শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ধর্মঘটের প্রভাব চালের বাজারে পড়বে না: খাদ্যমন্ত্রী

নতুনধারা
  ২১ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০
সাধন চন্দ্র মজুমদার

যাযাদি রিপোর্ট সড়ক পরিবহণ আইন সংশোধনের দাবিতে পরিবহণ মালিক-শ্রমিকদের ধর্মঘটে আগামী ১০ দিন ট্রাক ও কভার্ডভ্যান চলাচল বন্ধ থাকলেও ঢাকায় চালের বাজারে কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে না বলে দাবি করেছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। বুধবার খাদ্য মন্ত্রণালয়ে চালের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে মিল মালিকদের সঙ্গে এক সভার শুরুতে সাংবাদিকদের প্রশ্নে মন্ত্রীর এমন মন্তব্য আসে। সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, 'সাত দিনও যদি পরিবহন ধর্মঘট থাকে, ১০ দিনও যদি থাকে, বাবুবাজারে যে স্টক থাকে, বড় বড় বাজারে যে স্টক আছে, ঢাকার বাজারে বিন্দুমাত্র (সমস্যার) কারণ নেই। '৩-৪ দিন কেন, ১০ দিন বন্ধ থাকলেও প্রভাব পড়বে না, যদি কেউ কারসাজি না করে, গ্যারান্টি দিলাম, আমার সোজা কথা।' পরিবহণ শ্রমিকদের 'স্বেচ্ছা কর্মবিরতিতে' দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও উত্তরের বেশ কিছু জেলায় গত দুইদিন ধরে বাস চলাচল বন্ধ ছিল। বুধবার সকাল থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কেও দূরপালস্নার বাস চলাচলে বাধা দেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে সকাল থেকে সারাদেশে শুরু হয়েছে ট্রাক ও কভার্ডভ্যান ধর্মঘট। ফলে পণ্য পরিবহণে বড় ধরনের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। ধর্মঘটের আগেই যে খুচরা বাজারে মিনিকেট চালের দাম ৩-৪ টাকা বেড়েছে, সে কথা মিল মালিকদের সঙ্গে সভার শুরুতে স্বীকার করে নেন খাদ্যমন্ত্রী। তার ভাষায়, এই দাম বৃদ্ধির যৌক্তিক কোনো কারণ নেই। 'মিল ও বাজার মনিটর করে দেখা গেছে, মজুদের কোনো ঘাতটি নেই, আমদানির কোনো প্রয়োজন নেই, বরং রপ্তানি করার জন্য প্রস্তুত আছি।' সাধন মজুমদার বলেন, কেউ যেন চালের দাম বাড়ানোর চেষ্টা করতে না পারে, সে জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কেও বলা হয়েছে। 'যদি অনাহুত কেউ চালের দাম বাড়াতে চায়, তাহলে কোনো ক্রমেই সহ্য করা হবে না, প্রশয় দেয়া হবে না।' মন্ত্রী তথ্য দেন, ২৬-২৭ টাকার মোটা চাল খুচরা বাজারে ৪-৫ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে, এতে ভোক্তাদের 'আঁতে ঘা' লাগছে। সরকার এটা চলতে দেবে না। ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'পাইকাররা কেজিতে ৫০ পয়সার বেশি লাভ করতে পারেন না, এর বেশি করলে দেশেকে আপনারা শোষণ করতে বসেছেন, এটাও সহ্য করা হবে না। খুচরা বাজার আপনাদের কন্ট্রোল করতে হবে, মনিটরিং করতে হবে। সরকারি গুদামে ১১ লাখ ১২ হাজার ৬৭৪ টন চাল মজুদ আছে এবং চাল ও গম মিলিয়ে মজুদের পরিমাণ ১৪ লাখ ৫৯ হাজার মেট্রিক টন জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, মজুদের এই পরিমাণ 'অন্যান্য দেশের তুলনায়' বেশি। 'চালের দাম আর বাড়বে না'- এমন শপথ নিতে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান সাধন চন্দ্র মজুমদার, যিনি নিজেও পারিবারিক সূত্রে ধান-চালের ব্যবসায় জড়িত। গত ৭ দিনে খুচরা বাজারে মিনিকেট চালের দাম কেজিতে ৩-৪ টাকা বাড়ার বিষয়টি তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, 'খুচরা বিক্রেতারা বৃদ্ধি করছে, যা বাড়ানো উচিত হয়নি। খুচরা বাজারে এটি হচ্ছে, চেষ্টা করব দাম যেন আর না বাড়ে। ভোক্তা অধিকার আইনের ব্যবস্থা নেয়া হবে।' এক সাংবাদিক সাধন মজুমদারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, মন্ত্রী কথা বললে পরদিন দাম আরও বাড়ে- এমন একটি কথা প্রচলিত হয়েছে সাধারণের মধ্যে। উত্তরে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, 'গতবারের চেয়ে ধানের দাম কম রয়েছে, তাই চালের দামও কম হবে- এটাই কথা। কৃষক দাম পাবে না, মধ্যস্বত্ব্বভোগী বেনিফিট বেশি নেবে- এটা চলতে দেয়া যাবে না।' দাম যতটা বেড়েছে, তা কমতে কতদিন লাগবে- এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, 'এখন থেকে যেন না বাড়ে, সে জন্য মিটিং করা হচ্ছে। ভোক্তা অধিকার জরুরিভিত্তিতে যাবে।' বাংলাদেশ অটো, মেজর ও হাস্কিং মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবদুর রশিদ বলেন, 'মিল মালিকদের পক্ষ থেকে চ্যালেঞ্জ করলাম, কোনো কারসাজি করে দাম বাড়ানো হয়নি, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ধানের আমদানি কম হওয়ায় দাম বেড়েছে, তবে বাজার এখন স্থির হয়ে আসছে। আমন ধান উঠলে এ রকম হতো না।' খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুমসহ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন এই মতবিনিময় সভায়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে