মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ৯ বৈশাখ ১৪৩২
জিয়া চ্যারিটেবল মামলা

খালেদা জিয়ার খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানি ২ মার্চ

যাযাদি রিপোর্ট
  ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
খালেদা জিয়ার খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানি ২ মার্চ

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দন্ড থেকে খালাস দিয়ে হাই কোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে, দুদকের আবেদনের আপিল শুনানি হবে আগামী ২ মার্চ। বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বিভাগ রোববার এ আদেশ দেয়।

আদালতে দুদকের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট আসিফ হোসাইন; রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক; খালেদা জিয়ার পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস কাজল, মাকসুদ উলস্নাহ ও কায়সার কামাল।

অ্যাডভোকেট মাকসুদ উলস্নাহ বলেন, 'দুদক পৃথক একটি আবেদন করেছে। তাদের আইনজীবী আদালতকে তাদের আবেদনসহ একসঙ্গে শুনানি করার আবেদন জানিয়েছেন। আদালত তা মঞ্জুর করে আগামী ২ মার্চ শুনানির দিন রেখেছে।'

আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ছয় বছর আগে জজ আদালত এ মামলার রায়ে খালেদা জিয়াকে সাত বছরের কারাদন্ড এবং ১০ লাখ টাকা অর্থদন্ড দিয়েছিল। ওই রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার

আপিল মঞ্জুর করে গত ২৭ নভেম্বর বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের হাই কোর্ট বেঞ্চ খালেদা জিয়াকে খালাস দেয়। পরে এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে যায়। দুদকও পৃথক একটি আবেদন করে।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রম্নয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে। ওই বছরের অক্টোবরে হাই কোর্টে আপিল শুনানি শেষে সাজা বেড়ে হয় ১০ বছর।

আর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর সাত বছরের সাজা হয় খালেদা জিয়ার। পরের বছর ৩০ এপ্রিল খালেদা জিয়ার করা আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে হাই কোর্ট। কিন্তু তখন আর শুনানি হয়নি।

দুই মামলায় দন্ডিত সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী ২০২০ সাল থেকে সরকারের নির্বাহী আদেশে সাময়িক মুক্তি পান। এর পর থেকে ছয় মাস পরপর সেই সাময়িক মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছিল।

গণঅভু্যত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরদিন ৬ অগাস্ট রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে খালেদা জিয়ার দন্ড মওকুফ করেন।

সে সময় বঙ্গভবনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতেও বলা হয়, তিন বাহিনী প্রধান, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের বৈঠকের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, 'সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দন্ড মওকুফপূর্বক মুক্তির বিষয়ে আইন ও বিচার বিভাগ, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মতামতের আলোকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে মহামান্য রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট হাই কোর্ট বিভাগের ক্রিমিনাল আপিল নং-১৬৭৬/১৮ (বিশেষ আদালত নং-৫, ঢাকা এর বিশেষ মামলা নং ১৭/২০১৭ থেকে উদ্ভূত) এবং বিশেষ আদালত নং-৫, ঢাকা এর বিশেষ মামলা নং-১৮/২০১৭ এ প্রদত্ত দন্ডাদেশ মওকুফপূর্বক নির্দেশক্রমে মুক্তি প্রদান করা হল।'

সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, কোনো আদালত, ট্রাইবু্যনাল বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের দেওয়া যে কোনো দন্ডের 'মার্জনা, বিলম্বন ও বিরাম' মঞ্জুর করার এবং যে কোনো দন্ড 'মওকুফ, স্থগিত বা হ্রাস' করার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির থাকবে।

কিন্তু আইন অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি কারো দন্ড (সেনটেন্স) বাতিল করলেও তিনি যে আদালতে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন (কনভিকশন), সেই রায় বাতিল হয় না। আর আদালত দোষী সাব্যস্ত করলে মুক্তির পর পাঁচ বছর পার না হলে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ নেই।

সে কারণে রাষ্ট্রপতি দন্ড মওকুফ করার পরও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালাস চেয়ে নভেম্বরের শুরুতে হাই কোর্টে আপিল শুনানির উদ্যোগ নেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা।

অ্যাডভোকেট কায়সার কামাল সে সময় বলেছিলেন, 'রাষ্ট্রপতি দন্ড মওকুফ করলেও খালেদা জিয়া চান আদালতের মাধ্যমে তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে আসবেন। তাই আমরা চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা দ্রম্নত শুনানির জন্য হাই কোর্টে আবেদন করেছি।'

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলাতেও খালেদা জিয়ার ১০ বছরের সাজা স্থগিত করে আপিলের অনুমতি দিয়েছে আপিল বিভাগ। আপিল শুনানি না হওয়া পর্যন্ত তার সাজা স্থগিত থাকবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে