নোবেল জয়ী প্রথম নারী

প্রকাশ | ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০

নন্দিনী ডেস্ক
মারি কু্যরি ১৮৬৭ সালের ৭ নভেম্বর পোল্যান্ডের ওয়ারশতে জন্মগ্রহণ করেন, যেটি তখন রাশিয়ান সাম্রাজ্যের অংশ ছিল। তিনি ছিলেন প্রথম মহিলা বিজ্ঞানী- যিনি নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। এই পোলীয় ও ফরাসি বিজ্ঞানী ১৯০৩ সালে তেজস্ক্রিয়তার ওপর গবেষণার জন্য তার স্বামী পিয়ের কু্যরি এবং তেজস্ক্রিয়তার আবিষ্কারক অঁরি বেকেরেলের সঙ্গে যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার পান। তিনি ছিলেন প্রথম মহিলা বিজ্ঞানী- যিনি বিজ্ঞানের দুইটি ভিন্ন শাখায় দুইবার নোবেল পুরস্কার জেতেন। তিনি প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়েরও প্রথম মহিলা অধ্যাপক ছিলেন। তিনিই ছিলেন প্রথম মহিলা- যার অসামান্য মেধার কারণে ১৯৯৫ সালে তাকে প্যান্থিয়নে সমাহিত করা হয়। মারি কুরি ওয়ারশর গোপন ভাসমান বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেছিলেন এবং ওয়ার্সাতেই তার ব্যবহারিক বৈজ্ঞানিক প্রশিক্ষণ শুরু করেছিলেন। ১৮৯১ সালে ২৪ বছর বয়সে সে তার বড় বোন ব্রোনিস্স্নাভার সঙ্গে প্যারিসে পড়তে যান। সেখানেই সে তার পরবর্তি বৈজ্ঞানিক কাজ পরিচালিত করেছিলেন। ১৯০৩ সালে মারি কুরি তার স্বামী পিয়েরে কুরি এবং পদার্থবিদ হেনরি বেকেরেলের সঙ্গে পদার্থ বিদ্যায় নোবেল পুরস্কার জেতেন। তিনি এককভাবে ১৯১১ সালে রসায়নেও নোবেল পুরস্কার জেতেন। পদার্থবিজ্ঞানে তিনি নোবেল পান তেজস্ক্রিয়তা নিয়ে কাজ করার জন্য। আর রসায়নে নোবেল পান পিচবেস্নন্ড থেকে রেডিয়াম পৃথক করার জন্য। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় হাসপাতালগুলোতে এক্স-রের সরঞ্জামের ঘাটতি ছিল। যুদ্ধাহত রোগিদের এক্স-রে সঠিকভাবে করানোর অর্থ জোগাতে তিনি তহবিল সংগ্রহে নামেন। এ সময় অসুস্থ শরীর নিয়ে তিনি ২২০টি রেডিওলোজি স্টেশন গড়ে তোলেন। এর মধ্যে ২০০টি বিভিন্ন জায়গায় স্থায়ী ছিল এবং ২০টি ছিল ভ্রাম্যমাণ। এগুলো তিনি বিভিন্ন ধনী মহিলাদের কাছ থেকে গাড়ি ধার নিয়ে তৈরি করেছিলেন। তিনি নিজেও বিভিন্ন স্টেশনে এক্সে-রে করতে সাহায্য করতেন। যুদ্ধের সময় তার গড়া এই রঞ্জনবিদ্যা ইনস্টিটিউটগুলোয় প্রায় ১০ লাখ আহতদের এক্স-রের ব্যবস্থা করেছিল। পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারসতে নিজের গড়া রেডিয়াম ইনস্টিটিউটসহ তিনি অন্য একটি রেডিয়াম ইনস্টিটিউটে কাজ করতেন। রেডিয়াম বিষয় নিয়ে রেডিয়াম ইনস্টিটিউটে গবেষণা করে তিনি তার মেয়ে ইরিন, মেয়ের স্বামী ফ্রেডরিক জুলিয়েটের সঙ্গে যৌথভাবে নোবেল পান। তিনি নিজে প্রথম যে মৌলটি আবিষ্কার করেন, তার জন্মভূমির নামানুসারে ওই মৌলের নাম দেন পোলনিয়াম। গবেষণার সময় নিজের জামার পকেটে রেডিয়াম পূর্ণ টেস্টটিউব রেখে দিতেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় নিজের তৈরি ভ্রাম্যমাণ এক্স-রশ্মি ইউনিটে কাজ করার মাধ্যমে তেজস্ক্রিয়তার কাছাকাছি আসায় অ্যাপস্নাস্টিক অ্যানেমিয়ায় মারি কু্যরি ১৯৩৪ সালে ৪ জুলাই ফ্রান্সের (হাউতে-সাভইয়ের) সাঞ্চেলেস্নমজের একটি স্বাস্থ্যনিবাসে মৃতু্যবরণ করেন। মারি কু্যরি বলতেন, জীবনে কোনো কিছুকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই, এটা শুধু বোঝার জন্য। এখন সময় এসেছে আরো বেশি করে বোঝার, যাতে আমরা কম ভয় পাই। আমাদের টাকা ছিল না, 'ল্যাবরেটরি ছিল না, এই কঠিন অত্যাবশ্যক কাজ চালাবার জন্য কোনো সাহায্য ছিল না। এ যেন নয় কে হয় বানানো...আমার স্বামী ও আমার জীবনের এই সময়টাকে 'আমাদের যৌথ জীবনের দুঃসাহসিকতা অধ্যায়' বললে বেশি বলা হবে না। তার বিখ্যাত উক্তিগুলো হলো- ১. নিখুঁততার ভয় পেয়ে লাভ নেই। নিখুঁততা পর্যন্ত আপনি কখনোই পৌঁছুতে পারবেন না। ২. মানুষের ব্যাপারে কম কৌতূহলী হোন। বরং কৌতূহলী হন বুদ্ধি বা তত্ত্বের প্রতি। ৩. আপনি আপনার আপন সত্তার বিকাশ না ঘটিয়ে আরো উন্নত কোনো পৃথিবীর স্বপ্ন দেখতে পারেন না। উন্নত পৃথিবীর জন্য আমাদের সর্বাগ্রে নিজেদের সত্তার উন্নয়ন ঘটাতে হবে। ৪. কেউ হয়ত লক্ষ্যই করে না কী ঘটে গেছে। আবার কেউ শুধু চেয়েই থাকে পরিশেষে কী ঘটবার আছে, তার দিকে। ৫. কিছু নৈরাশ্যবাদী বিজ্ঞানী আছেন- যারা সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করবার পরিবর্তে ত্রম্নটি খুঁজতেই অধিক তৎপর থাকেন। ৬. আপনার কাছে যে উপাত্তটুকু রয়েছে আপনি কেবল সেটারই বিশ্লেষণ করতে পারবেন। কৌশলী হন, কী উপাত্ত আপনি গ্রহণ করবেন আর কীভাবে তা সংরক্ষণ করবেন। ৭. প্রথম নীতিটা হলো, কোনো মানুষের মাধ্যমে অথবা কোনো ঘটনার দ্বারা কারো সত্তাকেই আঘাত করা যাবে না। ৮. বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে আমাদের আগ্রহী হতে হবে বিষয়ের প্রতি; লোকের প্রতি নয়। ৯. আমি তাদেরই একজন- যারা মনে করেন বিজ্ঞানের রয়েছে এক মহত্তম সৌন্দর্য। ১০. যখন রেডিয়াম আবিষ্কৃত হলো তখন কেউই প্রমাণ করে দিতে পারেনি এই বস্তু হাসাপাতালে ব্যবহৃত হবে। অর্থাৎ এটা ছিল নিখাদ এক বিজ্ঞানের অগ্রগতি। এর দ্বারা একথাই প্রমাণিত হয় যে, বিজ্ঞানের অগ্রগতিকে কোনো বস্তুর ব্যবহারিকতা দিয়ে বিবেচিত হতে হবে না। বরং বিজ্ঞানের নিজের জন্যই বিজ্ঞানের অগ্রগতি। সবচেয়ে জনপ্রিয় নারী বৈজ্ঞানিক হিসেবে মারি কু্যরি বৈজ্ঞানিক জগতের একজন আদর্শ এবং সারা বিশ্বে তিনি সম্মানিত হয়েছেন। নিউ সায়েন্টিস্ট কর্তৃক ২০০৯ সালে পরিচালিত একটি ভোটে কু্যরি 'বিজ্ঞানে সর্বাধিক উজ্জীবিতকারী নারী' নির্বাচিত হন। পোল্যান্ড এবং ফ্রান্স ২০১১ সালকে মারি কু্যরির বর্ষ ঘোষণা করেন এবং জাতিসংঘ একে রসায়নের আন্তর্জাতিক বর্ষ ঘোষণা করেন।