কিন্তু ঘরের কাজ বাদ দিয়ে নয়। কারণ অনেকেই মনে করেন ঘরের কাজ শুধু নারীরা করবেন। অনেক পরিবার আছে, নারীকে শর্তই দেয় যে ঘরের কাজ সামলে যদি চাকরি করতে পার তাহলে কর। যিনি বেশি বেতনে চাকরি করেন, তিনি হয়ত ঘরের কাজে সহায়তা করার জন্য লোক রাখতে পারেন। কিন্তু কম পারিশ্রমিক পাওয়া কর্মজীবী নারীদের সমস্যা হয় বেশি। চাকরি সামলে একজন কর্মজীবী মা সন্তানের দেখভাল শুধু নয়, তাদের সঠিক লেখাপড়ার দিকে নজর দেওয়ার দায়িত্বটাই যেন ওই মায়েরই। এক কথায় সন্তানের সুষ্ঠু লালনপালনের দায়িত্বটা যেন অনেকটা অবধারিতভাবেই মায়ের।

তাই অফিস থেকে ফিরে কর্মজীবী নারীকে নামতে হয় আরেক দফা সংসারের কাজে। অনেকটা যুদ্ধ ক্ষেত্রের মতো। যুদ্ধক্ষেত্রে বিরতি থাকলেও এই সংসার সামলানোর যুদ্ধে বিরতি বলে কিছু নেই। প্রতিনিয়ত তাকে লড়ে যেতে হয়। ঘর-অফিস, আবার ঘর। ঘরে বাইরে যে নারী এত শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন দিনের পর দিন পরিবারে তারা কতটুকু মর্যাদা পাচ্ছেন?

আমাদের দেশে চলমান পিতৃতান্ত্রিক পরিবার ব্যবস্থায় একজন মা কিংবা পরিবার প্রধানের স্ত্রী হিসেবে নারী শুধু কাজেকর্মে ব্যস্ত থাকবেন, কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তার মতামতের ভূমিকা খুব একটা থাকে না। তিনি যেহেতু ঘরে ও বাইরে দুই জায়গাতেই দায়িত্ব পালন করছেন, আয়-উপার্জন করছেন, তাই পারিবারিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রেও তার মতামতের গুরুত্ব আছে বৈকি।

যৌক্তিক বিবেচনায় যতখানি গ্রহণযোগ্য, ঠিক

ততটাই নারীর মতামতকে আমলে নিতে হবে। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না কর্মজীবী নারীরাই অফিস এবং পরিবার এই দুটো প্রতিষ্ঠানকে বস্তুত বাঁচিয়ে রাখেন।

কাজের ক্ষেত্রে নারীদের আইনি অধিকার সংরক্ষণের মাধ্যমে ইউরোপীয় দেশগুলো লিঙ্গ সমতা নিশ্চিত করেছে। এর মধ্যে শতভাগ সফল দেশগুলো হলো- বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, লাটভিয়া, লুক্সেমবার্গ ও সুইডেন।

নারীর সমতা, মর্যাদা, অধিকারের প্রসঙ্গে বড় পরিসরে পরিবর্তন রাতারাতি আনা অসম্ভব হলেও ব্যক্তিগত চর্চা দিয়ে তার কিছুটা উপশম অন্তত করা যায়। তার জন্য বড় বড় লেখায় নারীর গুণকীর্তন না করলেও চলে,গোলাপ-রজনীগন্ধার ডাঁটা না হলেও চলে। ঘরের নারী, অফিসের সহকর্মী, রাস্তার সহযাত্রীকে নিজের বোঝাটুকু, হীনম্মন্যতাটুকু, বিকৃতিটুকু চাপিয়ে না দিয়ে তাকে তার জীবন, তার কাজ, তার জায়গাটুকু ছেড়ে দিলেই চলে। আলাদা করে আর কোন চেষ্টা করতে হবে না। প্রত্যেকের নিজের একটা জীবন আছে। নারী, সে জীবনে বছরে একবার নারী দিবসের শুভেচ্ছা নিয়ে বা না নিয়ে যেভাবেই হোক নিজের যাপনটুকু করে যাক।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে