বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৭ বৈশাখ ১৪৩২

আর্থিক স্বাবলম্বিতা

নন্দিনী ডেস্ক
  ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
আর্থিক স্বাবলম্বিতা
আর্থিক স্বাবলম্বিতা

নারীদের আর্থিক স্বাবলম্বিতা ভীষণ জরুরি। আজকাল কি মানুষ শুধু খেয়ে পরে বাঁচে? ইন্টারনেটের যুগে মানুষের কত কিছু যে চাহিদা আর কতশত শখ। সেসব চাহিদা পূরণের জন্য দরকার আর্থিক সচ্ছলতা। দরকার সংসারে দুজনেরই স্বনির্ভরতা।

করোনা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিল সংসারে দুজনেরই আর্থিক সচ্ছলতা কতটা জরুরি। ঘরে-বাইরে নারী নির্যাতনের মাত্রা বেড়েছে। যদিও নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ, নির্যাতন নতুন নয়। নারীর প্রতি বৈষম্য, নির্যাতন রুখে দিতে হলে নারীর শক্ত অবস্থান দরকার আর আর্থিক স্বনির্ভরতাই পারে অনেকাংশে এই নির্যাতন রুখতে।

নারীদের জীবন জটিল। কন্যাসন্তান শৈশব থেকেই বৈষম্যের শিকার, বয়স যত বাড়ে তত বেশি এর সম্মুখীন হতে হয় তাকে। অবশ্য সব বৈষম্য আর জটিলতার শুরু হয় তাদের কাছের মানুষের কাছ থেকেই। 'বাল্যবিয়ের শীর্ষে বাংলাদেশ' এটা দেখেই বোঝা যায় যে, নিজের মা-বাবাই মেয়েদের বোঝা মনে করেন। অবিবেচকের মতো নিজের কন্যাকে ঠেলে দেন অনিশ্চয়তার পথে। এছাড়া, গ্রামাঞ্চলে শতভাগ শিক্ষা আজও নিশ্চিত করা যায়নি। বর্তমান সময়ে টালমাটাল দাম্পত্য সম্পর্ক। অবিশ্বাস-অনাস্থা-ভরসাহীনতার কারণে অনেক সংসারেই সংকট তৈরি হচ্ছে। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে হলেও নারীকে স্বাবলম্বী হতে হবে।

আর্থিক সাপোর্ট না থাকার কারণে স্বামীর পরিবারের নিপীড়ন, অত্যাচার নারীদের মুখ বুজে সহ্য করতে হয়। তাদের থাকে না মাথা গোঁজার মতো ঠাঁই। পরিবার-পরিজনও এ সময় মুখ ফিরিয়ে নিয়ে নারীকে ঠেলে দেয় মৃতু্যর মুখে। এ ক্ষেত্রে নারী অর্থিকভাবে স্বনির্ভর থাকলে নিজের বিরুদ্ধে হওয়া সব অন্যায়কে রুখে দিতে পারে। এছাড়া, নারী স্বাবলম্বী হলে পরিবারের সদস্যদের চাহিদা পূরণ, নিজের শখের কাজ করা, বাবা-মাকে সাহায্য করা- এমন বিবিধ কাজ সে একাই সামলাতে পারে।

নিজেকে আত্মবিশ্বাসী ও পরনির্ভরশীলতা বন্ধে সব নারীই স্বাবলম্বী হতে পারে, যদি সে অটুট মনোবল এবং অদম্য ইচ্ছেশক্তি নিয়ে কাজ শুরু করতে পারে। এ ক্ষেত্রে পারিবারিক সাপোর্টও জরুরি। শুধু উচ্চশিক্ষিত হলেই যে কেউ অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা দূর করতে পারে, এমন ধারণা ভুল। উদ্যোক্তা হতে চাই সাহস, সদিচ্ছা আর পরিবারের সাপোর্ট। সময়ের সঙ্গে নারীদের কর্মক্ষেত্রের উন্নয়ন ও নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা ক্রমে বাড়ছে। আজকাল নারীরা বিভিন্ন ধরনের কর্মে নিযুক্ত। বুটিক শপ, ক্ষুদ্র কুটির শিল্প, হোম ডেলিভারি, জুয়েলারি তৈরি, খামারি ব্যবসা, আউটসোর্সিং, পোশাক তৈরির মতো নানা কাজে নিজেদের সম্পৃক্ত করেছেন। কিছু কাজের ক্ষেত্রে প্রথম পর্যায়ে নানারকম সমস্যা হতে পারে কিন্তু নারীদের সেটুকু কাটিয়ে ওঠার ক্ষমতা আছে। কারণ নারীরা পৃথিবীতে জন্মেই নানারকম বৈষম্যের শিকার হয়, রাস্তায় চলাচলের ক্ষেত্রে গা বাঁচিয়ে চলতে হয়, কর্মক্ষেত্রে তাকে পুরুষ সহকর্মীর চেয়ে ভালো করার তাগিদ থাকে, পরিবারে সবার মুখে হাসি-সুখ দেখতে তাকে নিজকেই খেয়াল রাখতে হয়। নারীরা সর্বত্র অন্যের খুশি, মঙ্গল এসবে নিজের জীবন বিলিয়ে দিতে দিতেই নিজে নিঃশেষ হয়ে যায়। তাই, সব মেয়েরই নিজের পায়ে দাঁড়ানো, ইনকাম করা, নিজের একটা পরিচয় তৈরি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, আর্থিক নিরাপত্তা প্রতিটি মানুষেরই থাকা প্রয়োজন।

অদম্য মেধা, প্রতিভা, শক্তিতে নারী একদিন সমস্যার প্রতিকূলে থেকেও পৃথিবীকে বশে নেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করবে নিশ্চয়ই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে