নারীদের আত্মরক্ষামূলক প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা জরুরি

প্রকাশ | ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০

ফারহানা আফসার মৌরী
'কোনোকালে একা হয়নি কো জয়ী, পুরুষের তরবারি; প্রেরণা দিয়েছে, শক্তি দিয়াছে, বিজয়ালক্ষ্ণী নারী' কিংবা 'নারী ও পুরুষের সম্পর্ক হলো মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ'- বাক্যগুলো সমাজে নারীদের শক্ত অবস্থানকেই ইঙ্গিত করে। সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় নারীদের ভূমিকার কথা দেশের রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে কবি-সাহিত্যিক; সর্বোপরি সর্বস্তরের মানুষই নিজেদের ভাষায় ফুটিয়ে তুলেছেন। তবে আফসোসের বিষয় হলো এই যে, নারীদের এত সম্মান ও প্রশংসা কেবল গল্প, কবিতা কিংবা উপন্যাসেই সুন্দরভাবে ফুটে ওঠে। বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। আজও অসংখ্য নারী নির্যাতনের শিকার। নারীর প্রতি সহিংসতার পরিসংখ্যান উদ্বেগজনক। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার (ডঐঙ) তথ্য অনুযায়ী, প্রতি তিনজন নারীর মধ্যে একজন জীবনে অন্তত একবার শারীরিক বা যৌন নির্যাতনের শিকার হন। বাংলাদেশে ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সি নারীদের মধ্যে ৫০ শতাংশ নারী কখনো না কখনো সঙ্গীর হাতে শারীরিক বা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ফলে, বাংলাদেশ বিশ্বে এই নির্যাতনের হার অনুযায়ী চতুর্থ স্থানে রয়েছে। দৈনিক পত্রিকার পাতা উল্টালেই নারী নির্যাতনের সংবাদ চোখে পড়ে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, আত্মরক্ষামূলক প্রশিক্ষণের অভাবে নারীদের এসব অত্যাচার সহ্য করতে হয়। আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে কোনো মেয়েই এখন ঘরে বসে নেই। স্বপ্নপূরণের তাড়নায় অধিকাংশেরই নিজ বাড়ি ছেড়ে একা একা থাকতে হয়। এক্ষেত্রে নারীদের আত্মরক্ষামূলক প্রশিক্ষণটি খুবই জরুরি। কেন না, যুগ আধুনিক হলেও আমরা আজও সনাতনী পদ্ধতি অনুসারে মেয়েদেরই দোষ দিই। 'এত রাতে একা কেন বের হয়েছিল' কিংবা 'মেয়েদের আবার এত কীসের স্বাধীনতা'- বাক্যগুলো আমাদের সমাজে অতি কমন। তাই নারীদের নিজেদের রক্ষা নিজেদেরই করতে হবে। সম্প্র্রতি ঘটে যাওয়া ডেফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনাটিকেই আমরা উদাহরণ হিসেবে নিতে পারি। মেয়েটি যদি আত্মরক্ষা প্রশিক্ষিত হতো তাহলে হয়তো হায়েনাদের হাত থেকে বেঁচে যেতে পারত। এ রকম অসংখ্য ঘটনা রয়েছে। তাই প্রাইমারি স্কুল থেকেই মেয়েদের জন্য আত্মরক্ষামূলক প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করতে হবে। ছোটবেলা থেকেই একজন মেয়েকে পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিজেকে রক্ষা করে চলাচলের প্র্যাকটিস করতে হবে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশে এখনো নারীদের জন্য আত্মরক্ষামূলক প্রশিক্ষণ নিয়মিত হয়নি। তবে এ মুহূর্তে এ জিনিসটা সবচেয়ে বেশি জরুরি। নারীর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে এবং তাল মিলিয়ে চলার জন্য এ প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা জরুরি। আত্মরক্ষামূলক প্রশিক্ষণ নারীদের নিজের শরীর এবং স্থান সম্পর্কে সচেতন করে তোলে এবং তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। এ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নারীরা নিজেদের রক্ষার জন্য কিছু মৌলিক কৌশল শিখতে পারে। তাছাড়াও, আত্মরক্ষামূলক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে একটি সামাজিক বার্তা প্রেরণ করা হয় যে, নারীরা নিজেদের রক্ষার জন্য সক্ষম এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সবার দায়িত্ব। আত্মরক্ষামূলক প্রশিক্ষণ নারীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম হতে পারে। তবে এটি সমস্যার সমাধানের একমাত্র উপায় নয়। সামাজিক পরিবর্তন, আইন প্রয়োগ এবং সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করা উচিত। পাশাপাশি এ ব্যাপারে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা জরুরি। লিঙ্গ সমতা প্রচার করা, শিক্ষাব্যবস্থায় লিঙ্গ সংবেদনশীলতা বাড়ানো, যৌন নির্যাতনের বিরুদ্ধে আইন কঠোর করা এবং আইন প্রয়োগ সংস্থাকে আরও দক্ষ করার ব্যাপারেও মনোযোগী হতে হবে।