মহাশ্বেতী দেবী বাংলা সাহিত্যের একজন স্বতন্ত্র ধারার লেখক। তিনি গণমানুষের কণ্ঠস্বর, তার সৃষ্ট গল্প, উপন্যাস জুড়ে স্বাতন্ত্রের এই ছাপ খুবই স্পষ্ট। তার উপন্যাস বিষয় হিসেবে, কাহিনী নির্মিতি হিসেবে এই স্বাতন্ত্র চিহ্নিত করে। আরো স্পষ্টভাবে বললে, তার লেখার বিষয়, ভাষাশৈলী, উপস্থাপন প্রচলিত রীতির বাইরে নতুন এক জগৎ বিনির্মাণ। ফলে তা পাঠককে ভাবাতে সাহায্য করে। তার জীবন, অর্জিত অভিজ্ঞতা, পর্যবেক্ষণ সর্বোপরি উপন্যাসে যে জীবনার্থ ফুুটিয়ে তোলেন তা এক কথায় তুলনারহিত। তার রচনায় ইতিহাস রয়েছে, ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর অনুরণন রয়েছে। এগুলো এ কারণে একদিকে যেমন সাহিত্য তেমনি অন্য দিকে হয়ে উঠেছে ইতিহাসের দলিল। তিনি ইতিহাসকে ব্যবহার করেছেন আখ্যানের পরিসরে। আবার সেই পরিসরে লিখতে চেয়েছেন ইতিহাস। একের পর এক রচনায় তিনি খনন চালিয়ে পুনরুদ্ধার করে নিয়ে আসতে চেয়েছেন ইতিহাসকে। বাংলা সাহিত্যের ভূগোলকে নিয়ে গেছেন বহু অনাবিষ্কৃত ভুখন্ডে, মিথ ও ফ্যান্টাসির যৌথ প্রয়োগে আখ্যানকৌশলে নিয়ে আসতে চেয়েছেন নানা অভিনবত্ব। উপন্যাসের ক্ষেত্রে ২০ শতকের প্রথম পঞ্চাশ বছরে তারাশংকর ও পরবর্তী ৫০ বছর মহাশ্বেতা দেবী বিষয়ের দিক থেকে সবচেয়ে বৈচিত্র্যপূর্ণ কাজ করেছেন বলে সমালোচকদের অভিমত।
ঘরে বসে কল্পনার আকরে কোনো কিছু রচনা করেননি মহাশ্বেতা। যা দেখেছেন, আহরণ করেছেন তার আলোকে গল্প, উপন্যাস লিখেছেন। তার গল্প, উপন্যাসের কাহিনী, পটভূমি, চরিত্র তার চেনা-জানা, দেখার ভুবন থেকে আহরিত। তবে তা ভিন্ন একটি দৃষ্টিকোণ তাকে অন্যদের কাছ থেকে পৃথক করেছে। বাংলা কথাসাহিত্যে তার ভিন্নধর্মী অবস্থান তাকে সমকাল, মহাকাল সমর্থন ও সম্মান দিয়ে অভিনন্দিত করেছে। তিনি ছুটে গেছেন সেই সব মানুষের কাছে যাদের জীবন সামাজিক কষাঘাতে জর্জরিত, অধিকার ও মর্যাদাহীনতার অন্ধকারে নিপতিত। তিনি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, মধ্যপ্রদেশ ছত্রিশগড় রাজ্যের আদিবাসীদের জীবন দেখতে ছুটে গেছেন তাদের মাঝে। দেখেছেন, আহরণ করেছেন লেখার উপাদান। প্রত্যক্ষ করেছেন নির্মম বাস্তবতা। মহাশ্বেতা দেবীর জীবন ও লেখক সত্তায় তার লালিত রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি, প্রতিবাদী মনন, প্রগতিশীলতা, সাধারণ মানুষের প্রতি অপরিসীম ভালোবাসা, সামাজিক দায়বোধ কার্যকর ভূমিকা পালন করেছে। তার সাহিত্য মানস সময়ের জাড়িত পরিবেশ ও পরিস্থিতির দ্বারা অনেকটা প্রভাবিত। তিনি অনেকের মতো তা উপেক্ষা করতে পারতেন। ঘরে বসে লিখতে পারতেন অনবদ্য অনেক কিছু। কিন্তু সামাজিক দায়, মানুষের বেঁচে থাকার তীব্র লড়াই, অসাম্য, অনাচার, রাষ্ট্রীয় বিমুখতা তাকে স্বতন্ত্র ধারায় লিখতে প্রচন্ডভাবে তাড়িত করেছে। এ তাড়া তার অন্তর্গত বোধ, মানবিক দৃষ্টিকে করেছে প্রসারিত। প্রচলিত সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় বিভেদ, বৈষম্যের বিরুদ্ধে তিনি লেখনিকে মানবিক হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণ করেছেন। নিজস্ব জীবনবোধ ও লেখক সত্তা এক অভিন্ন আলোকে প্রজ্বালিত শিখায় জ্বলে উঠেছে। তাই তার লেখা যেমন হয়েছে মানবিক উপাখ্যান, তেমনি সময় ও কালের ইতিহাস। সমাজ বাস্তবতা ও পর্যবেক্ষণের অনবদ্য চিত্র। তার লেখার এই দিকটি এই ইতিহাস চেতনার ধারাটি বাংলা সাহিত্য অঙ্গনকে সমৃদ্ধ করেছে নিঃসন্দেহে।
২.
\হমহাশ্বেতা দেবীর জন্ম ১৪ জানুয়ারি, ১৯২৬ ঢাকা শহরে। তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ৫ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। নজরুল তখন ২৬ বছরের টগবগে যুবক। তার বিদ্রোহী কাব্য গ্রন্থ বের হয়ে গেছে। রবীন্দ্রনাথ তখন তার জীবনের শেষ লগ্নে। মহাশ্বেতার বাবা মণীশ ঘটক ছিলেন কলেস্নাল সাহিত্য আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত খ্যাতনামা কবি ও ঔপন্যাসিক। তিনি 'যুবনাশ্ব' ছদ্মনামে লিখতেন। মণীষ ঘটকের ভাই বিশিষ্ট চলচ্চিত্র পরিচালক ঋত্বিক ঘটক। মহাশ্বেতা দেবীর মা ধরিত্রী দেবীও ছিলেন লেখক ও সমাজকর্মী। তার ভাইয়েরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে খ্যাতিমান ছিলেন। যেমন শঙ্খ চৌধুরী ছিলেন বিশিষ্ট ভাস্কর এবং শচীন চৌধুরী ছিলেন দি ইকোনমিক অ্যান্ড পলিটিক্যাল উইকলি অব ইন্ডিয়া পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা-সম্পাদক। তার স্বামী নাট্য ব্যক্তিত্ব বিজন ভট্টাচার্য ও ছেলে নবারুণ ভট্টাচার্য। নবারুণ ভট্টাচার্যও ঘনিষ্ঠভাবে লেখালেখি করতেন। এমনি এক সাংস্কৃতিক পরিবার তার। তবে লেখাকে বেছে নিয়েছিলেন জীবনের চরম ব্রত হিসেবে। এ জন্য শেষ পর্যন্ত সবার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সাহিত্যের প্রতি একাগ্রতার প্রয়োজনে বেছে নিয়েছিলেন নিভৃত জীবন। তিনি শুধু লেখক হওয়ার জন্য লিখেননি। লিখেছেন সামাজিক দায়, মানুষের মুক্তি ও মানবিকতার প্রতি প্রগাঢ় বোধ ও অপরিসীম মমত্ববোধের তাগিদে। তার পরিচয় অনেক। লেখক, কূটনীতিবিদ, আদিবাসী ও মানবাধিকার আন্দোলনকর্মী।
মহাশ্বেতা দেবীর বিদ্যালয়ের শিক্ষা শুরু হয়েছিল ঢাকা শহরেই। ভারত বিভাজনের পর তিনি ভারতের পশ্চিমবঙ্গে চলে যান। এরপর তিনি শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠভবনে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে স্নাতক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্য বিভাগে স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। কথাসাহিত্যিক ও মানবাধিকার আন্দোলনকর্মী হিসেবে তিনি পরিচিত। এক সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। তার ছোঁয়া লেগেছে তার সাহিত্য জীবনে। তিনি পিতা ও কাকাবাবুকে বলতে গেলে ছাড়িয়ে গেছেন নিজ যোগ্যতা বলে।
১৯৬৪ সালে মহাশ্বেতা দেবী বিজয়গড় কলেজে (কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক অনুমোদিত কলেজ) শিক্ষকতা শুরু করেন। সেই সময় বিজয়গড় কলেজ ছিল শ্রমিক শ্রেণির ছাত্রীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এ সময় মহাশ্বেতা দেবী একজন সাংবাদিক ও একজন সৃজনশীল লেখক হিসেবেও কাজ চালিয়ে যান। তিনি পশ্চিমবঙ্গের লোধা ও শবর উপজাতি, নারী ও দলিতদের নিয়ে পড়াশোনা করেন। তার প্রসারিত কথাসাহিত্যে তিনি প্রায়শই ক্ষমতাশালী জমিদার, মহাজন ও দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারি আধিকারিকদের হাতে উপজাতি ও অস্পৃশ্য সমাজের অকথ্য নির্যাতনের চিত্র অঙ্কন করেছেন।
মহাশ্বেতা দেবী বহুবার ভারতের উপজাতি মানুষের ওপর অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন। ২০১৬ সালের জুন মাসে মহাশ্বেতা দেবীর আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ঝাড়খন্ড সরকার বিশিষ্ট আদিবাসী নেতা বিরসা মুন্ডার একটি মূর্তিকে শৃঙ্খলামুক্ত করে। তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের শাসনকালে গৃহীত শৃঙ্খলিত বিরসা মুন্ডার একটি আলোকচিত্রের ভিত্তিতে মূর্তিটি নির্মিত হয়েছিল। উলেস্নখ্য, বিরসা মুন্ডার জীবন কাহিনী অবলম্বনে ১৯৭৭ সালে মহাশ্বেতা দেবী অরণ্যের অধিকার উপন্যাসটি রচনা করেছিলেন।
৩.
মহাশ্বেতা দেবীর সর্বাধিক আলোচিত, সমাদৃত উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে 'হাজার চুরাশির মা' ও 'অরণ্যের অধিকার'। তবে আদিবাসী মানুষের জীবনকেন্দ্রিক উপন্যাস 'কবি বন্দ্যঘটি গায়ির জীবন ও মৃতু্য' নানা কারণে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠী নিয়ে তার যে লেখালেখি, নিরন্তর সংগ্রাম এ উপন্যাসের মধ্য দিয়ে তার শুরু। তবে ভাষাগত পরীক্ষা-নিরীক্ষা, বিষয়গত বিস্তৃতির জন্য' আঁধার মানিক, অমৃতসঞ্চয়, বিবেক বিদায় পালা, চোট্টিমুন্ডা এবং তার তীর, অগ্নিগর্ভা তার উলেস্নখযোগ্য সৃষ্টি। বলা হয়ে থাকে 'হাজার চুরাশির মা' মহাশ্বেতা দেবীর এক অনন্য সৃষ্টি। এ উপন্যাসটিকে লেখক মহাশ্বেতা দেবীর বাঁক পরিবর্তনের সূচনা পর্ব বলে অনেকে মনে করেন। সমাজ পরিবর্তনের স্বপ্নে বিভোর ব্রতী ও তার বন্ধুদের আত্মোৎসর্গের এক মর্মস্পর্শী কাহিনী। সত্তর দশকে পশ্চিমবঙ্গের নকশাল আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে এ উপন্যাসটি রচিত। সন্তানহারা মা সুজাতার অন্তর্দহনের এক অতলস্পর্শী আলেখ্য। এখানে তিনি প্রচলিত রাজনীতির অন্ধকার দিকসমূহ উন্মোচনের প্রয়াস চালিয়েছেন। হাজার চুরাশির মা উপন্যাসে মহাশ্বেতা দেবী এক অস্থির রাজনৈতিক, সামাজিক পরিস্থিতি ও ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের কাহিনী তুলে ধরেছেন অসাধারণ দক্ষতা ও সহমর্মিতায়। 