আমিনুল হক আমীন রচিত ৭টি নাটক নিয়ে নাটকের বই "নাটক সমগ্র ১ম খন্ড"। আমিনুল হক আমীন পুরোনাম এ, কে, এম, আমিনুল হক আমীন। একাধারে মঞ্চ, টেলিভিশন, বেতার ও চলচ্চিত্র অভিনেতা, নাট্যকার, নির্দেশক, প্রযোজক, অভিনয় প্রশিক্ষক ও ভয়েস আর্টিস্ট। ১৯৮৬ সাল থেকে অদ্যাবধি নিয়মিত মঞ্চে অভিনয় করে আসছেন আমিনুল হক আমীন। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারের তালিকাভুক্ত উচ্চ শ্রেণীর অভিনয় শিল্পী তিনি।
অভিনয়ের পাশাপাশি মঞ্চ নাটকের পান্ডুলিপি সংকট থেকে নাটক লেখার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেন আমিনুল হক আমীন। মঞ্চ, টেলিভিশন ও বেতারের জন্য লিখেছেন নাটক। এক সময় শুভাকাঙ্খীদের উৎসাহ ও সহযোগিতায় নাট্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয় আমিনুল হক আমীনের। তাঁর প্রথম প্রকাশিত নাট্যগ্রন্থ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক নাটক "রক্তঝরা দিনগুলি" প্রকাশিত হয় ১৯৯৫ সালের ফেব্রম্নয়ারী মাসে। ১৯৭১ সালে নিজস্ব মাতৃভুমি, নিজস্ব ঠিকানার জন্যে এদেশের মানুষ নিজের জীবনকে অকাতরে বিলিয়ে দিয়ে পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে স্বাধীন করেছিল এই বাংলাদেশ। আর তারই পটভুমিতে লেখা নাটক "রক্তঝরা দিনগুলি"। এটি দেশের বিভিন্ন স্থানে নাটকটি বহুবার মঞ্চস্থ হয়েছে। দ্বিতীয় নাট্যগ্রন্থ প্রাণবন্ত হাসির নাটক "ফাঁদ" প্রকাশিত হয় ঠিক ২০ বছর পর ২০১৫ সালের ফেব্রম্নয়ারী মাসে। হাস্য রসাত্মক "ফাঁদ" নাটকের পটভুমিতে উঠে এসেছে সমাজের অবহেলিত পিতৃ মাতৃহীন এক শিশুর আশ্রয়ে প্রদানকারী উদারমনা মানুষের উদারতার গল্প। এটিও বহুবার মঞ্চায়িত হয়েছে। এই তৃতীয় নাটক ও আজকের আলোচিত ৭টি নাটক নিয়ে নাট্যগ্রন্থ "নাটক সমগ্র ১ম খন্ড" প্রকাশিত হয় অমর একুশে ফেব্রম্নয়ারী বই মেলায়।
অভিনয় এবং সকল কর্মকান্ডের ফাঁকে ফাঁকে আমিনুল হক আমীন বিভিন্ন মাধ্যমের জন্য নাটক লিখে থাকেন। সেগুলি থেকে বাছাই করে মঞ্চ, টেলিভিশন ও বেতারের জন্য লেখা ৭ টি নাটক ঠাঁই পেয়েছে এই "নাটক সমগ্র ১ম খন্ড" গ্রন্থে। নাটকগুলোর নামই সুন্দরের সমাহার। "অবশেষে বোধোদয়", "আমাদের গর্ব", "বিশ্বাসেই স্বস্তি", "ঘুণ", "চতুর ভোলা", "পজিটিভ ফ্যামিলী" এবং "মুক্তি"। প্রতিটি নাটকেই আছে হাস্যরসে ভরা দেশ, সমাজ এবং জীবন ঘনিষ্ঠ গল্প। বাংলাদেশের স্বাধীনতা, মুক্তিযোদ্ধার জীবন যুদ্ধ, যুব সমাজ তথা সমাজের নেতিবাচক প্রভাবের মূল হোতা মাদক ও নেশা গ্রস্থতা থেকে মুক্তি, শ্রদ্ধা ভালোবাসার সংমিশ্রণে শুদ্ধ জীবন যাপন, দূর্নীতিগ্রস্থ পরিবারের পরিণতি থেকে বোধোদয়, সঠিক পথে জীবন যাপনে সকলের কাছে প্রিয় হয়ে উঠার আশাবাদী দিক, সমাজের অভ্যন্তরে নিরবে নিভৃতে বয়ে চলা ঘুণ থেকে মুক্ত থাকার প্রয়াস এমন সব সুন্দর সমাজ বিনির্মাণের কথা আছে এই গ্রন্থের প্রতিটি নাটকের গল্পে।
