বাল্যবিয়ের অভিশাপ থেকে মুক্ত হতে হবে

আমাদের দেশের শহরাঞ্চলের মানুষ গ্রামের মানুষের তুলনায় অনেকটাই শিক্ষিত এবং আর্থিকভাবে সচল হওয়ায় শহরাঞ্চলে বাল্যবিয়ে আগের তুলনায় অনেক কমে এসেছে। কিন্তু আজও অন্ধকারে রয়ে গেছে এ দেশের গ্রামগঞ্জের অসংখ্য মানুষ। একদিকে পর্যাপ্ত শিক্ষার অভাবে বাল্যবিয়ের কুফল সম্পর্কে তারা সচেতন নয়, অন্যদিকে, দরিদ্র্যতার জন্য বেশিরভাগ পিতামাতাই তাদের অপ্রাপ্ত বয়স্ক কন্যা সন্তানদের বিয়ে দিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে তাদের ভরণপোষণের দায়ভার থেকে নিজেদের মুক্ত করছে

প্রকাশ | ২০ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০

হাসিবুল হাসান হিমেল
বর্তমানে আমাদের দেশ ধীরে ধীরে আধুনিকায়নের দিকে অগ্রসর হলেও কিছু কিছু হীন মনমানসিকতা থেকে এ দেশের মানুষ আজও বেরিয়ে আসতে পারেনি। তার মধ্যে একটি হলো বাল্যবিয়ে। আজকাল আধুনিকায়নের যুগে এসেও বাল্যবিয়ের মতো পূর্বযুগীয় হীন মনমানসিকতার ঘটনা আমাদের দেশে অহরহ ঘটে যাচ্ছে। আমাদের দেশের শহরাঞ্চলগুলোর থেকে গ্রামগঞ্জে ওই ঘটনা বেশি ঘটছে। আর এই ঘটনার জন্য ব্যাপক অর্থে দায়ী হলো শিক্ষার অভাব এবং দরিদ্রতা। আমাদের দেশের শহরাঞ্চলের মানুষ গ্রামের মানুষের তুলনায় অনেকটাই শিক্ষিত এবং আর্থিকভাবে সচল হওয়ায় শহরাঞ্চলে বাল্যবিয়ে আগের তুলনায় অনেক কমে এসেছে। কিন্তু আজও অন্ধকারে রয়ে গেছে এ দেশের গ্রামগঞ্জের অসংখ্য মানুষ। একদিকে পর্যাপ্ত শিক্ষার অভাবে বাল্যবিয়ের কুফল সম্পর্কে তারা সচেতন নয়, অন্যদিকে, দরিদ্র্যতার জন্য বেশিরভাগ পিতামাতাই তাদের অপ্রাপ্ত বয়স্ক কন্যা সন্তানদের বিয়ে দিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে তাদের ভরণপোষণের দায়ভার থেকে নিজেদের মুক্ত করছে। এভাবে দরিদ্র্যতা এবং শিক্ষার অভাবে পিতামাতার হীন মনমানসিকতার জন্য পড়াশোনার প্রতি তীব্র ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অনেক মেয়ে শিকার হচ্ছে বাল্যবিয়ের। ফলে, অবলীলায় ঝরে পড়ছে এ দেশের হাজারো সুপ্ত প্রতিভা। শুধু যে প্রতিভাগুলোই ঝরে যাচ্ছে এমনটা নয়- প্রতিভা ঝরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হুমকির মুখে পড়ছে তাদের জীবনও। দরিদ্র পিতামাতা কন্যা সন্তানদের ভরণপোষণের দায়ভার থেকে নিজেদের মুক্তি পাওয়ার জন্য নিজের অজান্তেই তাদের ঠেলে দিচ্ছে হুমকির মুখে। অপ্রাপ্ত বয়সে বিয়ের ফলে অধিকাংশ মেয়েরা শারীরিক ও মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। তাছাড়া বাল্যবিয়ের ফলে অল্প বয়সে গর্ভধারণের মতো ঘটনা আমাদের দেশে অহরহ ঘটে চলেছে। সেই সঙ্গে অপ্রাপ্ত বয়সে গর্ভধারণের জন্য মা ও শিশু উভয়ই ভুগছে পুষ্টিহীনতায়। এ ছাড়া গর্ভধারণ, গর্ভকালে স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং সন্তান জন্মদান সম্পর্কিত জ্ঞানের অপ্রতুলতার জন্য অনেক মা ও শিশুর জীবন পড়ছে ঝুঁকির মুখে। এখনো আমাদের দেশে প্রতি বছর অসংখ্য মা ও শিশু মারা যাচ্ছে অপ্রাপ্ত বয়সে গর্ভধারণের জন্য। আর এভাবেই সুপ্ত প্রতিভাগুলো ঝরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অকালে নিভে যাচ্ছে অনেক প্রাণও। এখন সময় এসেছে বাল্যবিয়ের মতো হীন মনমানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসা। বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে প্রথমেই আমাদের বাড়াতে হবে জনসচেতনতা এবং ঘটাতে হবে শিক্ষার প্রসার, আর কাজ করতে হবে দারিদ্র্য বিমোচনে। এভাবে শিক্ষার প্রসার ঘটিয়ে এবং দরিদ্র পিতামাতাকে বাল্যবিয়ের কুফল সম্পর্কে সচেতন করতে পারলে বাল্যবিয়ের সংখ্যা কমিয়ে আনা সম্ভব। আর এ জন্য আমাদের প্রত্যেককেই নিজেদের জায়গা থেকে সাধ্যমতো চেষ্টা করে যেতে হবে এবং সরকার ও প্রশাসনকেও আরও কঠোরভাবে বাল্যবিয়ের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তাহলেই হয়তো অকালে ঝরে যাওয়া থেকে বেঁচে যাবে হাজারো সম্ভাবনাময় জীবন।