'অরণ্যের অধিকার' তার আরেকটি অনবদ্য সৃষ্টি। অধিকারহীন আদিবাসী মুন্ডা জনগোষ্ঠীর জীবন সংগ্রামের আলেখ্য এ উপন্যাস। জীবনের বেশিরভাগ সময় তিনি আদিবাসীদের মাঝে কাটিয়েছেন। তাদের নিয়ে লিখেছেন। বাংলা সাহিত্যে তিনি আদিবাসীদের নিয়ে সবচেয়ে বেশি গল্প, উপন্যাস রচনা করেন। তিতুমীর উপন্যাস তার আরেকটি অনবদ্য রচনা। তিতুমীরের সংগ্রামী জীবন ও মানুষের প্রতি সাধারণ ও অন্তজশ্রেণির মানুষের প্রতি তিতুর যে মমত্ববোধ তা দেখে মহাশ্বেতা আপস্নুত হয়েছেন। আর তারই ফল এই বই। খুব চমৎকার ভাষায় তিতুর মুসলিম জীবনের চিত্র অঙ্কন করেছেন- যা ভাবলে অবাক হতে হয়।
শতাধিক উপন্যাসের পাশাপাশি গল্পগ্রন্থ' রয়েছে তার বিশটির মতো। তার গল্পসমূহে আদিবাসী সম্প্রদায়ের নিগৃহীত জীবন, শাসকগোষ্ঠীর অব্যাহত নির্যাতন, বেঁচে থাকার নিরন্তর সংগ্রাম তুলে ধরেছেন। তার উলেস্নখযোগ্য গল্পগ্রন্থ'সমূহ হলো: শালগিরার ডাকে, হরিরাম মাহাতা, ইটের ওপর ইট, সিধুকানুর ডাক প্রভৃতি। তার শিশুতোষ গল্পের সংখ্যাও উলেস্নখযোগ্য।
৪.
মহাশ্বেতা দেবী ১০০টিরও বেশি উপন্যাস লিখেছেন। আর ২০টিরও বেশি ছোটগল্প সংকলন রয়েছে- যেগুলোতে শতাধিক গল্প স্থান পেয়েছে। তার রচনার মধ্যে অনেকগুলো ইংরেজি, জাপানি, ইতালিয়ান ও ফরাসি এবং ভারতের অন্যান্য ভাষায় অনূদিত হয়েছে। উলেস্নখযোগ্য রচনাবলি হাজার চুরাশির মা, অরণ্যের অধিকার, তিতুমীর। তার প্রথম উপন্যাস ঝাঁসির রানী লক্ষ্ণীবাইয়ের জীবনী অবলম্বনে রচিত। এটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৫৬ সালে। এই উপন্যাসটি রচনার আগে তিনি ঝাঁসি অঞ্চলে গিয়ে তার রচনার উপাদান হিসেবে স্থানীয় অধিবাসীদের কাছ থেকে তথ্য ও লোকগীতি সংগ্রহ করে এনেছিলেন। তার অনুপ্রেরণার উৎস সম্পর্কে তিনি লিখেছেন: 'আমি সর্বদাই বিশ্বাস করি যে, সত্যিকারের ইতিহাস সাধারণ মানুষের দ্বারা রচিত হয়। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে সাধারণ মানুষ যে লোককথা, লোকগীতি, উপকথা ও কিংবদন্তিগুলো বিভিন্ন আকারে বহন করে চলেছে, তার পুনরাবির্ভাবের সঙ্গে আমি ক্রমাগত পরিচিত হয়ে এসেছি। ... আমার লেখার কারণ ও অনুপ্রেরণা হলো সেই মানুষগুলো যাদের পদদলিত করা হয় ও ব্যবহার করা হয়, অথচ যারা হার মানে না। আমার কাছে লেখার উপাদানের অফুরন্ত উৎসটি হলো এই আশ্চর্য মহৎ ব্যক্তিরা, এই অত্যাচারিত মানুষ। অন্য কোথাও আমি কাঁচামালের সন্ধান করতে যাব কেন, যখন আমি তাদের জানতে শুরু করেছি? মাঝে মাঝে মনে হয়, আমার লেখাগুলি আসলে তাদেরই হাতে লেখা।"
৫.
