মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

চা, সুলতানা আর লেমন গ্রাস

সাদিয়া ফয়জুন
  ১২ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
.

শীতের সকালে টিচার্স রুমে সবাই বসে। সুলতানা, একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা, সবাইকে লেমন গ্রাসের চা খাওয়াচ্ছে। অন্য শিক্ষকরা এমন চা আগে কখনও খায়নি, তাই অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, 'এটা আবার কেমন চা?' সুলতানা হাসিমুখে উত্তর দেয়, 'চাইনিজ সু্যপে তো বাঙালিরা লেমন গ্রাস ব্যবহার করে, তবে সেই লেমন গ্রাস চা'তে ব্যবহার করতে দোষ কোথায়?' সুলতানা সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে। তার বাবা ছিলেন বড় পুলিশ অফিসার। তবে তাদের পরিবারের ইতিহাস ছিল জটিল। তার বাবা এক হিন্দু তরুণীকে জোরপূর্বক বিয়ে করেছিলেন, যাকে ধর্ম পরিবর্তন করতে বাধ্য করা হয়েছিল। সুলতানা সেই হিন্দু তরুণীর সন্তান। মায়ের ধর্মান্তরিত হওয়ার পরও পরিবারে হিন্দু ও মুসলিম দুই ধর্মের প্রভাব দেখা যেত। দুই মায়ের পরিবারে বড় হওয়ার কারণে সুলতানার শৈশব কেটেছে বিভিন্ন টানাপড়েনের মধ্যে। বড় মায়ের সন্তানরা উচ্চপদস্থ চাকরিতে নিযুক্ত হয়েছে এবং মেয়েদের বিয়ে হয়েছে নামকরা পুলিশ অফিসার ও জেলারের সঙ্গে। অন্যদিকে, সুলতানা এবং তার দুই ভাইবোন অতটা ভাগ্যবান ছিল না। পারিবারিক দ্বন্দ্বের মাঝে বেড়ে ওঠা সুলতানা মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কখনো তার অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তোলেনি। বড় ভাইবোনদের চেয়ে সুলতানা অনেক ছোট। পরিবারের প্রচুর সম্পত্তি থাকলেও সেই অশান্ত পরিবেশ তার শৈশবে প্রভাব ফেলেছিল। সুলতানা অসচ্ছল ছিল না, তবুও তার মাঝে ছিল এক অদ্ভুত অভ্যাস- মানুষের ছোটখাটো জিনিস চুরি করা। আজ টিচার্স রুমে যে লেমন গ্রাসের চা সে সবার হাতে তুলে দিচ্ছে, তা সে তার বাড়িওয়ালার ছাদ থেকে চুরি করে নিয়ে এসেছে। টিচার্স রুমে সবাই চা পান করে প্রশংসা করছে, কিন্তু কেউই জানে না এই চায়ের গল্প। সুলতানা তাদের দিকে তাকিয়ে মনে মনে হাসে, হয়তো চায়ের স্বাদেই লুকিয়ে আছে তার জীবন সংগ্রামের অদ্ভুত এক মিল। চা যেমন চুপচাপ তার গন্ধ ছড়ায়, তেমনি সুলতানাও তার জীবনের গল্পগুলো মনের গভীরে চাপা দিয়ে রেখেছে আর তার দিপ্তি ছড়িয়ে দিচ্ছে চারদিকে। সুলতানার চায়ের কাপ শেষ হয়, কিন্তু তার অতীতের তিক্ততা থেকে সে এখনো মুক্ত হতে পারেনি। তার জীবন, তার শৈশব, তার পরিবার- সবকিছুই এক জটিলতার মিশ্রণ- যা লেমন গ্রাসের তিক্ত মিষ্টি স্বাদের মতোই তার জীবনকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে