মজুরি আন্দোলনে শ্রমিক হতাহতের ঘটনা অনুসন্ধানে সমাজের বিভিন্ন বিশিষ্টজনদের নিয়ে একটি গণতদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ৩১ সদস্যবিশিষ্ট এ গণতদন্ত কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদকে এবং সদস্য সচিব করা হয়েছে বাংলাদেশ শ্রমিক-কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি জহিরুল ইসলামকে। পাশাপাশি গণতদন্ত কমিটির সদস্য হিসেবে আইনজীবী, চিকিৎসক, গবেষক, শিক্ষক ও শ্রমিক নেতাদেরও রাখা হয়েছে।
শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের মাওলানা আকরম খাঁ হলে সংবাদ সম্মেলন করে এ গণতদন্ত কমিটি গঠনের কথা জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মজুরি আন্দোলনে শ্রমিক হতাহতে গণতদন্ত কমিটির সদস্য সচিব জহিরুল ইসলাম বলেন, আমরা আশা করছি, যথাযথ আইন ও নাগরিক অধিকারের দিকে খেয়াল করে, শ্রমিকসহ সবার সাংবিধানিক অধিকার ও দায়িত্ব বিবেচনায় নিয়ে প্রাথমিক তদন্ত কাজ আমরা ১৫ মে এর মধ্যে শেষ করব এবং মে মাসের শেষ সপ্তাহে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত রিপোর্ট দেশবাসীর সামনে উপস্থিত করতে সক্ষম হব। আমরা এ কাজে সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা কামনা করি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে যে, শ্রমিকদের মজুরি সংক্রান্ত দাবি কোনো দয়া দাক্ষিণ্যের বিষয় নয়, মালিকেরাও শ্রমিকের মা-বাবা নন। এটা তাদের প্রাপ্য। কোনো শ্রমিক ১০ থেকে ১৪ ঘণ্টা কাজ করে এখন যে মজুরি পান সেটা স্বাভাবিক আয় নয়, ৮ ঘণ্টা কাজ করেই তার বাঁচার মতো মজুরি পাওয়ার কথা। এক ব্যক্তির যা আয় করার কথা তা যদি পরিবারের দুই-তিনজনের আয় দিয়েও পূরণ না হয় তাহলে তা খুবই অস্বাভাবিক এবং অযৌক্তিক পরিস্থিতি। সেটাই এখন চলছে বাংলাদেশে। যার পরিবর্তন অবশ্যই হতে হবে। শুধু একটি খাত নয়, জাতীয় পর্যায়ে নূ্যনতম মজুরি হতে হবে বাঁচার মতো। সংগঠন, মতপ্রকাশ ও ভোটাধিকারের মতো এটাও সর্বজনের গণতান্ত্রিক অধিকার। এ অধিকারের দাবি জানাতে গিয়ে শ্রমিকের জীবন যাবে, জখম হবে, জুলুমের শিকার হবে, এটা হতে পারে না। এর অবসান দরকার। তার জন্য এসব ঘটনার দায়দায়িত্ব এবং করণীয় নির্ধারণ জরুরি। সে কাজ সম্পাদনের লক্ষ্যেই আমরা এ তদন্ত কমিটি গঠন করেছি।
তিনি বলেন, শ্রমের বিনিময়ে প্রাপ্য নূ্যনতম মজুরি চাওয়ার পরিণামে শিল্পাঞ্চল রক্তাক্ত হয় কেন? কেন অকাল মৃতু্য হয় নারী পুরুষের? কেন জখম হন শত শত শ্রমিক? কেন প্রতিবছর নূ্যনতম মজুরি চাইতে আন্দোলনে নামতে হয়? কেন রাষ্ট্র তার সবরকম সংস্থা নিয়ে সবসময়ই শ্রমিকদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়? পুলিশসহ নানা বাহিনী কি প্রচলিত আইনও মান্য করে? এসব প্রশ্নের উত্তর জানার অধিকার বাংলাদেশের সব নাগরিকের। সরকার এসব অনিয়ম, জুলুম ও হত্যাকান্ডের কোনো কার্যকর তদন্ত না করায় নাগরিকদের পক্ষ থেকে আমরা 'মজুরি আন্দোলনে শ্রমিক হতাহতে গণতদন্ত কমিটি' গঠন করছি। আইনজীবী, শ্রমিক সংগঠক, অর্থনীতিবিদ, লেখক, গবেষকের সমন্বয়ে গঠিত এ তদন্ত কমিটি এসব প্রশ্নের উত্তর অনুসন্ধান করবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জোতির্ময় বড়ুয়া, ব্যারিস্টার সাদিয়া আরমান, অ্যাডভোকেট আইনুন নাহার লিপি, ঐক্য ন্যাপের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট এস এস এ সবুর, চিকিৎসক ডা. ম. হারুন-অর-রশিদ, গবেষক মাহতাব উদ্দীন আহমেদ, গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সভাপতি মোশরেফা মিশু, অ্যাডভোকেট মন্টু ঘোষ ও জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক শামীম ইমাম।