মহাশ্বেতা দেবী সাহিত্যে তার অবিস্মরণীয় অবদানের জন্য নানা সম্মান ও পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। পেয়েছেন সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার, জ্ঞানপীঠ ও ম্যাগসাইসাইসহ একাধিক দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার। ম্যগসাইসাই পুরস্কার এশিয়ান নোবেল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ভারত সরকার পদ্মশ্রী ও পদ্মবিভূষণে ভূষিত করেন তাকে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার ভূষিত করেন সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান 'বঙ্গবিভূষণে'। মহাশ্বেতা দেবীর সৃষ্ট সাহিত্য সমাজ বাস্তবতা, মানব মুক্তির তীব্র আকাঙ্ক্ষার দলিল। জীবন সংগ্রাম ও মানবিক দহন ও গণমানুষের জীবনের অনবদ্য চিত্র। কালো অক্ষরে লেখা কালের উপাখ্যান। মানবিক কাব্য।
উত্তর-ঔপনিবেশিক গবেষক গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক মহাশ্বেতা দেবীর ছোটগল্পগুলো ইংরেজিতে অনুবাদ করে তিনটি গ্রন্থে প্রকাশ করেছেন। এগুলো হলো ইম্যাজিনারি ম্যাপস (১৯৯৫, রুটলেজ), ওল্ড ওম্যান (১৯৯৭, সিগাল) ও দ্য ব্রেস্ট স্টোরিজ (১৯৯৭, সিগাল)। ২০০৬ সালে ফ্রাঙ্কফুট বইমেলায় ভারত দ্বিতীয়বারের জন্য অতিথি দেশ নির্বাচিত হয়। এই মেলার উদ্বোধনী ভাষণ দেন মহাশ্বেতা দেবী। ২০০৭: সার্ক সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন তিনি এবং ২০০৯ এ ম্যান বুকার আন্তর্জাতিক পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন পান।
২০১৬ সালের ২৩ জুলাই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মহাশ্বেতা দেবী কলকাতার বেল ভিউ ক্লিনিকে ভর্তি হন। সেই বছরই ২৮ জুলাই একাধিক অঙ্গ বিকল হয়ে তার মৃতু্য ঘটে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার মৃতু্যতে টুইট করে জানান, 'ভারত এক মহান লেখিকা হারাল। বাংলা এক গরীয়সী মাকে হারাল। আমি এক ব্যক্তিগত পথপ্রদর্শককে হারালাম। মহাশ্বেতাদি শান্তিতে থাকুন।' ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি টুইট করে জানান, "মহাশ্বেতা দেবী কলমের শক্তিতে আশ্চর্যজনকভাবে চিত্রিত করেছিলেন। তিনি ছিলেন সহানুভূতি, সাম্য ও ন্যায়বিচারের এক কণ্ঠস্বর। তিনি আমাদের গভীর দুঃখে কাতর করে চলে গেলেন।
সময়ের আধার হয়ে থাকে ইতিহাস ও সাহিত্য। মহাশ্বেতা দেবী বাংলা সাহিত্যে ইতিহাস চেতনা সম্বলিত উপন্যাস রচনা করে সময়ের আরাধ্য কাজটি সম্পন্ন করেছেন। মহাকালের বিচারে তিনি তাই স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।