নাটক সমগ্র ১ম খন্ড গ্রন্থের জন্য মুখবন্ধ লিখেছেন দেশের বিশিষ্ট নাট্যজন, বীর মুক্তিযোদ্ধা, অধ্যাপক জিয়াউল হাসান কিসলু। বইটির মুখবন্ধে তিনি লিখেছেন অগ্রজ নাট্যকার, নির্দেশক, অভিনয় শিল্পীদের কাছে আমরা আজীবন ঋণী হয়ে আছি। আব্দুলস্নাহ্ আল মামুন, মমতাজউদ্দীন আহমদ, সৈয়দ শামসুলহক, মামুনুর রশীদ, সেলিম আল দীন, মান্নান হীরা, ফেরদৌসী মজুমদার, আতাউর রহমান, ড: ইনামুল হক, এস এম সোলায়মান, জিয়া হায়দার, আলী যাকের প্রমুখের নাম বিশেষভাবে উলেস্নখ করেছেন তিনি। তিনি "নাটক সমগ্র ১ম খন্ড" নাট্য গ্রন্থের নাট্যকার আমিনুল হক আমীনকে সাধুবাদ জানিয়ে লিখেছেন, নাটকগুলো বারবার মঞ্চে কিংবা রেডিওতে, কিংবা টিভিতে প্রযোজনার দাবি রাখে। দর্শকদের জন্য প্রচুর হাসির খোরাক আছে এসব নাটকের অভ্যন্তরে। এ দেশের দর্শকদের কথা বিবেচনায় রেখে এমনিভাবে প্রচুর নির্ভেজাল হাসির নাটক লিখে এবং মঞ্চস্থ করে দেশের নাট্যাঙ্গনকে সমৃদ্ধ করার জন্য নাট্যকার আমিনুল হক আমীন এর প্রতি আশাবাদ ব্যক্ত করেন জিয়াউল হাসান কিসলু।
নাটক সমগ্র ১ম খন্ড নাট্য গ্রন্থের প্রকাশক বিশিষ্ট কবি ও সাংবাদিক এম সহিদুল ইসলাম গ্রন্থটি সম্বন্ধে লিখেছেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর নাট্য চর্চার ধারা বেগবান হয়। আশির দশকে নাট্য চর্চার ক্ষেত্রে বেশ অগ্রগতি লক্ষনীয়। এদের মধ্যে অত্যন্ত প্রতিশ্রম্নতিশীল এবং তারুণ্যদ্বীপ্ত নাট্যকর্মী হিসেবে আমিনুল হক আমীন এর পদার্পণ। এবং পরবর্তী সময়ে "মুক্তালয় নাট্যাঙ্গন" প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নিবেদিতভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। ১৯৮৬ সাল থেকে আমিনুল হক আমীন অভিনয় চর্চা শুরু করে "মুক্তালয় নাট্যাঙ্গন" এর প্রতিষ্ঠাতা দল প্রধান হয়ে। অদ্যাবধি নিয়মিত অভিনয়সহ লেখালেখি, নাটক, টেলিফিল্ম, শর্টফিল্ম, ওয়েব সিরিজি ও ওয়েব ফিল্ম নির্মাণে ব্রতি রয়েছেন। নাটক সমগ্র ১ম খন্ড নাট্য গ্রন্থের প্রচ্ছদ করেছেন সম্রাট শাহজাহান। মৃদুল প্রকাশন থেকে প্রকাশক এম সহিদুল ইসলাম এটি প্রকাশ করেছেন। গ্রন্থটির মূল্য ধরা হয়েছে ২৯০/= টাকা।
\হ-অবিনাশ পুরকায়েস্থ