ময়মনসিংহে অ্যাটর্নি জেনারেল

দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুম বন্ধ হয়েছে

প্রকাশ | ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০

ময়মনসিংহ বু্যরো
সুপ্রিম কোর্টের অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদুজ্জামান বলেছেন, ছত্রিশ জুলাইয়ের পর পুলিশ বাদী হয়ে কোনো মামলা করেনি। এর আগে ৬০ লাখ মানুষকে মামলায় আসামি করা হয়েছে। এসব মামলার বাদী ছিল পুলিশ। সাড়ে চার হাজার মানুষ বিনা বিচারে হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছে। বিগত পনের বছরে চৌধুরী আলম, ইলিয়াস আলীসহ অনেকেই গুম হয়েছে। কিন্তু ছত্রিশ জুলাইয়ে পর গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড বন্ধ হয়েছে। তবে এখনো আমরা মিথ্যা মামলা বন্ধ করতে পারিনি। বৃহস্পতিবার দুপুরে ময়মনসিংহ নগরীর একটি হোটেলে দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মানবাধিকার ও পরিবেশের ওপর গুরুত্বসহ আইন প্রয়োগ বিষয়ক এক কর্মশালায় তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, 'যারা ফ্যাসিস্ট, যারা মানুষ গুলি করে মেরেছে তাদের সাক্ষ্য সংগ্রহ করতে সময় লাগছে। জুলাই বিপস্নবের জুরিসপুডেন্ট একটু ভিন্নভাবে লিখুন। কারা বিগত পনের বছর ফ্যাসিজমের পক্ষ নিয়েছেন। কারা এখন পর্যন্ত প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সমর্থন যুগিয়ে যাচ্ছে, আমরা দেখছি। আমরা আপনাদের কাছে বিনয়ের সাথে অনুরোধ করব, আপনারা এই জায়গায় নতুন করে জুরিসপুডেন্স রচনা করুন। একজন আসামিকে আদালতে পাঠানোর আগে তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্টভাবে অভিযোগ উত্থাপন করুন। এফআইআরএ নাম না থাকতে পারে কিন্তু তাকে কী কারণে তাকে গ্রেপ্তার করলেন এবং সেটার পেছনে এস্যিাসটা কী। সে কীভাবে এই অপরাধে অংশগ্রহণ করেছে, সে অর্থের যোগান দিলে কাকে দিয়েছে, টেলিফোন করলে কাকে করেছে, এই বিষয়গুলো থাকলে ন্যায় বিচারের জন্য বিচার বিভাগের জন্য সহজ হবে।' তিনি বলেন, 'একদিকে যেমন মানবাধিকারের জান্ডা আমরা তুলতে ধরতে চাই। আরেকদিকে ফ্যাসিজমের বিচার করতে চাই। একটি তথ্য ইদানিং আসছে আসামি বিদেশে সুতরাং তার নাম চলে গেছে। অবশ্য আসামি বিদেশে থাকলে তার নাম থাকা উচিত না। কিন্তু জুরিপুডেন্স লেখার ক্ষেত্রে নতুন ঘটনা প্রবাহ আমাদের সামনে আসছে। সম্প্রতি দেখছেন দিলিস্নতে বসে কীভাবে অপরাধ উসকানি দেওয়া যায় সে অপরাধ রাখা হয়েছে। এখন উনাকে আসামি করলে যদি বলায় হয় আমি তো দিলিস্নতে ছিলাম। অবশ্যই দিলস্নীতে ছিলেন। ইউটিউব এখন অপরাধের সাক্ষ্য হিসাবে ব্যবহার হতে পারে।' তিনি উলেস্নখ করেন, ডিজিটাল ফরেনসিক করলেন এসব এফিডেন্স হিসাবে আসতে পারে। আকাশের যত তারা আইনের তত ধারা আছে। আপনারা জুরিসপুডেন্ট লেখার ক্ষেত্রে সমস্ত ঘটনাকে সামনে নিয়ে আসেন। বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার যে সংগ্রাম সে সংগ্রামের ফসল হিসাবে। আমরা এসেছি শহীদ আবু সাঈদ, মুগ্ধ, এদের রক্তের দায় থেকে বাংলাদেশের মানুষকে গণতন্ত্র উপহার দিতে। এই যাত্রায় যদি আমরা ভুল করি, তবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিপন্ন হবে। এ সময় অতিরিক্ত এটর্নী জেনারেল মোহাম্মদ আরশাদুল রউফ বলেন, 'অনেক নিরপরাধ মানুষকে বিনা বিচারে কারাগারে থাকতে হয়েছে। জামিন যোগ্য মামলাতেও জামিন দেওয়া হয়নি নানা উদ্দেশ্যে। কিন্তু এখন আর বিনা বিচারের কেউ যেন কারাগারে না থাকে। দোষী যেই হোক শাস্তি পেতে হবে কিন্তু বিনা দোষে কেউ যেন শাস্তি না পায়।' কর্মশালায় অতিরিক্ত সচিব খন্দকার মো. মাহাবুবুর রহমান বলেন, ইতোমধ্যে আমরা পুলিশের ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে এসেছি। জনমানুষের সন্তোষ্টির জন্য আমরা বিচার বিভাগ ও পুলিশ এক সঙ্গে কাজ করব। ন্যায় বিচার সুনিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য। এজন্য পুলিশ ও ফৌজদারী বিচার ব্যবস্থার ভূমিকা রয়েছে। অতীতে আমরা ভুল ত্রম্নটি কি করেছি তা চিহ্নিত করার চেষ্টা করব, উত্তরণের চেষ্টা করব। এ সময় পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেন, 'জুডিশিয়াল ম্যাজষ্ট্রেসি, পুলিশ কোনো অঙ্গ যদি প্রোপার কাজ না করে তাহলে তার প্রভার অন্যদের ওপর পড়ে। ৫ আগস্টের আগে কেউ বাধ্য হয়ে, কেউ অতি উৎসাহিত হয়ে নানা অপকর্ম করেছে। ৫ আগস্টের পর মামলার হিরিক পড়ে। তখন মামলায় অনেক আসামী দেওয়া হয়। তখন কিছু করার ছিলো না। বিপুল পরিমাণ আসামীর একেকটি মামলায় আমাদের বিচারিক কার্যক্রম প্রয়োগ করতে পারিনি। কিন্তু পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে নিরীহ কোনো লোককে গ্রেপ্তার না করতে সকল কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। পুলিশের পরিবর্তিত ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে বিচারিক কাজে সেই বিষয়টি মাথায় রেখে কাজ করার জন্য অনুরোধ বিচার বিভাগের প্রতি।' কর্মশালায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনির সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন ময়মনসিংহের বিভাগীয় কমিশনার মোকতার আহমেদ, রেঞ্জ ডিআইজি ড. আশরাফুর রহমান, ময়মনসিংহের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মমতাজ পারভীন প্রমুখ।