আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল সৎ ব্যবসায়ীদের প্রণোদনা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। একই সঙ্গে অসৎ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে বলেছেন তিনি।
শুক্রবার সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে রাজস্ব ভবনে আন্তর্জাতিক কাস্টমস দিবস-২০২৪ উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে ওয়ার্ল্ড কাস্টমস অর্গানাইজেশনের (ডবিস্নউসিও) 'সার্টিফিকেট অব মেরিট' সম্মাননা দেওয়া হয় এনবিআর ও এর অধিভুক্ত দপ্তরের ১৭ কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তিন প্রতিষ্ঠানকে।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন অর্থসচিব ড. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, এফবিসিসিআই প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম, এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম প্রমুখ।
রাজস্ব বোর্ড দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করছে উলেস্নখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি এখন সারাবিশ্বের কাছে স্বীকৃত। অর্থনৈতিক সব সূচকে বাংলাদেশের দুর্বার অগ্রগতি সাধিত হলেও এখনো আমাদের কর জিডিপি রেশিও সন্তোষজনক নয়। আশা করি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর জিডিপির অনুপাত বাড়াতে সচেষ্ট হবে।
তিনি আরও বলেন, কাস্টম একদিকে রাজস্ব জোগান দিয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে দেশের নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। দেশে ব্যবসাবান্ধব ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরির ক্ষেত্রে বাণিজ্য সহজীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। বাণিজ্য সহজীকরণ ছাড়া ব্যবসার সময় ও খরচ কমানো সম্ভব নয়।
অর্থমন্ত্রী বলেন, আধুনিক বুদ্ধিমত্তা ও বস্নকচেইন ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই। এসব প্রযুক্তি ব্যহারের মাধ্যমে কাস্টমকে স্মার্ট কাস্টমে পরিণত হতে হবে। রাজস্ব আদায় ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তায় যোগ্য হয়ে উঠতে হবে।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি অর্থসচিব ড. খায়রুজ্জামান মজুমদার উলেস্নখ করেন, বাণিজ্য সহজীকরণে (ট্রেড ফেসিলিটেশন) আইন তৈরি হয়েছে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ তা বাস্তবায়ন করা হয়নি; এগুলো সত্যিকারার্থে বাস্তবায়নের তাগিদ দেন তিনি।
অর্থসচিব বলেন, বাণিজ্য সহজীকরণে শুধু জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ভাবমূর্তিই উজ্জ্বল হবে না; ২০২৬ সালে বাংলাদেশ যখন স্বল্পোন্নত দেশে থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হবে- আমরা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে যেসব সুবিধা পাচ্ছি তা আস্তে আস্তে বন্ধ যাবে যাবে; নগদ সুবিধা প্রত্যাহার করা হবে- বাণিজ্য সহজীকরণের মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের সক্ষম করে গড়ে তুলতে পারলে নতুন পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।
তিনি ব্যবসা-বাণিজ্যের খরচ বৃদ্ধির বিভিন্ন কারণ উলেস্নখ করে বলেন, কাস্টমকে বেশি ভূমিকা পালন করতে হবে। কাস্টম অটোমেশন হলে অন্য সমস্যাও দূর হবে।
বাণিজ্য সহজীকরণের ক্ষেত্রে নন-ট্যারিফ ব্যারিয়ারসহ বিভিন্ন রকমের সনদের যেসব কাজ তা শিল্প মন্ত্রণালয় ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আছে। সেগুলো সমন্বিতভাবে করতে কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। এগুলো দ্রম্নত করার তাগিদ দেন অর্থ সচিব।
ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্প প্রতিষ্ঠান ইনসেপটার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল মুক্তাদির বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য সহজীকরণের অংশ হিসেবে অথোরাইজ ইকোনমিক অপারেটর (এইও) ব্যবস্থার আওতায় পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে দ্রম্নততম কাস্টম সেবা প্রদানে এনবিআর আইন তৈরি করে দিলেও তা প্রকৃতপক্ষে বাস্তবায়ন হয়নি।
অর্থমন্ত্রী বলেন, রপ্তানির সময় যেসব পণ্য খোলা হলে নষ্ট হয়ে যাবে সেগুলোও পরিদর্শনের নামে কাস্টম খুলে থাকে। এর ফলে এসব কাঁচামাল নষ্ট হয়ে যায়। কাস্টমকে আরও আধুনিক হতে হবে, যাতে মোড়কের বাইরে থেকে উন্নত যন্ত্রপাতির মাধ্যমে সেগুলো চেক করতে পারে।
এবারের আন্তর্জাতিক কাস্টম দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল 'মিলে নবীন-পুরনো অংশীজন, কাস্টমস করবে লক্ষ্য অর্জন'। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এনবিআরের সদস্য মাসুদ সাদিক। প্রবন্ধের ওপর বক্তব্য রাখেন এনবিআরের আরেক সদস্য জাকিয়া সুলতানা।