রাজধানীর খিলগাঁওয়ে শুক্রবার রাতে একটি স'মিল থেকে ছড়িয়ে পড়া আগুনে পাশের গ্যারেজপট্টি ভস্মীভূত হয়েছে। আগুনে পুড়ে গেছে ২০টি দোকান, ২৪টি গাড়ি ও দু'টি স'মিল। ভয়াবহ এ আগুনে সর্বস্বান্ত হয়ে গেছেন ব্যবসায়ীরা।
তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গ্যারেজপট্টিতে ২০টির মতো দোকান ছিল। অনেক দোকানে গাড়ি রিপেয়ারিং করা হতো। কিছু দোকানে রিপেয়ারিংয়ে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশ বিক্রি হতো। কিন্তু গতকালের আগুনে সব দোকান পুড়ে গেছে। গ্যারেজপট্টিতে পোড়া ধ্বংসস্তূপ ছাড়া আর কিছু নেই। ব্যবসায়ীদের লাখ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া, গ্যারেজে রিপেয়ারিংয়ের জন্য আসা প্রায় ২৪টি গাড়ি পুড়ে গেছে। পুড়ে যাওয়া এসব গাড়ি আর কোনোভাবে ঠিক করা যাবে না। এগুলো ছাইয়ে রূপ নিয়েছে।
শনিবার সকালে খিলগাঁওয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, গ্যারেজপট্টি এখন ধ্বংসস্তূপ। সবকিছু হারিয়ে ব্যবসায়ীরা আহাজারি করছেন। চারদিকে পড়ে রয়েছে আগুনে পুড়ে যাওয়া জিনিসপত্র।
সারিবদ্ধভাবে পুড়ে ছাই হয়ে রয়েছে প্রাইভেটকার ও মোটর সাইকেল। প্রতিটি দোকান ও আসবাবপত্র এবং গাড়ির বিভিন্ন পার্টস পুড়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
সাজানো গোছানো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের এই অবস্থা দেখে নিজের চোখকে বিশ্বাস করাতে পারছেন না দোকান মালিকরা। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় যে, তারা কখনো চিন্তাও করতে পারেননি তাদের এই অবস্থা হবে আগুনে।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতকাল এই গ্যারেজপট্টি বন্ধ ছিল। এখানে কোনো দোকান মালিক বা কর্মচারী ছিল না। ফলে আগুন কখন লেগেছে কেউ বলতে পারেন না। খবর পেয়ে মালিক কর্মচারীরা ঘটনাস্থলে এসে দেখেন সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
গ্যারেজপট্টির ব্যবসায়ী মুন্না মিয়া বলেন, গতকাল গ্যারেজ মালিক সমিতির একটি পিকনিক ছিল। ঢাকাসহ বাংলাদেশের অধিকাংশ গ্যারেজ সেই পিকনিকের কারণে বন্ধ ছিল। এছাড়া, শুক্রবার ও একুশে ফেব্রম্নয়ারির কারণে কর্মচারীরা ছুটিতে ছিলেন। মাত্র দু'জন দারোয়ান ছিল গ্যারেজে। আমরা আগুনের খবর পেয়ে এসে দেখি সবকিছু পুড়ে গেছে। আগুনে প্রায় ১৭টি প্রাইভেটকার এবং সাতটি মোটর সাইকেল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
গ্যারেজেপট্টির আরেক দোকান মালিক বলেন, 'আমার দোকানে ছয়টি প্রাইভেটকার ছিল রিপেয়ারিং করার জন্য। এর মধ্যে অধিকাংশ গাড়ি রিপেয়ারিংয়ের কাজ শেষ ছিল। আজকে বেশ কয়েকটি গাড়ি ডেলিভারি দেওয়ার কথাও ছিল। কিন্তু গতকালের আগুনে সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। গাড়ির ভেতরে যেসব কাগজপত্র ছিল সেগুলো সব পুড়ে গেছে। এছাড়া, আমার দোকানে যত মালামাল ছিল সব পুড়ে ছাই। বর্তমানে পরিস্থিতি কীভাবে আমরা সামাল দেব বুঝতে পারছি না। এখানে যাদের দোকান ছিল সবার পরিস্থিতি একই।'
এদিকে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, স'মিল থেকে আগুন গাড়ির গ্যারেজে ছড়িয়ে পড়ে। পরে গ্যারেজে থাকা বিভিন্ন গাড়িতে আগুন লেগে সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়। তখন আশপাশের মানুষ ছোটাছুটি করতে থাকে। প্রথমে গ্যারেজের এক কোণে আগুন লাগে। পরে একটি বিস্ফোরণ থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।
আরও জানা যায়, গাড়ি মেরামতের কাজে যেসব শতাংশ ব্যবহার করা হয় এগুলা খুবই দাহ্য পদার্থ। ?এছাড়া, বিভিন্ন ধরনের গ্যাস সিলিন্ডার থাকে। এই কারণে আগুন দ্রম্নত ছড়িয়ে পড়ে।
এদিকে আগুনের সঠিক কারণ জানতে ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি তদন্তে নেমেছে পুলিশও। পুলিশ জানিয়েছে, ইতোমধ্যে এই ঘটনায় তারা একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে। তবে কি কারণে আগুনের সূত্রপাত ও এর পেছনে অন্য কোনো কারণ রয়েছে কি না তা জানতে পুলিশ তদন্ত করছে।
এ বিষয়ে ডিএমপির খিলগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দাউদ হোসেন বলেন, 'যেহেতু আগুনে কেউ হতাহত হয়নি সেহেতু আপাতত কোনো মামলা দায়ের হয়নি। তবে এই ঘটনায় একটি জিডি হয়েছে। আগুনের কারণ জানতে ও এখানে বিভিন্ন বিষয়কে সামনে রেখে আমরা তদন্ত করে চলছি।'
অন্যদিকে, ফায়ার সার্ভিস বলছে, 'আগুনের সূত্রপাত কীসের থেকে সে বিষয়ে তদন্ত ছাড়া সঠিকভাবে বলা যাবে না। এটি নাশকতাও হতে পারে। আবার শট সার্কিট অথবা সিগারেটের আগুনের থেকেও এ অগ্নিকান্ড হতে পারে।'
আগুন নিয়ন্ত্রণের পর শুক্রবার রাতে ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লে. কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেছিলেন, খিলগাঁওয়ের আগুনে আনুমানিক ২০টি দোকান ও দু'টি স'মিল পুড়েছে। আগুনে হয়ত কেমিক্যাল ড্রাম বিস্ফোরিত হয়েছিল, যার ফলে আগুন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। আমাদের ১০টি ইউনিট কাজ করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
শুক্রবার রাতে খিলগাঁওয়ে তালতলা মার্কেটের পাশে একটি স'মিলে লাগা আগুন পাশের গ্যারেজপট্টিতে ছড়িয়ে পড়ার খবরে পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে। তাদের চেষ্টায় ৩ ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।