ফৌজদারি মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। এই কারণে কোনো ব্যক্তির বিদেশযাত্রায় বাধা হতে পারে না বলে জানালেন কলকাতা হাইকোর্ট। বিচারাধীন মামলাকে কারণ দেখিয়ে কোনো নাগরিকের বিদেশ সফর আটকানো যায় না বলেই বৃহস্পতিবার একটি মামলার শুনানিতে জানিয়েছেন বিচারপতি অমৃতা সিংহ।
সম্প্রতি কলকাতার এক তরুণী হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। তার অভিযোগ, তিনি প্রেমিকের কাছে আমেরিকায় যাবেন বলে ভিসার আবেদন করেছিলেন। কিন্তু আমেরিকার দূতাবাস থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, নিয়ম অনুযায়ী ভিসা পেতে একটি পুলিশি ছাড়পত্র বা পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট (পিসিসি) প্রয়োজন। যেটি ভারতীয় পাসপোর্ট অফিস থেকে দেওয়া হবে। এরপর পাসপোর্ট অফিসে তিনি যোগাযোগ করেন। কিন্তু ওই ছাড়পত্র তাকে দেওয়া যাবে না বলে জানিয়ে দেয় আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস। কারণ হিসেবে জানানো হয়, পুলিশ তাদের জানিয়েছে, ওই তরুণীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রয়েছে। সেটি বিচারাধীন। ফলে, পিসিসি দেওয়া যাবে না। এরপরেই তিনি শিয়ালদহ আদালতের দ্বারস্থ হন। তারা প্রথমে দিতে রাজি না হলেও পরে হাইকোর্টের নির্দেশে বিচারক (শিয়ালদহ আদালতের মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট) একটি নির্দেশনামায় জানিয়ে দেন, ওই তরুণীর বিদেশ যেতে কোনো বাধা নেই। কিন্তু তরুণীর অভিযোগ, এরপরেও পুলিশ বা পাসপোর্ট অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করে কোনো লাভ হয়নি। তারা বিচারকের নির্দেশনামা পেয়েও কোনো সদর্থক পদক্ষেপ করেওনি।
এর পর হাইকোর্টে যান ওই তরুণী। আদালতে তিনি দাবি করেন, তার প্রেমিক আমেরিকায় থাকেন। সেখানে তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় কাজ করেন। ২০২২ সালে তার সঙ্গে ফেসবুকে আলাপ হয় ওই তরুণীর। তার বাড়ি কলকাতার বেনিয়াপুকুর থানা এলাকায়। দু'জনে বিয়ে করবেন বলে স্থিরও করেন। দু'জনেই সেই চিন্তাভাবনা করে বাড়ির লোকেদের জানানোর সিদ্ধান্ত নেন। তাদের বিষয়টি জানানোও হয়।
তরুণীর পরিবার এই বিয়েতে সম্মতি দিলেও তার প্রেমিকের পরিবার আপত্তি জানায় বলে তরুণীর দাবি। প্রেমিকের বাড়ি থেকে জানানো হয় যে, ছেলের জন্য পাত্রী দেখা হয়ে গেছে। সেই পাত্রীকেই বিয়ে করবে ওই যুবক। কিন্তু পরিবারের পছন্দের পাত্রীকে বিয়ে করতে রাজি হননি তরুণীর প্রেমিক। তিনিও বাড়িতে স্পষ্ট জানিয়ে দেন, বিয়ে করলে তার প্রেমিকাকেই করবেন। আর এখান থেকেই গন্ডগোলের সূত্রপাত।
যুবকের জন্য যে পাত্রী দেখা হয়েছিল তার বাড়ি বিহারে। গত বছরের ১৭ জানুয়ারি ওই পাত্রী বিহার থেকে এসে যুবকের প্রেমিকা এবং তার পরিবারের বিরুদ্ধে চুরি ও মারধরের মামলা করেন বেনিয়াপুকুর থানায়। মামলাটি শিয়ালদহ কোর্টে ওঠে। গত বছরের অক্টোবরে তরুণী এবং তার পরিবারকে বিনা শর্তে জামিন দেন আদালত। এরপরই আমেরিকার ভিসার জন্য আবেদন করেন তিনি। ভিসার জন্য গত ২৭ মার্চ মুম্বাই যান তিনি। কিন্তু তাকে জানিয়ে দেওয়া হয়, নিয়ম অনুযায়ী পাসপোর্ট অফিসের পিসিসি না থাকলে ভিসা দেওয়া অসম্ভব।
এরপরই বেনিয়াপুকুর থানায় যান তরুণী। পিসিসি দেওয়ার জন্য আবেদন জানান। কিন্তু থানা থেকে জানানো হয়, ফৌজদারি মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে, তাই পিসিসি দেওয়া যাবে না। এ বার বিষয়টি নিয়ে শিয়ালদহ আদালতের দ্বারস্থ হন তরুণী। নিম্ন আদালতও পুলিশের পক্ষে থাকে। শিয়ালদহ আদালতকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে মামলা করেন তরুণী। হাইকোর্ট তখন শিয়ালদহ আদালতকে বিষয়টি বিবেচনা করতে বলে। পিসিসি দেওয়ার জন্য বেনিয়াপুকুর থানাকে নির্দেশ দেন শিয়ালদহ আদালত। নির্দেশের সেই প্রতিলিপি নিয়ে থানায় যান তরুণী। কিন্তু অভিযোগ, থানা থেকে জানানো হয়, কোথাও পিসিসি দেওয়ার কথা স্পষ্ট করে লেখা নেই। ঠিক মতো নির্দেশের কপি নিয়ে আসতে বলা হয় ওই তরুণীকে। তিনি আবার হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। বৃহস্পতিবার মামলাটি হাইকোর্টে উঠলে বিচারপতি অমৃতা সিংহ নির্দেশ দেন, পিসিসি দিতে হবে পুলিশকে। চার সপ্তাহের মধ্যে পাসপোর্ট অফিসকেও এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
ওই তরুণীর আইনজীবী শারওয়ার জাহান, বিনয় সাউদের দাবি, তাদের মক্কেলের বিদেশযাত্রায় হাইকোর্ট সদর্থক পদক্ষেপ নিয়েছে।